সত্য পথের অনুসন্ধানি
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া -করিতে পারিনি চিৎকার-বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার। কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত-কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত-কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য -নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ।
ডেট লাইন ২৭ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯। একটি ব্লগের একটা পোস্ট।
শিরোণাম- http://www.cadetcollegeblog.com/muhammad/4962 পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ ও নিখোঁজদের তালিকা (আপডেট।
কিছুক্ষণ পরপর নিখোঁজ শব্দ কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে নিহত বা শহীদ শব্দটি। ব্লগার চোখ মুছেন আর এডিট করেন। স্বদেশের বুক থেকে এক একটা স্বপ্ন এক একটা তাজা প্রাণ জ্বরে যাচ্ছে। এক একটা মেহেদী রাঙা হাত বিবর্ণ হচ্ছে।
এক একটা নাম তৈরী হচ্ছে শেষ গোসলের। এক এক জন মেজর এক একজন এ্যডজুডেন্ট, এক একজন ক্যাপটেন, কর্নেল ,একজন জলপাই রঙের পিতা,স্বামী এক একজন চৌকশ অফিসার, এক একজন সুহৃদ। এরা প্রশিক্ষিত, এরা তরতজা, এর শপথ করে নিয়েছে দেশ সেবার, শপথ করে নিয়েছে দেশ যাবার আগে তাদের দেহ যাবে। এরা চুক্তি বদ্ধ। এর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
না এরা এখন ভেসে আছে সুয়ারেজে। এরা এখন ডিফর্ম দেহে। তবুও তাদের নেম প্লেট চক চক করছে । নাম দেখা যাচ্ছে ,মেজর মাহবুব,ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দার, মেজর হুমায়ুন হায়দার, . মেজর মোহাম্মদ সালেহ, আরো পঞ্চাশেক নাম। না ওরা যুদ্ধে নিহত হয়নি।
না ওরা পরদেশীর হাতে নিহত হয়নি। ওরা স্বজাতির হাতে খুন হয়েছেন। খুন হয়েছে তাদের পরিবার। থমকে দিয়েছিল স্বদেশের স্বপ্ন।
ছবিটি ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দার – সিসিসি (৯২-৯৮) এর বিয়ের ছবি, বিয়ের তিন মাসও হয়নি তার।
যে দরবার হলে তার বিয়ে সেই দরবার হলেই তাকে মেহেদী রঙে নয় , রক্তের রঙে বিদায়দিতে হয়েছে শেষ নিশ্বাস।
কেমন আছে সে সব স্বজন হারা মানুষ গুলো। কেমন আছে সে সব মেহেদী বিবর্ণ হাত?
দেখে আসুন না শহীদ মেজর তানভীর হায়দার নুর রুমি'র স্ত্রীর একটা লিখায় । চোখ কি ঝপাসা হয়ে আসে আপনার? তার প্রোফাইলে লিখা দেখুন আমার অরজিনালি জন্ম ; ২১/১২/১৯৮৪ মৃত্যূ ; ২৫/০২/২০০৯, শুধুমাত্র দুই পুত্রসন্তানের জন্য মনেরজোড়ে চলছে । তার লিখা একটা বিজ্ঞাপনটা পড়ে দেখতে পারেন।
"বিজ্ঞাপণ! বিজ্ঞাপণ! বিজ্ঞাপণ!
