প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে অফিস শুরুর টাইম সকাল ঠিক দশটা, কিন্তু বের হবার নির্ধারিত সময় কখনই মানা হয়না। সরকারীভাবে ছয়টায় অফিসের সময় শেষ হবার কথা থাকলেও অত্যন্ত নির্দয় ভাবে প্রায় প্রতিটি অফিসেই মিনিমাম রাত নয়টা পর্যন্ত সবাইকে আটকে রাখা হয়। এমনকি কোন কাজ না থাকলেও নানা অজুহাতে অযৌক্তিক ভাবে বসিয়ে রাখা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সন্ধ্যা সময় কিছু অপ্রাসঙ্গিক কাজ ধরিয়ে দেয়া হয়। গুলশান এ একটি নামী ও হাইফাই ব্যাংক এর ম্যানেজার সাহেব রাত নয়টার টিভি নিউজ অফিসে দেখবেন বলে প্রতিদিনই বাকী সবাইকে যার যার ডেস্ক এ বসে থাকতে হয়।
তিনি এখন মতিঝিলে নতুন শাখায় গিয়ে একই স্টাইল প্র্যাকটিস করছেন। এ রকম অভিজ্ঞতা প্রায় সব প্রাইভেট ব্যাংকেই।
বস্তুত, ব্যাংক এ আগের প্রজন্মের কাজ ছিলো পুরোটাই ম্যানুয়েল। তখন সারাদিনের কাজগুলো জার্নাল, লেজার এবং আরও অন্যান্য জায়গায় ম্যানুয়েলি পোস্টিং দিতে হতো। এখন যারা উপরের লেভেলে আছেন, তাদের প্রায় সবাই ই সেই সময়ে ব্যাংকিং করে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তাই সেই অভ্যাসবশত রাত করে ব্যাংকিং করতে হবে সেই ধারণা তাদের মধ্যে গেঁথে আছে।
অথচ প্রযুক্তির বিকাশে এখন পোস্টিং দেবার সাথে সাথেই জার্ণাল, লেজার সহ ব্যালেন্স শিট তৈরী হয়ে যায়। সুতরাং অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ অনেক বেশি নির্ভুল ভাবে করা যায়। খুব বেশী অদক্ষ কর্মী ছাড়া অফিস নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করাটাও অত্যন্ত কঠিন।
প্রাইভেট ব্যাংক এ যারা জীবিকার জন্য ঢুকেছেন, তারা সামাজিকভাবে তো নয়ই এমনকি নিজের পরিবারকেও সময় দিতে পারছেন না। একবিংশ শতাব্দির ডিজিটাল যুগে আট ঘন্টার কাজের বেতন দিয়ে দৈনিক এগারো থেকে তের ঘন্টা অফিসে আটকে রেখে দেশ ও সংগঠনের কোন লাভ হচ্ছে কিনা তা ব্যাংক এর প্রধান নির্বাহীগণ ভালো জবাব দিতে পারবেন।
অথচ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাকুরী আইনগুলোতে আট ঘন্টার বেশী কাজ করতে হলে কর্মকর্তাদের সম্মতি ও ওভারটাইম নীতি অনুসরণ করে কাজ করাতে হয়, দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের উচ্চ হারের সুযোগ নিয়ে প্রায় সবগুলো প্রাইভেট ব্যাংক দশটা ছয়টার অফিসের কথা ঘোষণা দিয়ে দশটা নয়টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে দৈনিক অতিরিক্ত তিন থেকে চার ঘন্টা শ্রমশোষণ করছে।
সবশেষে, ব্যাংক গুলোর প্রতি অনুরোধ যে, তারা অফিস টাইম পুনর্নিধারিত করে সকাল দশটা থেকে রাত নয়টা করে অফিসারদের প্রতি প্রতারণা থেকে বিরত থাকুন। যাতে করে ব্যাংকার রা সেভাবে নিজেদের মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই চাকুরীতে ঢুকবে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়তো ব্যাংকারদের পয়লা মে'র মতো কোন আন্দোলনে নেমে যেতে হবে এক সময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।