আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা- হৃদয়ে দোলা দেয়া অহংকার

কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..

ফিল্মের পোকা হিসেবে কিছুতেই "চিলড্রেন ফিল্ম ফেস্টিভাল" থেকে দুরে থাকতে পারলাম না। অবশেষে আজ দুপুরে ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে ঘুরে এলাম শিশু একাডেমীর জিয়াউর রহমান মিলনায়তনের প্রদর্শনীকেন্দ্র হতে। সেখানে ছোট দৈর্ঘ্যের বেশ কয়েকটা শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখলাম। সেখানেই আজ বাংলার প্রতি আমাদের অনুভুতির ক্ষানিকটা টের পেলাম। আমি যখন পৌছুলাম ততক্ষনে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে গেছে।

হঠাৎ আলো হতে গিয়ে মিলনায়তনের ভেতরে কিচ্ছু ঠাহর করতে পারলামনা। প্রজেক্টরের সাদা পর্দায় চলমান ছবির ক্ষানিকটা আলো ছাড়া আর সব আন্ধার। হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষন। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের আলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম, মিলনায়তনের ভেতরটা পরিচিত হওয়ায় ঐ আলো কোন কাজে না আসলেও আন্দাজে এগুলাম কয়েক ধাপ। সিটে বসার সময় ভাবছিলাম, কার না আবার কোলে বসে যাই? হে...হে...।

একটার পর একটা ছোট্ট ছোট্ট শিশুতোষ চলচ্চিত্র উপভোগ করতে লাগলাম। প্রথমটা খুব সম্ভব জার্মান কিংবা অস্ট্রিয়ার ছিল। তার আগেও একটা বিদেশি চলচ্চিত্র দেখানো হয়ে গেছে। এরপরও আরেকটা বিদেশি চলচ্চিত্র দেখানো হল। মিলনায়তনে দর্শকে হাউস ফুল না হলেও কয়েকটা বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং ডেলিগেট-ভলান্টিয়ার মিলে অর্ধেক সংখ্যক চেয়ার ভরা ছিল।

এতক্ষন আমরা সবাই বুঝে না বুঝে প্রতিক্রিয়াহীন ভাবেই পর্দার ভিন্ন ভাষার চলমান ছবিগুলো উপভোগ করছিলাম। তৃতীয় চলচ্চিত্রটা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হল আরেকটা। অনেকটা বিতৃষ্ণা কিংবা নিরবে কেষ্টর অয়েল গেলার মত করে দর্শকরা বসে আছে। পর্দায় সূচনামূলক অক্ষর আসতে শুরু হল। অক্ষরগুলো দর্শকদের খুবই পরিচিত ছিল।

এ অক্ষরগুলো তাদের এতই পরিচিত যে, তা দেখলেই দর্শকদের হৃদয়ে কাঁপন উঠে। অনেকক্ষন বিদেশী ভাষা শুনে দেখে হয়রান এই আমরা বাংলা শিশুতোষ চলচ্চিত্রের নাম "দ্যা টেনিস বল" পর্দায় দেখতে পেয়ে সাথে সাথে আমরা আমাদের হৃদয়ের উষ্ণ ঝড়ের আবেগটুকুর ক্ষানিকটা প্রায় মিনিটক্ষানেক ধরে হাততালির মাধ্যমে প্রকাশ করতে লাগলাম। তারপর ১৫ মিনিটের চলচ্চিত্রের আকর্ষনীয় সংলাপগুলোর প্রত্যেকটির জবাব মুহুর্মমুহু হাততালি আর গুণ্জ্ঞন দিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলল প্রায় সারাক্ষনই। টানটান উত্তেজনা নিয়ে সুবিধাবণ্চিত একটি শিশুর সামান্য একটা টেনিস বল পাওয়ার আগ্রহ এবং সেইসাথে ক্রিকেটার হওয়ার বাসনার সাথে যেন মিশে গেলাম একসাথে আমরা সবাই। অবশেষে যখন বিপদজনকভাবে খোলা ম্যনহোলের ভেতর হতে দরিদ্র সেই শিশুটি টেনিস বলটা নিয়ে বেরিয়ে এল, তখন যেন আমাদের উচ্ছাস আর ভেতরে থাকতেই চাইলনা।

হাততালির বন্যা বয়ে গেল। উচ্ছসিত চিৎকারও শুনলাম। আর আমি ইত্তেজনা সামলাতে না পেরে আমি বেরিয়েই গেলাম, মনে হল বাংলায় আমি যত আনন্দ পেয়েছি সেই আনন্দ অন্য কোন ভাষার চলচিত্রে পাব না, তাই আর মিলনায়তনে থাকারও প্রয়োজন বোধ করলাম না। যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা অন্য কোন বাংলাভাষীকে দেখে যে আনন্দ পান তা মুখে বলে কিংবা লিখে প্রকাশ করা তাঁদের জন্য মাঝে মাঝে কঠিন হয়ে পড়ে। তারা আবেগ আপ্লুত হয়ে যান সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে।

এই আবেগের ভেতরটা ক্ষানিকটা আজ আন্দাজ করতে পারলাম আমি। সত্যিই যে ভাষায় আমরা কথা বলি, আনমনে যে ভাষায় গুনগুন করে গান গেয়ে উঠি, যে ভাষায় আমরা ভাবনা চিন্তা করি সেই ভাষা, প্রিয় বাংলা ভাষা আমাদের আত্নার সাথে মিশে আছে। সালাম জানাই সেই মহান শহীদদের প্রতি যারা তাঁদের নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন বাংলার জন্যে। স্থুল বুদ্ধিতে সেই আত্নত্যাগের মাহাত্ন উপলব্ধিতে না এলেও বিশেষ মুহুর্তে ঠিকই তা বোধের সীমায় পৌছায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এগিয়ে যাক আরো সামনে।

আমাদের সাহিত্য যত ধনবান হবে ততই এর প্রতি ভিনদেশের মানুষের আগ্রহ তৈরী হবে। আমরা যদি আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ভালবাসাগুলো প্রকাশ করে এর সম্পদ বৃদ্ধিতে চেষ্টা করি, তবেই হয়ত সবচে ঝংকারময় এই ভাষা একদিন সারাবিশ্বের মানুষের সাহিত্য চর্চার জন্য অন্যতম একটি ভাষায় পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।