আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আখেরী চাহার সোম্বা - মুসলমানদের একটি খুশির দিন

জানিনা পৌছাতে পারব কিনা! হয়ত না, কিংবা হ্যা......

আল্লাহ পাক প্রতিটি চন্দ্রমাসকে কোন না কোন বিষয় বা ঐতিহ্যময় অথবা ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে শোকাবহ, আনন্দময়, চিরস্মরণীয়, বরণীয়, ফজিলতপূর্ণ বা তাৎপর্যপূর্ণ করে মাসটিকে বিশ্বের মানুষের নিকট মহিমান্বিত করে দিয়েছেন। হয়তোবা বিশেষ বিশেষ ক’টি মাসের ঘটনা বা পূর্ণময় রজনী দিন বা মাস হিসাবে আমরা পালন করি ঘটা করে। যেমন- মহররম মাসের আশুরা, রমযান মাসের শবে কদর, শবে মেরাজ, দু-ঈদের দিন ইত্যাদি মুসলমানগণ অত্যন্ত ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসাবে পালন করে থাকে। এছাড়াও আরো ১২টি মাসের মধ্যে প্রতিটি মাসই আল্লাহ বিভিন্নভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছেন। তা আমরা অনেকেই কোন খবর রাখি না।

এমনি একটি মাসের কথা আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে মাসে আমাদের মুক্তির কান্ডারী সত্য ও ন্যায়ের পথ প্রদর্শক আলোর দিশারী শান্তির প্রতীক হযরত মুহাম্মদ (সা: ) এই ধরার মাঝে আগমন এবং আল্লাহর দরবারে চলে যাওয়ার পূর্বের মাসের বিশেষ একটি দিন। যে দিনটি উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা: ), বিবি ফাতেমা (রা: ), ইমাম হাসেন, হোসেন (রা: ) সহ হযরত মুহাম্মদ (সা: ) এবং অতি প্রিয় সাহাবাগণের জন্য ছিল অত্যন্ত আনন্দময় দিন। যে দিনে সাহাবাগণ খুশির সংবাদ শুনে হাজার হাজার দীনার, উট, দুম্বা, ঘোড়া ইত্যাদি অকাতরে দান করে ছিলেন। যে মাসের শেষ বুধবারে বা ২৭শে সফর মাসে আখেরী চাহার সোম্বা হিসাবে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ খুশির দিন হিসাবে পালন করে থাকে। আখেরী চাহার সোম্বা শব্দগুলো আরবী ও ফার্সী ভাষায় সংমিশ্রিত।

আখেরী অর্থ শেষ। চাহার সোম্বা ফার্সী শব্দ এর অর্থ বুধবার। আখেরী চাহার সোম্বা বলতে সফর মাসের শেষ বুধবারকে বুঝায়। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খুশির দিন এ জন্য যে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা: ) সফর মাসের শেষ বুধবারে ভোর বেলায় উম্মুল মোমেনীন বিবি আয়শা সিদ্দীকাকে ডেকে বলেন, বিবি আমার কাছে আসেন। তখন বিবি দৌঁড়ে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! (স: ) আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আমি হাজির আছি।

তখন মুহাম্মদ (সা: ) বললেন, হে আয়েশা সিদ্দিকা আমার মাথা ব্যথা যেন দূর হয়ে গেছে শরীর হাল্কা মনে হচ্ছে। আমি আজকে সুস্থ বোধ করছি। এই কথা শ্রবণকরে বিবি আয়েশা (রা: ) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন ও তাড়াতাড়ি পানি দ্বারা হযরত (সা: )-এর মাথা মোবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে ভালোভাবে গোসল করালেন। এই গোসলের ফলে হুজুর পাকের শরীর হতে বহুদিনের রোগজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ, বহুলাংশে দূর হয়ে গেল। তখন তিনি বিবি আয়েশাকে ঘরে কোন খাবার আছে কি না জিজ্ঞাসা করলেন।

বিবি উত্তর করলেন, হ্যা ঘরে রুটি পাকানো আছে। রাসুল (সা: ) বললেন, এগুলো নিয়ে এসো এবং মা ফাতেমাকে খবর দাও যে, দুইপুত্র হাসান ও হোসেন (রা: )কে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার নিকট যেন চলে আসে। বিবি আয়েশা মা ফাতেমা কে খবর দিলেন এবং ঘরে যে খাবার ছিল তা এসে রাসুলল্লাহ (সা: ) সম্মুখে হাজির করলেন। বিবি ফাতেমা (রা: ) আসার পর হযরত (স: ) মেয়েকে আদর করলেন এবং নাতি দুই জনের কপালে চুমু খেয়ে তাদের নিয়ে খেতে বসলেন। খবর শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্যান্য বিবি ও নিকটতম সাহাবাগণ হাজির হলেন।

তখন হযরত (সা: ) সকলের উদ্দেশ্যে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বললেন যে, আমার প্রিয় সাহাবী ও প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ আমার মৃত্যুর পর, আমার বিয়োগে, তোমাদের অবস্থা কি রূপ হবে? এই কথা শুনার পর সাহাবাগণ ব্যাকুল হয়ে ক্রন্দন শুরু করে দিলেন। তাদের এই ব্যাকুলতা দেখে হযরত (সা: ) স্নেহ ভরা সান্তনা দিয়ে সকলকে বললেন, সকলের আগে আল্লাহর দরবারে আমাকে যেতে হবে। তারপর তিনি মসজিদে নববীতে গেলেন এবং নামাজের ইমামতি করলেন। হযরত (স: )-এর শরীরের উন্নতি দেখে সাহাবাগণ অতিশয় আনন্দিত হলেন। দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর সুস্থদেহে হযরত (স: ) মসজিদে নববীতে এসে ইমামতি করেছেন।

এই অপার আনন্দে সাহাবাগণ নিজ, নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান খয়রাত করতে থাকেন। অনেক বর্ণনায় দেখা যায়, খুশিতে বাগাবাগ হয়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা: ) সাত হাজার দীনার হযরত ওমর ফারুক (রা: ) পাঁচ হাজার দীনার, হযরত ওসমান (রা: ) দশ হাজার দীনার, হযরত আলী (রা তিন হাজার দীনার এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা: ) একশত উট ও একশত ঘোড়া আল্লাহ তায়ালার রাহে দান করে দিলেন। এ নজির দেখে আমরা একটা জিনিস অনুধাবন করতে পারলাম যে, সাহাবাগণ নবীজীকে কতটুকু ভালবাসতেন। নবীজীর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, সম্মান ছিল অত্যন্ত নিখুঁত ও অতুলনীয়। সাহাবাগণ নবীজীর জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না।

আমরাও তো মহানবী (সা: )-এর উম্মত ও অনুসারী। আমরা কি পারি না সাহাবীদের মত রসুল (স: ) কেও অনুসরণ করতে? হে মোমেন মুসলমানগণ! আসুন এই সফর মাসের শেষ বুধবার, যে দিনে হযরত মুহাম্মদ (সা: ) সহ সাহাবীগণের আনন্দময় ও খুশির দিন এই দিনে দরূদ, এবাদত বন্দেগী করে দয়াময় আল্লাহ পাকের নিকট আমরা দোয়া করি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের দেশ, জাতি ও সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে শান্তি ও মঙ্গল দার করেন। ইত্তেফাক অবলম্বনে Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.