আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপ্রাসঙ্গিক ভাবনাগুলো-১

এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি

অনেক দিন পর, অথচ কয়েকদিন আগেও বলেছি, মনে হল কথা বললাম তোমার সাথে। তুমি বদলে গেছ, হয়তো যাচ্ছ, যেমন বদলে যাচ্ছি আমি, এই ব্যস্ত পৃথিবীতে আমরা সবাই বদলে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত, যদিও সেটা কোন শুভ দিকে নয়। এতগুলো দিন দূরে ছিলে আমার কাছ থেকে, কোথায় ছিলে আমি জানি, আমি নিষেধ করিনি তোমাকে, কারণ আমি পারিনি তোমাকে ওই নির্জনে নিয়ে যেতে, আমি পারিনি আমার অনেক অক্ষমতার জন্যে, যেই অক্ষমতা আমাকে নিষ্ঠুরভাবে পুড়িয়ে মারছে প্রতিটি নিঃসঙ্গ রাত্রির হিমেল হাওয়াতে, যদিও আমি জানি, একসময় থাকবে না এইসব অর্থহীন কামনা, এইসব চাওয়া-পাওয়া আর না-পাওয়ার নিম্নশ্রেণীর আবেগ, থাকবে না আমার অক্ষমতা এবং তোমার অসামান্য ভালবাসার সামান্য চাহিদা। আমি তোমাকে যতটুকু দিয়েছি ততটুকুতে সুখ নেই, বরং তার সম্পূর্ণটা জুড়েই রয়েছে সীমাহীন যাতনা আর ভাবালুতা, রয়েছে মারাত্নক স্নায়ুচাপ, রয়েছে অসংখ্য নির্ঘুম রাত, রয়েছে লজ্জ্বা আর ভয়, রয়েছে আরও অনেক কিছু, যার নাম আমি জানি না, যা শুধু আমি আর তুমিই করেছি এই মহাবিশ্বে প্রথমবারের মতো, তাই নাম দেয়া হয়নি এই অনুভূতির, এর খোঁজ পায়নি কোন ব্যকরণবিদ বা কবি, তাই এখনও আমাদের ওই অনুভূতি রয়ে গেছে উপমাহীন। কী বলবো ওই অনুভূতিকে বলো? আমাদের-অনুভূতি বলবো? যা শুধু আমাদের একার সম্পদ? আমরা ছাড়া আর কেউ জানেইনি এমন কোন অনুভূতি আছে যা হৃদয়ের গভীরতম গোপন স্থান থেকে নিমেষে তুলে আনে বিদ্যুতের মতো দ্রুত স্পন্দন, যা কাম নয়, এর চেয়ে আলাদা; যা প্রেম নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু, যা মানবিকতার উর্ধ্বে, যা সমস্ত সৃষ্টির চেয়েও মর্মান্তিক অথচ অনিন্দ্য, যা পীযূষ নয়, এর চেয়েও উৎর্কষ্ট কোন সুধা, যা অমৃত অথচ আমরা দীর্ঘকাল মরে ছিলাম ওই স্বাদ গ্রহণ করে- আমাদের-অনুভূতি শুধুই আমাদের।

আমি তাই চেয়েও নিষেধ করতে পারিনি তোমাকে, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার অক্ষমতা এবং আরও অনেক হাস্যকর সামাজিক নিয়ম, তুমি আসার আগে আমি আমার জীবনে যাদের কখনোই অনুমোদন করিনি। তুমি গিয়েছ তাই, দেখেছ নিজের মতো পৃথিবীটাকে, উপভোগ করার চেষ্টা করেছ, নিজের সাথে লড়াই করেছ প্রতিনিয়ত একটু সুখী হতে, কিন্তু তুমি পারনি। আমি জানতাম তুমি পারবে না আমাকে ছাড়া সুখী হতে, আমি তাই তোমায় বাধা দেইনি, বুঝতে দিয়েছিলাম পৃথিবীটাকে নিজের মতো করে, তুমি চেষ্টা করেছ, হয়তো বুঝেছও, কিন্তু তুমি ফিরে এসেছ আমার কাছে আবার। আমি বিশ্বাস করতাম ওই দিনগুলোতে তুমি ফিরবে, কিন্তু কল্পনা করতাম না এতটা বিষণ্নতা নিয়ে ফিরবে। তাই মনে হল তুমি বদলে গেছ, মনে হল কয়েক লক্ষ বছর তোমার সঙ্গে আমার কথা হয় না, মনে হল তোমার ওই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠটা একবার মাত্র শোনার জন্যে আমি আবার উন্মাদ হয়ে উঠতে পারি, কারণ আমি চাইনি তোমার এই বিষণ্ন কণ্ঠ যা আমার শ্বাস রুদ্ধ করে দিচ্ছে।

