আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের অস্ত্র নির্ভর রাজনীতি : আরএসও থেকে অস্ত্র যাচ্ছে শিবিরের কাছে



প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরকান জঙ্গী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশন (আরএসও) থেকে অস্ত্র যাচ্ছে জামায়াত ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কাছে। আরএসও থেকে সংগ্রহিত অস্ত্রের জোরে দক্ষিণ চট্রগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মহসিন কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজ, ও চকবাজারে ছাত্রশিবির যুগ যুগ ধরে আধিপত্য ধরে রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে দেশীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই বিষয়ে সরকারকে অবহিত করে আসলেও শিবিরের কৌশলী ভূমিকার কারনে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার আশানুরুপ নয়। ২০০১ সালে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন চিফ অফ ষ্টাফের স্বীকারোক্তিতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সম্পৃক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপারের কাছে তৎকালীন উখিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এন পালিত এক প্রতিবেদন পাঠান।

প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন চিফ অফ ষ্টাফের স্বীকারোক্তিতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। সংগঠনটি জামায়েতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরকে প্রচুর সাহায্য করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো অস্ত্র এনে ছাত্রশিবিরের কাছে সরবরাহ করে থাকে। আর শিবির অস্ত্র নির্ভর রাজনীতির মাধ্যমে কক্সবাজার সরকারী কলেজসহ চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রন ধরে রাখে যুগ যুগ ধরে। সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে চট্টগ্রাম-১৪ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে জামায়াতের রাজনীতির শক্ত ঘাঁটি হিসাবে গড়ে তোলা হয় শুধু মাত্র অস্ত্র নির্ভর ক্যাডার রাজনীতির মাধ্যমে।

বিগত সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহাজাহান চৌধুরীর আধিপত্য থাকলেও বর্তমানে আ ন ম শামসুল ইসলাম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসনটিতে জামায়াতের প্রভাব ধরে রাখেন। শিবির ক্যাডারদের অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারনে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্বাচন কেন্দ্রে পর্যন্ত যেতে পারেনি তৎসময়ে এমন অভিযোগ করেন বর্তমান এলডিপির কর্নধার কর্নেল অলি আহমেদ এমপিসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রার্থী। আরো জানা যায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে জামায়াত থেকে হামিদুর রহমান আজাদ নির্বাচিত হয়। উক্ত আসনে জামায়াত-শিবির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে চট্রগ্রামের শিবিরের অস্ত্রভান্ডার খ্যাত সাতকানিয়া থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে এক সময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী আহমদুল হক চৌধুরী ওরফে আহামদ্যা জামায়াতের রাজনীতি ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করার কারনে জামায়াত নেতার ইশারায় র‌্যাব ক্রসফায়ারে হত্যা করে বলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

এই ব্যাপারে দক্ষিন চট্টগ্রামের ইসলামি ছাত্র শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বার্তা সংস্থা ঢাকা নিউজ 24 ডট কমকে বলেন, ইসলামি ছাত্র শিবির আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে, অস্ত্র নিয়ে নয়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন অরক্ষিত সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আরএসও জঙ্গীরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একে-২৭ রাইফেল, এম- ১৬, একে-৪৭, ব্রিটেন ও চীনের তৈরী এল এম জি, বিধ্বংসী বিস্ফোরক, মর্টার, চাইনিজ রাইফেল, রকেট লাঞ্চার, হাজার হাজার গোলাবারুদ, গান পাউডার, নিয়ে আসে। বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে উদ্ধার করে সামগ্রীই সত্য প্রমানিত করে। আর এইসব অস্ত্র আরএসও সংগঠনের কাছ থেকে চড়া দামে সংগ্রহ করে শিবির ক্যাডাররা। ১৯৭৮ সালে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা দেশের কক্সবাজার এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির আশারতলী, ঘুমধুম এলাকার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে।

ওই সময় মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন থেকে নিজেদের রক্ষার জন্যই রোহিঙ্গারা মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে প্রবেশ করে। ১৯৮০ সালের দিকে তারা বাংলাদেশে শসস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলে। রোহিঙ্গারা মূলত ইসলাম অনুসারী হবার কারনে স্থানীয় জামায়াত নেতাদের আশ্রয় লাভ করে। সখ্য গড়ে উঠে জামায়াত নেতাদের সাথে আরএসওর। এশিয়ান টাইমসের বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের ব্রিডিং গ্রাউন্ড শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরএসও ১৯৮০ সালে জন্মের পর রাবেতা আল ইসলামিয়ার মাধ্যমে ক্যাম্প স্থাপন করে বিশেষ ট্রেনিং গ্রহন করে এবং সংগ্রহ করে অত্যাধুনিক সব ভারী অস্ত্র।

পরে উক্ত ক্যাম্পে ট্রেনিং গ্রহন করে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। এই ব্যাপারে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি ওবাইদুল হক বার্তা সংস্থা ঢাকা নিউজ 24 ডট কমকে বলেন, আরএসও থেকে অস্ত্র যাচ্ছে কিনা এই বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই। ৫-৬ বছর আগে আরএসওর প্রভাব থাকলে এখন দেশবিরোধী কোন শসস্ত্র সংগঠনের তৎপরতা নেই। এদিকে স্থানীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, আরএসও সহ মিয়ানমানের বিভিন্ন শসস্ত্র সংগঠনের অস্ত্র শিবির ছাড়াও দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে পৌছে যায়। আর এসব অস্ত্রের ব্যবহারে দেশের আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.