Only I know what is my goal, My heart is my temple.
‘জিএম ফুড আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করবে। যদি কৃষি ও শিল্প ভিত্তিক খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে আমরা পার্থক্য করতে না শিখি তাহলে কৃষিমন্ত্রী যে দলেরই হোন না কেন, দেশের ক্ষতিই করবেন’
-ফরহাদ মজহার
কাজী সায়েমুজ্জামান: উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নয়াকৃষি আন্দোলনের প্রধান ফরহাদ মজহার বলেছেন, অন্য প্রাণীর জিন কৃষিবীজে ঢুকিয়ে জেনেটিক্যাললি মোডিফাইড ফুড বা জিএম ফুডের নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। এ বীজ একবার বাজার দখল করতে পারলে দেশীয় জাতের বীজ চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে। কারণ এর ফসল থেকে বীজ সংগ্রহের কোন উপায় নেই। ফলে দেশীয় প্রজাতির বীজ হারিয়ে দেশের কৃষকরা তাদের ওপর আজীবন নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।
আর জিএম ফুডের বীজের জৈব চরিত্রগত গুন বদলাতে অন্য প্রাণীর জিন ঢোকানো হয় বলে তা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ ফুড আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করবে।
কয়েকদিন আগে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে দেশের এই বিশিষ্ট কবি ও কলামিস্ট জিএম ফুডের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। বর্তমানে জিএম ফুডের নামে বহুজাতিক কর্পোরেশনের একচোটিয়া ব্যবসা ও ভবিষ্যতের বিপদের আশংকাও তিনি তুলে ধরেন। এর বিপরীতে দেশীয় কৃষিবৈচিত্র রক্ষা ও নতুন পদ্ধতিতে দেশজ কৃষির উৎপাদন বাড়াতে নিজ উদ্যোগ নয়াকৃষি আন্দোলনের কার্যক্রম ও সফলতা তুলে ধরেন।
সার কীটনাশক ছাড়াই এ পদ্ধতিতে ফলন যে জিএম ফুডের চেয়েও বেশি তা উৎপাদনের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন। বর্তমানে দেশের ২২টি জেলায় তিন লাখ কৃষক দুই লাখ ৪৮ হাজার ১২৮ একর জমিতে নয়াকৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। সাপ্তাহিক বুধবারে প্রকাশিত জনগুরুত্বপূর্ণ এ সাক্ষাতকারটি নিচে উপস্থাপন করা হলো--
কাজী সায়েমুজ্জামান: আপনারা বলে আসছেন জিএম শস্য উৎপাদন পরিবেশ ও মানুষের শরীরে ক্ষতি করে। কিভাবে করে?
ফরহাদ মজহার : জিএম শস্য মূলত বীজের বিকৃতির মাধ্যমে করা হয়। বিশেষ করে বীজকে বিশেষ বিশেষ কীটনাশক বা আগাছানাশকের ক্ষেত্রে সহনশীল তৈরি করে পুরো বীজটাকেই বিষাক্ত করে তোলা হয়।
বীজের জৈব চরিত্রগত গুণ বদলাতে অন্য প্রাণীর জিন ঢোকানো হয়, যা মানুষের শরীরের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে। জিএম ফুডের কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত খাদ্য নিরাপদ কিনা জানার জন্যে মানুষের শরীরে কোন গবেষণা করেনি, শুধু পশুর শরীরে করেছে। তারা তথ্য গোপন করে। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে ইঁদুরকে বিটি ভুট্টা খাওয়ানোর পর কলিজা, কিডনি নষ্ট হয়েছে, জিএম আলু খেয়ে অন্ত্রনালী নষ্ট হয়েছে। মানুষের শরীরে সরাসরি গবেষণা না করলেও ভারতে বিটি তুলার চাষে কর্মরত কৃষি শ্রমিকদের মারাÍক স্বাস্থ্য সমস্যা ধরা পড়েছে।
তাদের চামড়া, চোখ এবং শ্বাসযন্ত্রে সমস্যার কারণে অনেক শ্রমিককেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অথচ সাধারণ তুলা চাষে নিয়োজিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়নি। জার্মানিতে বিটি ভুট্টা খেয়ে গরু মারা গেছে। এই সব নিয়ে এখন বিস্তর গবেষণা হয়েছে। জেফরি স্মিথের ।
Genetic Roulette : The Documented health risks of genetically modified food’ যারা পড়েছেন, তারা ভয়ে আঁতকে উঠবেন।
সায়েম : জিএম ফুডের পেছনের রাজনীতিটা কি? এর মাধ্যমে কারা বেশি লাভবান হবে?
