আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বন্ধু হিসু...



কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জোয়ার চলছিল তখন, সেই জোয়ারে পা থেকে মাথা সব ভাসিয়ে আমিও চললাম সিলেট। ২০০১ এর মে মাসের কথা বলছি। ক্যাডেট কলেজে ছয় বছর থাকায় বাবা-মা ছেড়ে বা বাসার বাইরে থাকাটা যে আসলে আনন্দের সেটা বুঝতে বাকী ছিলনা, বরং আজিজুল হাকিম আর জাহিদ হাসান এর কল্যাণে জিন্স, কেডস পড়ে ফুল বাগানে বসে থাকা আর বাদাম খাওয়াকেই ভার্সিটি মনে করে রঙ্গীন থুক্কু সাদা কালো স্বপ্ন (স্বপ্নে নাকি কোনো রং দেখা যায়না) দেখা শুরূ করেছিলাম। একটাই সমস্যা, কোনো পরিচিত নাই, তার চেয়েও বড় সমস্যা কিভাবে কিভাবে যেন একজন যোগাযোগ করে পরিচিত হয়ে উঠলো, মোটা ফ্রেমের চশমা আর সব সিরিয়াস বিষয়ে তার আলাপ, ভর্তির আগেই সে আমার সাথে প্রসেসরের সার্কিট আর বাংলাদেশ রেলওয়ের ফাইবার অপটিক নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা শেয়ার করছিল, আমিও বিজ্ঞ্রের মত হু হা করছিলাম। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ওর থেকে শত হাত দূরে থাকতে হবে, কিন্তু হায় মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক, সেদিনের সেই মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া আর সিরিয়াস বিষয়ে আলাপ করা ছেলেটাই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে উঠলো।

লিখা শুরূ করছিলাম ভার্সিটির প্রথম দিন নিয়ে লিখব ভেবে, কিন্তু তা মনে হয় আর হয়ে উঠবেনা, আসলে ওই বন্ধুটিকে নিয়ে আমাদের আড্ডা শুরূ হলে আমরা অন্য কোনো টপিকে যেমন যেতে পারতামনা তেমনি এখন দেখছি লিখায়ও সে চলে আসলে অন্য কোনো টপিকে যেতে পারছিনা। এখানেই তার সার্থকতা, তাহলে আজকের পোষ্টটা ওকে নিয়েই হোক। ওর একটা নাম দেয়া যাক, আমরা ওকে আদর করে হিসু ডামতাম, এটা অবশ্য ওর আসল নাম নয়, ওর আসল নাম নিয়েও এক কাহিনী, বিশাল রেল লাইন এর মত নাম আর সেটা আমাদের সে পুরোটাই লিখতে বাধ্য করত, এই ব্যাপারে সে পুরোপুরি আপোষহীন। যাই হোক দূর থেকে আতেঁল মনে হলেও আসলে কিন্তু সে তা নয় (এটা অবশ্য অনেকে মনে হয় মানবেনা), শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে সে শেষের দিকে একটা প্রেমও করে ফেলে, অবশ্য সে যে প্রেমে পড়েছে এটা আমদের তাকে বুঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল, প্রথমদিকে সে বুঝতেই চাইতোনা অন্য ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়ে শুধু তার কাছেই কম্পিউটার এর সাহায্য চাওয়ার ভিন্ন মানে আছে। এমনি সহজ সরল আর সাদাসিধে আমার বন্ধু হিসু।

হিসু নিজে না খেললেও খেলাধুলার যেকোন ইভেন্টেই সে হাযির, হয়তো হাতে কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স এর কোন জটিল বই। আমাদের ফুটবল টীমের ম্যানেজারের হিসেবে ম্যানইউর ওই ফাগুর চেয়ে সে কোন অংশে কম ছিলনা। ম্যানইউর স্যালারি ওর কাছে ভাল মানে হয়নি বলেই এখনো ফাগুর চাকরী আছে। শুধু খেলাধুলা না, ডিপার্টমেন্টের যেকোন আয়োজনে সে সবার আগে, আমরা অনেকেই স্টেজে উঠে চেহারা দেখাব, চাপাবাজি করব হয়তো একারনে থাকতাম, কিন্তু ও আসলেই ভাললাগা ভালবাসা থেকেই থাকতো, যেকোন অন্যায় এর বিরূদ্ধে আর সব ভাল কাজে তাকে পাশে পেয়েছি সব সময়। তাইতো আমার বন্ধু হিসু আসলেই স্পেশাল।

