দ্বৈরথ
কাল রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। টুপ-টাপ করে। শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে কোন মাতাল পিয়ানোবাদক বাজিয়েই চলেছে খাপছাড়া। সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে। রাস্তায় বের হতেই দমকা বাতাস চুলে আঙুল বুলিয়ে এলোমেলো করে দেয়।
আমি বৃষ্টির সিম্ফনীতে মগ্ন হয়ে জমে ওঠা অন্ধকারে হেঁটে যাই। নির্জন রাস্তায় একটা-দুটো চেরী ফুল খসে পড়ে। নিষ্ঠুরের মত আমি সেগুলোর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে থাকি। কোন উদ্দেশ্য নেই, বাড়ি ফেরবার কোন তাড়া নেই, নিজের ভেতরে বাস করা অন্তহীন শূন্যতাটাকে জোর করে চাপা দেবার জন্য আমি উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকি। অনেকগুলো মুহুর্ত কেটে যায়।
প্রথম তারুণ্যে প্রত্যাখ্যানের তিক্ত স্বাদ পাইয়ে দেয়া তরুণীটির টেক্সট মেসেজের বিপ বিপ শব্দে ভেঙে যায় মগ্নতা। এলসিডি স্ক্রীনের পান্ডুর আলোয় ফুটে ওঠে, তুমি কি জানো আমি কখনও মা হতে পারব না? ওর অপ্রাপ্তির বেদনামাখা দীর্ঘশ্বাসটুকু আমাকে জড়িয়ে জড়িয়ে কুন্ডলীর মত উঠতে থাকে, আমার সমস্ত অস্তিত্বকে আচ্ছন্ন করে দিতে চায়। প্রতিশোধের আনন্দে আমার খুশী হবার কথা। তার বদলে খুব, খুব অচেনা একটা কষ্ট তার নখ-দাঁত বসিয়ে দিতে থাকে। পরিশ্রান্ত ভঙ্গীতে আমি একটা পুরনো লোহার বেন্চিতে বসে পড়ি।
টিপ টিপ বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জল আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে নামে। দশ বছর আগে ওর নরম আর দুষ্টু আঙুলগুলো যেখানটায় ছুঁয়ে দিত সেখানটায় একই অনুভূতি ফুটে ওঠে। রাস্তাটার দুপাশে গজিয়ে ওঠা পাইন গাছগুলোর অগোছালো পাতা ছুঁয়ে আসা ঝড়ো বাতাস আমাকে এলোমেলো করে দেয়। বার্চের ফাঁক-ফোঁকরে জমে ওঠা অন্ধকার মনে জমে ওঠা গহীন আঁধারকে মূর্ত রূপ দেবার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় আকুল হয়ে কাঁদে। শেষ অব্দি, সবকিছু পেছনে ফেলে দৃড় পায়ে আমি হেঁটে যাই অন্ধকারতর ভবিষ্যতের পানে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।