হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন করায় জাতীয় পার্টির (জাপা) ভেতরকার ‘রাজনীতি’ বা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, ৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে হেফাজতে ইসলাম ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় জাপায় এখন আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল অংশটির প্রভাব বেড়ে গেছে। এই অংশের নেতারা হেফাজতের ঢাকা অবরোধের দিন সহিংসতায় জাপার কিছু কর্মীর জড়িয়ে পড়া ও সংঘর্ষে দলের দুজন নেতার নিহত হওয়ার ঘটনার দায় চাপিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরই প্রেক্ষাপটে জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ গত বুধবার দলের তিন যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল হোসেন, গোলাম মোহাম্মদ ও আলমগীর সিকদার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না, তার কারণ দর্শাতে নোটিশ দিয়েছেন। তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।
এর মধ্যে ইকবাল হোসেনকে দেওয়া নোটিশে দলের ভেতরে বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা এবং বাকি তিনজনের নোটিশে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মিছিল করা, লাঠি হাতে সংঘর্ষে জড়ানো ও গাছ কাটার অভিযোগ আনা হয় বলে দলীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।
জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তাঁরা কেন গেলেন, নোটিশে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেবেন। ’
জাপার কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটিতে মহাজোট সরকারের পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি ধারা সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ মহাজোটের পক্ষের ধারা এবং কাজী জাফর আহমদ, কাজী ফিরোজ রশীদসহ আরও কয়েকজন বিপক্ষের ধারার নেতৃত্বে রয়েছেন।
দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ও নিজের স্বার্থে এরশাদ একেক সময় একেক পক্ষকে কাছে টানেন। এ কারণে তিনি সম্প্রতি তাঁর মুখপাত্র করেছেন কাজী ফিরোজ রশীদকে। এর দুই দিনের মাথায় জিয়াউদ্দিন আহমেদকে করেন রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
আগামী সংসদ নির্বাচনে জাপার অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে এই দুটি ধারার মধ্যে অনেক দিন ধরে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। ক্ষমতাসীন মহাজোট ছাড়ার জন্য এত দিন আওয়ামী লীগবিরোধী ধারার নেতারা বেশ সরব এবং ৫ মের আগ পর্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন।
এই অংশের প্রভাবেই দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদ হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে সমর্থন দেন এবং লংমার্চ ও অবরোধ কর্মসূচিতে আসা হেফাজতের কর্মীদের পানি পান করান। আর গত ৬ এপ্রিল হেফাজতের লংমার্চ শেষে ঢাকার মতিঝিলের মহাসমাবেশে সংহতি প্রকাশ করার বিরোধিতা করেন সরকার-সমর্থক ধারার নেতারা। কিন্তু তখন তাঁদের মত নীতিনির্ধারণে গুরুত্ব পায়নি। এখন হেফাজত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সরকার-সমর্থক ধারার নেতাদের চাপে অপর অংশের চার নেতাকে বহিষ্কার করার লক্ষ্যে নোটিশ জারি করেছেন এরশাদ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মহাজোটের শরিক হয়েও হেফাজতকে সমর্থন দেওয়া এবং তাতে অংশ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সহিংসতায় জড়ানো নিয়ে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকেও প্রশ্ন তোলা হয়। এর মধ্যে পল্টন এলাকায় জাপার নেতা-কর্মীদের লাঠি হাতে মিছিল করা, সংঘর্ষে জড়ানোর ছবি ও ভিডিওচিত্র সরকারের হাতে রয়েছে। এতে এরশাদ নিজেও চাপে আছেন। অবশ্য তিনি সরকারসহ ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রভাবশালী দেশি-বিদেশি মহলকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক আলেম-ওলামাদের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। এটা যাতে পুরোপুরি বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাই এতে ভাগ বসাতে তিনি হেফাজতকে সমর্থন দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচিতে রাজধানীর পল্টন ও আশপাশের এলাকায় সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে জাপার দুজন নেতাও রয়েছেন। তাঁরা হলেন জাতীয় শ্রমিক পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা কাজী রকিব হোসেন ও জাতীয় যুব সংহতির গেন্ডারিয়া থানার সভাপতি আলমগীর হোসেন। কীভাবে এই দুজনের মৃত্যু হলো, তা গত মঙ্গলবার জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সভায় জানতে চান এরশাদ। তখন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সহিংসতায় জড়িয়ে ওই দুজন নিহত হয়েছেন। আর কাজী জাফর বলেন, পুলিশের নির্বিচার গুলিতে তাঁরা মারা গেছেন।
এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাদানুবাদও হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।