ফরহাদ মজহার : জিএম ফুডের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বহুজাতিক কর্পোরেশন। বর্তমান বিশ্বে ৯০% প্রযুক্তির পণ্যের পেটেন্ট এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ৭০% বহুজাতিক কোম্পানির দখলে রয়েছে। যারা সারা বিশ্বের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের সংখ্যা হাতেগোনা মাত্র ১০টি কোম্পানি। এতদিন বহুজাতিক কোম্পানি শিল্প পণ্যের ওপর একচ্ছত্র ব্যবসা করছে এখন তারা কৃষি সরঞ্জাম, উপকরণ, বীজ, শস্য এবং খাদ্যের ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসা করছে।
মাত্র ৪টি বহুজাতিক কোম্পানি বিশ্বের ভুট্টা, গম, কফি, চা এবং আনারস রফতানির ৯০% নিয়ন্ত্রণ করে। কৃষিতে মাত্র দুটি কোম্পানি কার্গিল এবং মনসান্তো একচেটিয়া ব্যবসা করছে। শুধু তাই নয়, তারা বীজের ওপর পেটেন্ট করে আবার কৃষকের কাছে অতি মুনাফায় বিক্রি করছে। মাত্র ১০টি বীজ কোম্পানি (যা একই সঙ্গে কীটনাশক কোম্পানি) ৬৭% বাণিজ্যিক বীজের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এখনো তৃতীয় বিশ্বে কৃষকের ঘরে বীজ আছে বলে তারা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
তাই তারা আমাদের মতো দেশের বাজার দখল করতে চাইছে। এ কাজ করার জন্যে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের কাজে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে নয়াকৃষি ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নয়াকৃষি কৃষকের ঘরে বীজ রাখার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। আমাদের বীজ সম্পদ কেন্দ্র এবং কৃষকের বীজ সংঘ এই ক্ষেত্রে খুবই শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।
সায়েম : নয়াকৃষি আন্দোলনের সঙ্গে আপনি কত বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন। এর মূল দর্শনটা কি?
ফরহাদ মজহার : কৃষকদের মধ্যে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে। আমরা উবিনীগের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইলের তাঁতীদের সঙ্গে গবেষণার কাজ করছিলাম। এই সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আমাদের কাছে এসে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বললেন। আমরা দেখলাম বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়েও বেশি তি হয়েছে দীর্ঘদিন আধুনিক কৃষি করতে গিয়ে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও মাটির তলার পানি ব্যবহার এবং দেশীয় বীজ ব্যবহার না করে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার করে।
এতে তাদের প্রাথমিক অবস্থায় কিছু লাভ দেখা গেলেও পরবর্তীকালে ফলন পড়তির দিকে ধেয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই মাটি নষ্ট হয়েছে, কৃষক বীজ হারিয়েছে এবং কীটনাশক ও আর্সেনিকের দূষণে মারাÍক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সার ও কীটনাশক অধিক ব্যবহার করার পরেও ফলন পড়ে যাওয়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে। সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের মূল্যের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাই বন্যর মতো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগও তাদের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষকদের এই আকুতি আমাদের খুব ভাবিয়ে তুলেছিল। তাই আমরা ১৯৮৯ সাল থেকেই কৃষকদের সঙ্গে নিয়েই প্রথমে বাংলাদেশের পরিবেশ, মাটি ও প্রাণবৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্যের আলোকে কী ধরনের চাষাবাদ, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে সেই বিষয়ে গবেষণা শুরু করি। