বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d
আমি মাঝে মাঝে একটু নষ্টালজিয়ায় ভুগি। তাই স্বভাববশতঃ পুরনো পাতা গুলো উল্টাই। খুঁজে খুঁজে দেখি আমার অতীত। অতীতের বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো।
আর তাই ফিকে হয়ে আসা সম্পর্কগুলো ঝকঝকে করতে মাঝে মাঝে অভিযান চালাই পুরনো বন্ধুবান্ধবের খোঁজে।
স্কুলজীবনের দশটি বছরের বন্ধুরাই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ বন্ধু। যেহেতু সময়টা দীর্ঘ। একটা ভালবাসা জন্মে যায়। কলেজ বা ভার্সিটি খুব সংক্ষিপ্ত সময় বলে মনে হয় তবে প্রগাঢ় বন্ধুত্বটা হয়ে উঠে না।
ঠিক তেমনি প্রায় ১৮/২০ বছর আগে শেষ দেখা হওয়া এমনই এক বন্ধু "নাহিদ"। পুরো নাম, মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন। আমাদের এসএসসি ব্যাচের সর্বোচ্চ প্রাপ্ত মার্ক ছিল তার। একটু চুপচাপ, শান্ত, আর মেধাবী। ওর সাথে সম্পর্কটা খুব ভালো ছিল আমার।
কিন্তু এসএসসির পর থেকে দজনেই দুরে। হালকা খোঁজ থাকলেও বিভিন্ন কারণে আর দেখা হয়ে উঠেনি। জীবিকার প্রয়োজনে সবাই ঢাকাতেই। শুনেছি সেও ঢাকাতেই থাকে। কিন্তু খুঁজে বের করা আর হয়ে উঠেনি।
হয়ত, নিজের অলসতার কারণে অথবা পরে দেখা যাবে, সময়তো আরো আছে, এই ভেবে।
কিন্তু ওর সময় যে শেষ হয়ে গেছে সবার অজান্তে, সেটা তো আমরা কেউ বুঝিনি। পেট্রোবাংলায় এসিটেন্ট ডিরেক্টর পদে চাকুরী করত। অফিসে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত ল্যাব এইডে নেয়া হয়। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে সেখানে অপারেশন করা হয়।
দীর্ঘ ৭২ ঘন্টা অচেতন থেকে মৃতুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আর ফিরে আসেনি। তলিয়ে গেছে অতল ঘুমে গত পরশুদিন রাতে। রাত আর ভোর হয়নি ওর।
একটা রি-ইউনিয়নের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু বিভিন্ন জন, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ভাবে ব্যাস্ত।
তাই হয়ে উঠছিল না। কিন্তু কোন নোটিশ ছাড়াই সবাই একত্রিত হলো। সেই স্কুলজীবনের বন্ধুদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা হয়েছিল ল্যাবএইড চত্বরে গতকাল। কিন্তু এই মিলনমেলায় কোন হাসি ছিল না, ছিল কান্না আর দীর্ঘশ্বাস।
ল্যাবএইড চত্বরের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল ওর বাবা-মা, সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর আর বন্ধু-বান্ধবের কান্নায়।
মেহেদী রাঙা অঙ্গে বিধবাবসন কিভাবে মানাবে? সন্তানহারা মা কিভাবে তার মনকে প্রবোধ দিবে? বয়স্ক বাবার কাঁধে সন্তানের কফিন কিভাবে উঠবে? এ প্রশ্নগুলো ঘুরে ফিরে আমাদের সবার বুককে ভারি করে দিচ্ছিলো।
মনটা খুবই বিষন্ন। কিছুই ভালো লাগছে না। দুঃস্বপ্নে ঘুম হয়নি গতকাল। কিন্তু আমাদের সবাইকে জাগিয়ে রেখে নাহিদ তো ঠিকই শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।
আর কিছুই করার নেই এখন। দোয়া করি, ও যেন বেহেশতবাসী হয়। ওর শোকে মুহ্যমান পরিবার যেন এ শোক কাটিয়ে উঠতে পারে। আর কোন বন্ধু যেন এমন অসময়ে চলে না যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।