সারাদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে পুনর্গঠন করে গতিশীল ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোগ বাস্তবায়নে আজ (মঙ্গলবার) ছাত্রদলের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। পাশাপাশি সারা দেশে ছাত্রদল পুনর্গঠনের কার্যক্রমের সূচনা করবেন তিনি।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিতব্য ওই বর্ধিত সভায় সারাদেশে ছাত্রদলের ৮৫টি জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু এ বিষয়ে বলেন, সারাদেশের সংগঠনকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে এই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের ৮৫ টি সাংগঠনিক জেলার পাঁচ জন করে প্রতিনিধি সভায় অংশ নিবেন। প্রতিটি জেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, বর্ধিত সভায় মূলত সংগঠনকে গতিশীল ও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এখানে জেলা নেতৃবৃন্দ তাদের নিজস্ব জেলার সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে সভায় বক্তব্য রাখবেন।
একই সঙ্গে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর জন্য পরামর্শ নিবেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে ছাত্রদলের সর্বশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিএনপি তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তত্ত্ববধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কাজে কিছুটা শীথিলতা আসে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ৪ জুলাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সভাপতি ও আমিরুল ইসলাম আলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদলের একটি অংশ কমিটি প্রত্যাখান করে বিদ্রোহ করে। পরে কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করলে ওই অংশের চার নেতাকে ছাত্রদল থেকে বহিস্কার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রদলের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মামুনুর রশিদ, সাদিউল কবির নিরব, আকরামুল হাসান। পরে ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শিপন ও খোকনের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ নিদ্রোহ করে। ফলে ১৭ জানুয়ারি শিপন ও খোকনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এর জের ধরে গত ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের রোষানলে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় মারাত্মক আহত হন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দফা ধর্মঘটনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়েও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি কেন্দ্রীয় কমিটি।
ছাত্রদল একটি সূত্র জানায়, বহিষ্কৃত নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে ছাত্রদল সভাপতির উপর হামলার সাথে জড়িত দুই নেতা শিপন ও খোকনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানা গেছে। যদিও ছাত্রদল সভাপতি এ বিষয়ে বলেন, বর্ধিত সভায় কমিটি গঠন-পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হবেনা।
বর্তমান কমিটিকে গতিশীল করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
তবে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বিদ্রোহী অংশ বলছে, বর্ধিত সভায় সারাদেশে সাংগঠনিক কাজ জোরদার করার সাথে সাতে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই অংশ বলছে, সম্প্রতি বিএনপি‘র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডন থেকে এ ধরনের বার্তা নিয়ে এসেছেন। বিএনপি‘র সিনিয়র সহ-সভাপতি তারেক রহমান সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবের কাছে ছাত্রদলের ব্যাপারে নতুন কমিটি গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
বিএনপি‘র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ছাত্রদলের পুনর্গঠন নিয়ে বর্ধিত সভার পরে আলোচনা হবে।
পদবঞ্চিত ও বিদ্রোহীদের কমিটিতে স্থান দেয়ার বিষয়টিও পরে আসবে বলে জানান তিনি। বর্ধিত সভার বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদলকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করা, সার্বিক বিষয়ে দিক নির্দেশনা এবং করণীয় নির্ধারণ করতে এই সভা আয়োজন করা হয়েছে। দেশব্যাপী ছাত্রলীগের হত্যা, সন্ত্রাস, ভর্তি বাণিজ্য, ছাত্রী নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন সংগ্রামের নির্দেশনা আসবে বর্ধিত সভা থেকে।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, সারা দেশে আমরা সংগঠনকে গণতান্ত্রিক পন্থায় পুনর্গঠন করবো। চলতি মাসের শেষ দিক থেকে পুরোদমে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।
আশা করছি মার্চ-এপ্রিলের মাঝামাঝি পুনর্গঠন কাজ শেষ করতে পারবো। এজন্য আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমাদেরকে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা সব জেলায় আহবায়ক কমিটি গঠন করবো। জেলা কমিটি পরে থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করবো। এছাড়া ছাত্রদলকে সারা দেশে পুনর্গঠন করতে কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে বিভাগওয়ারি দায়িত্ব দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ওয়ার্ড কমিটি থেকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হবে। পরে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে থানা ও জেলা কমিটির নেতা নির্বাচন করবে।
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম পদবঞ্চিত ও বিদ্রোহীদের কমিটিতে পদায়নের বিষয়ে বলেন, সভায় নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা থেকে হয়তোবা কোন নির্দেশনা আসতে পারে। বর্ধিত সভার বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সভার প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বর্ধিত সভার প্রস্তুতি কমিটি
বর্ধিত সভার জন্য ইতিমধ্যে ৩টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে আহবায়ক করে ব্যবস্থাপনা, অভ্যর্থনা ও শৃঙ্খলা উপকমিটি, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমকে আহবায়ক করে আপ্যায়ন উপকমিটি এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুলকে আহবায়ক করে দফতর উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।