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়েই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে, কৃষক নিজেই নানা পদ্ধতিতে জৈব সার উৎপাদন করতে পারে এবং মাটি, পানি ও বীজ ব্যবস্থাপনায় দতা বাড়িয়ে একদিকে অধিক ফলন নিশ্চিত করতে পারে, অন্যদিকে উন্নত দেশীয় বীজ ও মিশ্র ফসলের চাষাবাদের মধ্য দিয়ে সার ও বিষের জন্য কোন বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে চমৎকার কীট ও রোগবালাই দমন করতে পারে। ফলন বেশি তো বটেই এমনকি খাদ্য হয় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। বুঝতে পারি বাংলাদেশের খাদ্য সার্বভৌমত্ব অর্জনের এটাই পথ।
বহুজাতিক কোম্পানি ও বিদেশী শাসন-শোষণ ও বিদেশনির্ভরতা থেকে কাটিয়ে ওঠার এটাই সঠিক পথ। এই অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে কৃষকরাই আস্তে আস্তে নয়াকৃষি আন্দোলন গড়ে তোলে।
কৃষি বিজ্ঞানের নামে বোগাস প্রপাগান্ডা ও ভুয়া দাবি এবং সার ও বিষ কোম্পানির মার্কেটিং প্রচারণার বেলুন ফুটা করে দিয়ে সত্যিকারের বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে কৃষকের হাজার বছরের জ্ঞানের সমন্বয় ও বিকাশ ঘটানোই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানের - বিশেষত প্রাণবিজ্ঞান, পরিবেশ ও প্রাণের বসতি ও ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞান এবং প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে একটা জ্ঞানগত উল্লম্ফন ঘটেছে। ফলে কর্পোরেশনের স্বার্থে প্রপাগান্ডা করে এমন ভুয়া বিজ্ঞানের বিপরীতে সত্যিকারের বিজ্ঞান কৃষকের হাজার বছরের লোকায়ত জ্ঞানের কাছাকাছি চলে এসেছে।
এমনকি প্রাণবৈচিত্র্য রার জন্য রামসর কনভেনশন, বায়োডাইভার্সিটি কনভেনশনসহ নানান আন্তর্জাতিক চুক্তিও হয়েছে। বিজ্ঞান ও লোকায়ত জ্ঞান হাত ধরাধরি করে কতোদূর এগিয়ে গিয়েছে দেখুন। অতএব, আমাদের দর্শনটা হচ্ছে সত্যিকারের অগ্রসর বিজ্ঞান চিন্তার সঙ্গে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ও শক্তির পূর্ণ ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানো। সেই কারণেই আমরা ‘নয়াকৃষি’ করি - পুরনো কৃষি - অর্থাৎ কৃষক যা করে সবই ভালো এই ধরনের রোমান্টিকতা আমাদের যেমন নেই, ঠিক তেমনি কোম্পানির ভাড়া খাটা বিজ্ঞানীরা যা বলে সেটাই সঠিক ওই ধরনের মূর্খতাকেও আমরা পাত্তা দেই না। পুরনো চিন্তা বাদ দিতে হবে, বহুজাতিক কোম্পানির ও ব্যবসায়ীদের অধীনে বাংলাদেশের কৃষিকে জিম্মি করা রুখে দিতে হবে।
সূর্যের আলো, বাতাস, মাটি, পানি, বীজসহ কৃষির সকল উপাদানকে একত্র করার নতুন জ্ঞান কি করে কৃষকের মধ্যে সঞ্চারিত ও ছড়িয়ে দিয়ে খাদ্য উৎপাদন দ্রুত বেগে বাড়ানো যায় সেই দিকেই আমরা মনোযোগী। শুধু মানুষের খাদ্যের উৎপাদনের জন্যে কৃষি নয়, আমরা সকল প্রাণের জন্য খাদ্যের উৎপাদন করতে চাই। নয়াকৃষির ফলে মানুষের খাদ্য, গরু, ছাগল, হাঁসমুরগি, পাখপাখালি, মাছ সকলের খাদ্য যেমন হবে তেমনি মাটির মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র প্রাণী জীব অনুজীব আর অদৃশ্য সকল প্রাণের খাদ্যের জোগান হবে। নয়াকৃষি শুধুমাত্র আবাদ করা ফসলের চাষ করে না, বরং এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় যেখানে অন্যান্য গাছগাছালি নিজেই গড়ে উঠতে পারে যা মানুষের, পশুপাখির খাদ্য, ওষুধ, ঘর বাঁধার সামগ্রী, জ্বালানি ইত্যাদি হবে। নয়াকৃষি সব কিছুর জোগান দিতে সক্ষম।
তাই সংক্ষেপে আমরা বলি, নয়াকৃষির মূল দর্শন হচ্ছে আনন্দ।
সায়েম : এ সময় আমাদের কৃষি ব্যবস্থায় কি কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন?