তবে বেচারার বোধ হয় সিজিপিএ আরেকটু ভাল হত, যদি পরীক্ষার আগের রাতে আমাদের পড়াতে না হত কিংবা হূমায়ন আহমেদ এর শাওনকে বিয়ে করাটা উচিত হল কিনা এই জাতিয় সমস্যাকে যদি আমরা কম গুরূত্ব দিতাম। মেসে আমার নাম ই হয়ে গিয়েছিল এভিল এলিমেন্ট, এই জাতিয় গুরূতর সমস্যা নিয়ে পরীক্ষার আগের রাতে আলোচনা করার জন্য। যাই হোক হিসুর গুণকীর্তন করার জন্য এই পোষ্ট না, ওর কিছু বিশেষ ঘটনা দেশ ও জাতিকে জানিয়ে আশ্বস্ত করা, আইনস্টাইন কেবল পশ্চিমে জম্মায়না, এই দেশেও জম্মায়। হিসু মাঝে মাঝেই কনফিউশনে থাকতো সে দুপুরের বা রাতের খাবার খেয়েছে কিনা, বিকেল চারটা বা রাতে চারটা বাজে সে আমাদের কাছে জানতে চাইতো সে খেয়েছে কিনা, শেষে আমরা ওকে বুদ্ধি দিলাম রান্না ঘরের পাতিলে যদি দেখে এক জনের খাওয়া বাকী তবে বুঝবে সে খায়নি, যদি না থাকে তবে বুঝতে হবে সে খেয়েছে, এরকম সহজ এলগরিদম জানতে পেরে তার সেই শিশুসুলভ দাঁত বের করা হাসি, একটু বোকা বোকা। তার ভাত খাওয়ার একটা স্পেশাল স্টাইল আছে, চট্টগ্রামের লোকজন যেভাবে চা তে বিস্কিট ভিজিয়ে খায় তেমনি সে ভাত প্লেল্টের এক পাশে রাখা ঝোলে ভিজিয়ে খায়, এতে যে সময়টা বাঁচে সেই সময়ে সে পেপার পড়ার সূযোগ পায়।

সময়ের একটা দাম আছেনা! আর এক দিনের কথা বলি, সে ঘুম থেকে উঠে ভাত খাবে, কিন্তু রান্নাঘরে অন্ধকার, সে লাইট জ্বালাতে গেল, তখন লোডশেডিং, বেচারা হন্তদন্ত হয়ে মোমবাতি জ্বালানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো, এদিকে মোমবাতি পাচ্ছিলনা। সে দোকানে গিয়ে মোমবাতি কিনতে যাচ্ছিল, বেচারাকে দেখে মায়া হল, বললাম দোস্ত রান্নাঘরের জানালাটা খুলে দে। তারপর তার সে কি হাসি, যেন আমি এই মাত্র নতুন একটা থিওরী বের করলাম। সবে মাত্র হিসু কাহিনী শুরূ করলাম, টাইপ করতে করতে মনে হচ্ছে এই কাহিনী এক পর্বে শেষ করলে হিসুর প্রতিভার প্রতি অবিচার করা হবে, তাই ইহা ধারাবাহিক ভাবে লিখিবার আশা রাখিয়া আজ এখানেই শেষ করিলাম। সবাই আমার বন্ধু হিসুর জন্য দোয়া করবেন যেন সে এরকম ঘটনা আরো ঘটাইয়া আমাদের এভাবে আরো লেখার সূযোগ করে দেয়।

ভালো থাকবেন সবাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.