নির্জনতা মানুষকে বিষণ্নতা আর স্মৃতিভারাতুরতা ছাড়া আর কিছুই দেয় না, তুমি নির্জনে গিয়ে তাই বিষণ্ন হয়ে ফিরেছ এবং আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার তোমাকে। বিষণ্ণতা সংক্রামক, আমিও আজ তাই তোমার সাথে কথা বলে গভীর হতাশায় ভুগছি, অথচ তুমি যাওয়ার আগেও আমি তোমার জীয়ন জলের মতো কণ্ঠ শুনে বেঁচে উঠতাম বারবার। সত্যিই কি বদলে গেছি আমরা, দু'জনেই, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে? একটি জীবিত মানুষ এক মূহুর্তের ব্যবধানে চলে যেতে পারে নৈঃশব্দের জগতে, তাই আমাদের কয়েকদিনে এতটা বদলে যাওয়া হয়তো খুবই স্বাভাবিক, খুবই সাধারণ। বদলে যাচ্ছে সবাই, এটা আমাদের-অনুভূতির মতো শুধু আমাদের সম্পদ নয়, এটি সর্বজনীন, এবং প্রাকৃতিক; তাই সবাই বদলাচ্ছে। বদলানো আমাদের নিয়তি, যেমন নিয়তি আমাদের মৃত্যু।

তবু আমি মরতে চাই না, আমি অনন্তকাল বাঁচতে চাই তোমার সাথে, বিষণ্নতায় ডুবে নয়, আমাদের-অনুভূতি অনুভব করে, আমি বাঁচতে চাই আবারও তোমার মাদকতাময় চুলের সুঘ্রাণ নিতে, আমি অনুভব করতে চাই তোমার ওই উচ্ছ্বল রূপ-রস-গন্ধ, আমি বদলে দিতে চাই এই অমোঘ নিয়তিকে, যদিও সম্ভব নয়, তবু আমি চাই। আমি বদলাতে চাই এই নিয়তিকে এবং বদলাতে চাইনা আমাদেরকে। আমি আমাদের স্বর্ণীল সেই সময়ের আনন্দটুকু নিয়ে বাঁচতে চাই অনন্তকাল। আমি তোমার হাত ধরে হাঁটতে চাই এই পৃথিবীর সব প্রান্তর অসংখ্য জোৎস্না রাত ধরে, আমি বালুকাবেলায় সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে তোমাকে গভীর ভালবাসায় উষ্ণ করতে চাই, আমি তোমার দেহসৌষ্ঠব উপভোগ করতে চাই আরও অন্তত কয়েক কোটি বছর। কিন্তু আমি পারব না এসবের কোন কিছু্ই, যেমন পারিনি সহস্র কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে তোমাকে এতটুকু নির্জনতার খোঁজ দিতে।

পারব না বদলাতে নিয়তি, তাই অন্তত বদলে দিতে চাই না নিজেদের। তুমি বদলে যেওনা প্রিয়তমেষু, এই গাম্ভীর্য তোমার শোভা নয়, শোক; এই নীরবতা তোমার অলংকার নয়, বন্দীশালার শেকল। এসব ছুঁড়ে ফেল দূরে, মহাকালের আবর্জনাস্তূপে, তুমি হয়ে ওঠ আগের তুমি এবং যে কয়টা দিন আমরা বাঁচতে পারি, যে কয়টা নিঃশ্বাস আমরা গ্রহণ করতে পারি, এসো আমাদের মতো আমরা বাঁচি, আমাদের মতো করে নিঃশ্বাস নেই। আমরা যেন বদলে না যাই এই বিপরীত স্রোতে ভাসা পৃথিবীতে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।