ফরহাদ মজহার : প্রচুর গবেষণা করতে হয়েছে আমাদের। মাটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো আছেই, কারণ বাংলাদেশের মাটি আধুনিক কৃষির কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জৈব পদার্থ প্রয়োজনের তুলনায় নেই, অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক তলানিতে এসে পৌঁছেছে। আরো অনেক গবেষণা করেছি, যেমন, ১. কিভাবে গাছগাছালি জৈবসঞ্চয় দ্রুত বাড়ানো যায় এবং সূর্যের আলো ব্যবহারের পদ্ধতি ও পরিকল্পনা কেমন হবে।
আমাদের তো প্রচুর সবুজ দরকার, কারণ গাছপালার সবুজ থেকেই আমাদের সবুজ সার বা কম্পোস্ট বানাতে হয়। ২. বীজের মধ্যেই তার ফলনের রহস্য নিহিত এই ভুয়া তথ্যটা বাতিল করে দেয়ার জন্য গবেষণা করতে হয়েছে, একই বীজ কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন ফলন দেয় বা দিতে পারে, অতএব বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য আমাদের একটি শস্য মানচিত্র তৈরি করতে হয়েছে। ভাবুন, এর বিপরীতে কোম্পানিগুলো চায় তাদের একই বীজ সব জায়গায় যেন একইভাবে চাষাবাদ হয়, তাদের বাজার যেন বাড়ে, যাতে মুনাফার ঝুলিও বাড়ে ৩. আমরা প্রায় তিন হাজার দেশীয় ধানের মনোগ্রাফ করেছি। তাদের মূল্যায়নের জন্য ইকেলজিক্যাল ডেসক্রিপটর - বা তাদের যে লণগুলো দেখে তাদের কোথায় আবাস, কোথায় তাদের ফলন বেশি হতে পারে, কিংবা তাদের প্রাণকোষের বিশেষ গুণটা কোন পরিবেশে ভাল ব্যক্ত হতে পারে সেই সব নিয়ে দীর্ঘ, কষ্টকর ও অধ্যবসায়ী পরিশ্রম আমাদের করতে হয়েছে, এখনো করতে হচ্ছে ৪. আমরা নানান ধরনের কম্পোস্ট বানানো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। উপাদান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও কত কম সময়ে কম্পোস্ট বানানো যায় সেই গবেষণা করেছি ৫. মিশ্র ফসল করার সময় কোন ধরনের মিশ্রণ মাটির ব্যবস্থাপনা, ফলন বাড়ানো বা পরিবেশ রার জন্য ভালো সেই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি ৬. দেশীয় বীজ ও মিশ্র ফসল মানেই সেখানে পোকা বা রোগবালাইয়ের উপদ্রব নেই।
নিশ্চিত। তবুও আমরা কিভাবে তথাকথিত খারাপ পোকাকে কৃষি ব্যবস্থার সম্পদে রূপান্তর করতে পারি সেই সব নিয়ে গবেষণা করেছি। জানেন নিশ্চয়ই, একটি পোকা একটি ফসলের জন্য তিকর হলেও আরেকটি ফসলের জন্য উপকারী হতে পারে। কীটনাশক দেই না বলে মৌমাছি ও পরাগায়ন নিয়ে আমাদের বিস্তর ভাবতে হয়েছে। পরাগায়নের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কমপে ২০ ভাগ ফলন বাড়ানো যায়।
নয়াকৃষি দারুণ ব্যাপার। জগৎ নতুনভাবে আমার কাছে ধরা দিতে শুরু করে। এখন গবেষণা চলছে গবাদিপশু, ওষুধি গাছ নিয়ে।
সায়েম : কতজন কৃষককে আপনারা এ পর্যন্ত নয়াকৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন? কোন কোন এলাকায় কত একর জমিতে এ পদ্ধতির কৃষি হচ্ছে?
