আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেভাবে লেখা হলো-যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান



একাত্তরের মাঝামাঝি। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবি, সবাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিদিনের খবরাখবর রাখছেন। প্রতিদিনের ঘটনাপঞ্জি নিয়ে নানান বিশ্লেষন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর সাফল্যের খবরে তারা আনন্দিত। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যর্থতার খবরে তারা উদ্বিগ্ন।

এমনই একদিন কলকাতার বুদ্ধিজীবি মহলে রটে গেল পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করবে। সব আয়োজন সম্পন্ন। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় প্রথম খবরটা পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়েরা গড়ের মাঠে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকেন। সেখানে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহবান জানানো হয় অন্নদাকে।

বাংলাদেশ তথা পূর্ববঙ্গের প্রতি অন্নদার ছিল গভীর ভালোবাসা আর আবেগ। তার জন্ম যদিও পূর্ববঙ্গে নয়, কিন্তু তার দুটি সন্তানের জন্ম এখানে। আর জীবনের দুটি ভাগ তিনি কাটান পূর্ববঙ্গে। তো গড়ের মাঠে যাওয়ার জন্য বাড়তি টান ছিল তার। গেলেন, কিন্তু এত ভিড় ছিল তিনি ভিতরে পৌছাতেই পারলেন না।

তখন তার বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। যদিও তিনি শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ ছিলেন। ফিরে বাসায় এসে তার বক্তব্যটি তিনি কবিতায় রুপ দিলেন, যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা অশ্রুগঙ্গা বহমান তবু নাহি ভয় হবে হবে জয় জয় মুজিবুর রহমান। এখানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন দিক হলো, অন্নদা আশঙ্কা করেছিলেন শেখ মুজিবকে মেরে ফেলা হবে। তাই তিনি এ কবিতাটি লেখেন।

তিনি যদি অন্যরকম ভাবতেন, বা তার মধ্যে যদি চিন্তা আসতো, শেখ মুজিবকে পাকিস্তানিরা মারার ঝুকি নেবে না, তবে কী ওই কবিতাটির সৃষ্টি হতো? আমার মনে প্রশ্ন জাগে। আর তিনি যদি গড়ের মাঠে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেতেন, তবে হয়তো কবিতাটি সৃষ্টি হতো না। বা তিনি যদি বাসায় এসে ওই সময় কলম, কাগজ নিয়ে না বসতেন, তাহলে কী হতো কে জানে। অনবদ্য, ঐতিহাসিক কবিতাটি হয়তো লেখাই হতো না। অন্নদাশঙ্কর রায়ের '‌আমার ভালোবাসার বাংলাদেশ' বইটি পড়ে আমার এমন মনে হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.