http://www.cadetcollegeblog.com/tm-rumee/19470
আচ্ছা বড় ভাই ও বোনেরা, ছোট ভাই ও বোনেরা কেউ কি আমার জন্য একটা উপযুক্ত পাত্র খুজে দিবেন? যার হাইট হবে পাচ ফিট এগারো। মাথার চুলগুলা হবে সিল্কি। গায়ের রং শ্যামলা। তাকে অবশ্যই অবশ্যই কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের ১২তম ব্যাচ হতে হবে। তাকে ভাল এ্যাথলেট হতে হবে।
বাংলাদেশ আর্মিতে যার চাকরীর বয়স ১০ বছর হবে। আমিসহ আমার ছেলেদের সমস্ত অন্যায় আবদার যে রাখবে। তাকে অনেক মনখোলা হতে হবে। আমি যখন তখন রাগারাগি করবো আর আমাকে সবসময় বুঝতে হবে। আমার সাথে হিন্দী টিভি সিরিয়াল দেখতে হবে।
আমি ঘুমিয়ে গেলেও দেখে মনে রাখতে হবে। আমি জানতে চাইলে পুরোটা বলতে হবে। আমার ইচ্ছা হলে অবশ্য সে গেমস চ্যানেল দেখতে পারবে। বাসায় অন্য টিভি থাকলেও ইচ্ছা মত টিভি দেখা যাবে না। আমাকে অলওয়েজ বুঝাতে হবে।
আমার মা বাবা থেকে শুরু করে সবার আদর যেন আমি তার মধ্যেই খুজে পাই। ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে গেলে আমি গায়ে ব্যথা না পেলেও সে আমার ব্যথাটা পাবে। বুটজুতা পড়ে প্রতিদিন বেডরুম পর্যন্ত এসে বকা শুনতে হবে।
বিচারের সর্বশেষ অবস্থা জানতে দেখুন। যাস্টিস ডিনাইড, যাস্টিস ডিলেইড।
তাই বিচার যেন আর বিলম্বিত না হয় সে প্রত্যশা রইল।
Click This Link গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি যে দরবার হলে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল, এক বছর পর সেই দরবার হলেই গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বসেন বিশেষ আদালত-৫
মিডিয়ার দায়িত্বহীন প্রচার আমাদের স্মরণ করে দেয় আমাদের মিডিয়ার সাংবাদিক , রিপোর্টার বেড়েছে, ক্যামেরা বেড়েছে, ব্যাবসায়িক বুদ্ধি বেড়েছে কিন্তু মেধা বাড়েনি এখনো, বাড়েনি দেশের ক্রান্তি লগ্নে দায়িত্ববোধ।
সারাদেশে বিদ্রোহের উম্মাদনা ছড়িয়ে দিতে সেদিন মিডিয়া রেখেছিল এক নির্লজ্জ্ব দায়িত্বহীন ভুমিকা। সেই সাথে আমাদের দুই দলের এক টেবিলে বসতে না পারার ব্যার্থতা ও আমাদের কে এখনো আসহায় করে তুলে। এখনো অসহায় করে তুলে দেশে এর চেয়ে বড় আর কি সংকট আসলে উনারা একজায়গায় এসে কথা বলবে, রাজনৈতিক কাদাছুড়াছুড়ি ছেড়ে? আমার ব্যাক্তিগত মত এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস সে দিন সেনা অভিযান না চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।
ব্যাপক ম্যাসাকার এবং দেশ ব্যাপি যার লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ত তাতে সন্দেহ নাই।
এই খানেও আমাদের এখনো গলদ আছে কেন আমাদের কোন শাক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা বড়ি নেই এসব বিষয়ে , দেশের সংকট কালে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে? কেন কেবল শুধু প্রধানমন্ত্রী নির্ভর?
আজকে এই দিনে তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করছি। হয়ত তারা আর কোন দিন জলপাই রঙের মোড়কে পিতা নামে আর কোনদিন তার কিশোরী মেয়ের কপালে পড়া চুলের গোছা তুলে দিবে না পরম মমতায় , হয়ত পড়ার টেবিলে এসে পিছনে দাড়িয়ে সারপ্রাইজ দিবে না আর কোন দিন। হয়ত আর কোনদিন প্যারেড গ্রাউন্ডে দেখা হবে না ব্যাচ মেটের সাথে। মনে পড়বে আজ কোন কোন সুহৃদের সে ক্যাডেট কলেজের রঙিন অথচ শৃংখলিত জীবন।
কিন্তু তাদের এই আত্মত্যাগ আমাদেরকে গর্বিত রাখবে আরো বহুকাল। আমুল লজ্জ্বিত করবে আমাদের চির পরিচিত অহিংস বাঙ্গালীর চরিত্রের এক হিংস্র দিকের। ধিক তাদের যারা নিত্য পরিচিত মানুষ গুলোকে, বন্দিদেরকে মেরে ফেলতে পেরেছিল, নারী , শিশুদের নির্যাতন করেছিল, অনুসুচনাহীন মুখে।
আরো ছবি
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।