ফরহাদ মজহার : এ পর্যন্ত ২২টি জেলার প্রায় ৩ লাখ কৃষক পরিবার আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এই জেলাগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও কুমিল্লা।
জমির পরিমাণ, গত বছরের হিসাব অনুযায়ী ২ লাখ ৪৮ হাজার ১২৮ একর।
সায়েম : নয়াকৃষির মধ্য দিয়ে আপনারা কত প্রকার ধান উৎপাদন করেন?
ফরহাদ মজহার : নয়াকৃষির কৃষকরা প্রায় ৩০০০ জাতের ধান নিয়মিত সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদন করেন। আমরা প্রতিবছরই নতুন জাত সংগ্রহের জন্য অভিযান চালাই। তবে নয়াকৃষকরা প্রায় ৪০০ জাতের ধান কৃষকের পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করেন। এই জাতগুলোকে আমরা ‘নিরাপদ’ বলে শনাক্ত করি।
এরপর রয়েছে বিপদাপন্ন জাত আর প্রায় লুপ্ত জাত। একটি জাতের বেশ কিছু পরিমাণ মোটামুটি উৎপাদন করতে পারলে সেই বীজ আমরা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেই। তারপর সেটা কৃষকরা বেশি জায়গা জুড়ে চাষ করবেন কি করবেন না সেটা তাদের ব্যাপার।
সায়েম : কোন পদ্ধতিতে ফলনের হার বেশি। অন্যান্য পদ্ধতিতে চাষাবাদের তুলনায় জৈব সার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে উৎপাদিত ফলনের হার কেমন?
ফরহাদ মজহার : বলা বাহুল্য, নয়াকৃষি পদ্ধতিতে ফলনের হার বেশি।
দু’ভাবে ফলনের হিসাব করা যায়। ধরুন, একটি বিশেষ জাতের ধান, তার ফলন। একে হিসাবের ধরনকে বলা হয় Single Plant Paradigm- অর্থাৎ হিসাবটা আপনি একটা জাত নিয়ে করছেন। কিন্তু জমিকে অন্যভাবে ব্যবহার করলে কী পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতেন সেই হিসাব করছেন না। আমাদের কাছে কমপে ৬০টি কি তারও বেশি জাতের ধান আছে যাদের উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ৭ থেকে ৯ টন।
কিছু বিশেষ জাতের ধান ছাড়া -যেমন, সুগন্ধি চাল, বোরো ধান, কিংবা আগে পাকে এমন আমনের জাত ছাড়া অধিকাংশ জাতেরই ফলন কমপে প্রতি হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন। ঠিক যে দেশীয় জাতের মধ্যে প্রতি হেক্টরে এক থেকে দেড় টন ফলন হয় এমন জাত যেমন আছে তেমনি হেক্টরে নয় টন হয় এমন জাতও আছে। আমরা ধানের বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলছি এবং বৈচিত্র্য রার পপাতী। সব জমিতে সবকিছু হয় না, আর সব জমিতে ইলেকট্রিসিটি, পানি নষ্ট করে বিষ-সার দিয়ে ধান চাষ করা আহাম্মকি ছাড়া আর কী! উফশী ধানের জাতীয় গড় বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাঠে যতটা হয় বলে দাবি করা হয় কৃষকের মাঠে কিন্তু তা হয় না। গড়ে প্রতি হেক্টরে তিন থেকে সাড়ে তিন টন হয় কিনা সন্দেহ।
হাইব্রিড ধানের যেসব দাবি আমরা শুনি, তার অধিকাংশই ভুয়া। কারণ চিটা হওয়া, অসুখে মরে যাওয়া এবং মাঠে থাকতেই ঝরে যাওয়া এইসব নিয়ে তো বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। উফশী ধানের ক্ষেত্রে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জেপনিকা এবং ইনডিকা জাতের ধানের ক্রসিংয়ে যে উফশী জাত সেই ক্ষেত্রে ক্রসিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে মাটি থেকে ধানের জৈব সার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো নয়, বরং রাসায়নিক সার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো। ক্ষেতে দেওয়া অধিকাংশ সারই ধান গাছ ব্যবহার করতে পারে না, মাটিতে থেকে যায় বা ধুয়ে চলে যায়।
পাল্টা দেশী ধান নয়াকৃষি পদ্ধতি অনুযায়ী চাষ করা গেলে কম্পোস্ট ও মাটি থেকে অনায়াসেই তার প্রয়োজনীয় সার বা পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। ফলন তো ভাল হয়ই একই সঙ্গে এই ধান হয় পুষ্টিতে ও স্বাদে অনন্য।
দ্বিতীয় হিসাবটা হচ্ছে পুরো কৃষি ব্যবস্থা বা ব্যবস্থাপনার ফলন। একে বলা হয় System Yield। অর্থাৎ আপনি একটি জাত ব্যবহার করে কি পেলেন সেই হিসাব নয়, কৃষি ব্যবস্থা পুরাটা সব ধরনের খাদ্য মিলিয়ে কী পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।
সেই ক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই চ্যালেঞ্জ করে বলেছি নয়াকৃষি পদ্ধতির ফলন দ্বিগুণ তো হবেই, এমনকি তিনগুণও হতে পারে। কেন? কারণ আপনার কৃষি ব্যবস্থায় তখন কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য, নালা খানাখন্দে মাছ, মাঠে মোরগ-মুরগি-হাঁসের বিচরণ ক্ষেত্র, পশু খাদ্যের প্রাপ্তি - সবকিছুই তো বেড়ে যাবে।
কানাডার আইডিআরসি নামের সংগঠনের সঙ্গে ফলন নিয়ে গবেষণার একটা হিসাব দিচ্ছি। যদি আপনি নয়াকৃষির মতো প্রাণবৈচিত্র্য ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখেন তাহলে বাংলাদেশে এমনিতেই আপনি আপনার প্রয়োজনের প্রায় ৪০ ভাগ খাদ্য কুড়িয়েই সংগ্রহ করতে পারবেন। এখন ভাবুন, আধুনিক কৃষি এই ৪০ ভাগ কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য ধ্বংস করেই তারপর ফলন নিয়ে কের্দানি দেখায়।
তারা তো ৪০ ভাগ খাদ্য আগেই নষ্ট করে দিয়েছে বিষ ও সার ব্যবহার করে। তাদের উৎপাদন ধ্বংস করে কিংবা কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য ব্যবহার অসম্ভব করে তুলে।
সায়েম : নয়া কৃষির বিরুদ্ধে অনেক বিশেষজ্ঞের একটি আপত্তি হলো এ পদ্ধতিতে উৎপাদন কম হয় যার মাধ্যমে ১৫ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ অসম্ভব। আপনার মতামত কি?
ফরহাদ মজহার : কোন বিশেষজ্ঞের কথা বলছেন?! বড় জোর মনসান্তো বা সিজেন্টার প্রচারটাই চালাচ্ছে কিছু কিছু লোক তাদেরই চাকরি বা তাদের কাছ থেকে সাহায্য পায় বলে। প্রশ্ন করবেন, তারা কেউ নয়া কৃষির মতো প্রতিটি ধানের জাতের ফলন নিয়ে গবেষণা করেছে কিনা।
বাংলাদেশের ১৫ হাজার জাতের মধ্যে সব ধানেরই ফলন কম এটা তো চরম আহাম্মকেরও বিশ্বাস করার কথা নয়। আপনি তো বুঝতেই পারছেন এটা ভুয়া প্রপাগান্ডা, মূলত বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ রার জন্যই এই সব ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো হয়। তাছাড়া খেয়াল করবেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলা হয় আমরা বুঝি মান্ধাতার আমলের কৃষির কথা বলছি। নয়াকৃষি মানেই তো ফলন বাড়াবার আন্দোলন, ফলন কম হবে কেন? পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রার তাগিদ যে যুগে সেই যুগে আধুনিক কৃষিই হচ্ছে বরং মান্ধাতার আমলের কৃষি। যারা সন্দিহান তাদের সন্দেহ মোচন করার জন্য আমরা তো ঘোষণা দিয়েই বলেছি, আসুন তুলনামূলক গবেষণা হোক।
সরকার ও বিজ্ঞানীদেরও বলেছি। বিবিসির একটি সাক্ষাৎকারেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি বহুদিন হলো। কই, কোন বাপের ব্যাটা আমাদের সঙ্গে ফলন নিয়ে গবেষণা করতে এলো না কেন? এলো না কারণ ইতোমধ্যেই তাদের পরেই গবেষণা পত্রিকা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, নয়াকৃষি আর যাই হোক আধুনিক কৃষির তুলনায় ফলন কম দেয় না। এই সব গবেষণা প্রকাশের পরও এই সব গুজব ছড়ানো হয় বাংলাদেশকে বহুজাতিক কোম্পানির শোষণের ক্ষেত্র বানাবার জন্য। আমাদের ফলন তথাকথিত আধুনিক কৃষি - যা কিনা বিজ্ঞানের অগ্রগতির তুলনায় এখন আসলে পরিবেশ বিধ্বংসী ও পশ্চাৎপদ কৃষি বলেই বেশি পরিচিত Ñ সেই কৃষির তুলনায় কম হবে এটা এতোই হাস্যকার ও মূর্খের প্রলাপ যে সেটা যে কেউই বুঝতে পারে।
তারপরও আমরা ফলন বাড়াবার জন্য ক্রমাগত গবেষণা করে যাচ্ছি। দুই-একটি ধানের জাতে সার-কীটনাশক দিয়ে উচ্চ ফলন দেখালাম, কিন্তু তা করতে গিয়ে মাছ মরল, গরু মরল, ছাগল মরল, হাঁস-মুরগি মরল তো খাদ্য উৎপাদন বাড়ল কোথায়? শুধু তাই নয়, মানুষ এই খাদ্য খেয়ে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, নানা অসুখে জর্জরিত হচ্ছে। খাদ্য ধ্বংসই তো দেখছি আমরা। যদি উৎপাদন বেড়েই থাকে তাহলে গ্রাম থেকে লোকজন শহরে ছুটে আসছে কেন? জীবিকার জন্য এই হাহাকার কেন? নিজেদের দোষ ঢাকবার জন্য এখন জনসংখ্যাকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ নয়াকৃষি এলাকাগুলোতে আমাদের আরো লোকবলের দরকার।
অতএব আধুনিক কৃষি আর্থ-সামাজিক দিক থেকেও ভয়াবহ।
সায়েম : আপনাদের উৎপাদিত খাদ্যবস্তু বাজার মূল্যের প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যের চেয়ে দাম বেশি। কেন?
ফরহাদ মজহার : প্রথম কারণ আধুনিক কৃষি ভর্তুকি পায় আমরা কোনো ভর্তুকি পাই না। আধুনিক কৃষক ফসল ফলাতে যে ভর্তুকি পায়, হিসাব করে আমাদের সেই ভর্তুকি দেওয়া হোক আমরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে খাদ্য সরবরাহ করব। তবে সব ফসলের ক্ষেত্রে আমাদের দাম বেশি নয়।
আপনি যদি ঢেঁকি ছাঁটা ধান চান তাহলে তো তার দাম একটু বেশি পড়বে। কারণ এর পেছনে যে শ্রম রয়েছে তার মূল্য তো দিতেই হবে। তাছাড়া এই খাদ্য বাজারের প্রচলিত খাদ্যের তুলনায় পুষ্টিমানের দিক থেকেও বেশি। কাজেই হিসাব করলে এই খাদ্যের দাম মোটেও বেশি নয়।
ভাবুন, আমরা ইলেকট্রিসিটি দিয়ে মাটির তলার পানি তুলি না।
পানি নষ্ট করি না, জ্বালানিও খরচ করি না। তার মানে আমরা সম্পদ বাঁচাচ্ছি। কিন্তু সরকার এই ধরনের চাষাবাদের জন্য কোনো ভর্তুকি বা সহায়তা দেয় না। যে কৃষি বহুজাতিক কোম্পানির জন্য মুনাফা কামায় তাদেরই রাষ্ট্র ভর্তুকি দেয়। টাকাটা কিন্তু কৃষকের কাছে যায় না, ঘুরেফিরে বিদেশী কোম্পানির মুনাফার খাতায় জমা হয়।
আপনাদেরই খাজনার পয়সা দিয়ে এই সব হয়। যে দামটা আপনি কম পাচ্ছেন সেটা তো আগেই ভর্তুকি দিয়ে আপনার পে রাষ্ট্র দাম শোধ করে রেখেছে।
সায়েম : নয়াকৃষি আন্দোলনকে সফল করতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার জন্য দেশের কোন সরকারের সঙ্গে আপনারা কথা বলেছেন কিনা। এতে কোন ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন কি?
ফরহাদ মজহার : বর্তমান কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নয়াকৃষি কাজ সরজমিনে দেখানো হয়েছে। নয়াকৃষির কৃষকদের সঙ্গে তাদের আলোচনা সভাও হয়েছে।
মতিয়া চৌধুরী কৃষক দরদী বলে পরিচিত। তার সম্মানে আমরা একটি বিশাল আন্তর্জাতিক সম্মেলনেরও আয়োজন করেছিলাম যেখানে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা প্রাণবৈচিত্র্য ভিত্তিক উৎপাদনের সুফল তাকে বুঝিয়েছেন। শুধু ফলন বৃদ্ধির প্রশ্নেই নয়, এর রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক দিকও তাকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের হতাশ করেছেন। কোম্পানির প্রপাগান্ডায় সকলেই বিভ্রান্ত।
আমরা দাবি করি না যে বাংলাদেশে রাতারাতি নয়াকৃষির প্রবর্তন শুরু হোক কিন্তু যে অভিজ্ঞতা আমাদের কৃষকদের হয়েছে এবং যে সাফল্য সম্পর্কে তারা নিশ্চিত সেটা তো আমরা সরকারের সহায়তায় ছড়িয়ে দিতে পারি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারো কাছ থেকেই আমরা একফোঁটা সহায়তা পাইনি।
আমার মনে হয় যদি কৃষি ও শিল্পভিত্তিক খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে আমরা পার্থক্য করতে না শিখি তাহলে কৃষিমন্ত্রী যে দলেরই হোন না কেন, দেশের ক্ষতিই করবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষিতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তার থেকে রা পাওয়ার জন্য জাতীয়ভাবে নয়াকৃষি বিস্তার অত্যন্ত জরুরি। এই বিপর্যয়ের নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, মাটিতে যেখানে জৈব পদার্থের প্রয়োজন কমপক্ষে শতকরা ৩ ভাগ সেক্ষেত্রে বর্তমানে এটা দাঁড়িয়েছে শতকরা ১ ভাগেরও নিচে।
তদুপরি ঘাটতি দেখা দিয়েছে দস্তা, সালফার, ফসফরাস, বোরন, পটাশিয়াম, নাইট্রোজেন, ফসফেট, মলিবডেনাম, সিলিকন ও কপারের। পরাগায়নের জন্য যে কীটপতঙ্গ দরকার তা প্রায় সর্বাংশে বিলুপ্ত। ফলে বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত হচ্ছে এবং ফলন কমে যাচ্ছে। ফসলের ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে মাছসহ জলজ সকল প্রাণসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। মাটির তলার পানি সেচ দেওয়ার কারণে মাটিতে এবং পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন ফসলের মধ্যে আর্সেনিকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ফলে মানুষের মধ্যে নানা রকম রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নয়াকৃষি বিস্তার অত্যন্ত জরুরি। সকলের কাছ থেকেই আমরা দায়িত্ববোধ আশা করি।
সায়েম : আপনাকে ধন্যবাদ।
জিএম ফুডের সংজ্ঞা-----
Click This Link
জিএম ফুডের ক্ষতেকর দিক নিয়ে কিছু লেখা--
http://www.newagebd.com/2009/oct/10/nat.html
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।