আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাকিস্তান চায়নি, অখণ্ড ভারতবর্ষ চেয়েছিল মওদুদীর জামায়াত

বৃটিশ ভারতের আশ্রাফী মুসলমানরা জন্ম দিলেন অলইন্ডিয়া মুসলিম লীগ। নিপীড়িত বাঙালি মুসলমানের সংগ্রামী অর্জন সেদিন ধর্মের নামে উত্তর ভারতের আস্রাফী মুসলমান জমিদার শ্রেণীর হাতে চলে গিয়েছিল। এদিকে মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, অখন্ড বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলু্ল হক ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক লাহোর সম্মেলনে ভারতের পুর্বাঞ্চলে নিপীড়িত বাঙালিদের জন্য পৃথক আবাসভুমি প্রতিষ্ঠার দাবী করলেন। এতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সাথে উত্তর ভারতের মুসলিম লীগ নেতা মুহম্মদ আলী জিন্নার বিরোধ দেখা দিলো। শেরে বাংলা বিকল্প হিসেবে বাংলার কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কৃষক-শ্রমিক পার্টি গঠন করলেন।

মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধী বাঙালির আলাদা রাষ্ট্র মেনে নিলেন না। এদিকে হিন্দুস্থানের আশ্রাফী মুসলমানরা নিজেদের কায়েমী স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার দাবী ঊঠালেন। এদের আদর্শ নেতা মওলানা মউদুদী লাহোর প্রস্তাবের পরপরই ভারতের ভুপালে নিজ বাসভূমে বসে ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন জামাত-ই-ইসলামী-হিন্দ। এ পার্টি ১৯৪৭ সালে অখন্ড ভারতের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছে। এদিকে পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর পাকিস্তানী আশ্রাফী শাসকরা বাঙালি মুসলমানের উপর যে নিপীড়ন চালায় তাতে মাত্র ২৩ বছরের মাথায় বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষরা মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন।

মওলানা ভাসানী ১৯৬৮সালের ৬ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক ঘেরাও আন্দোলনের ঘোষনা দিলেন। এ আন্দোলন ১৯৬৯ সালে গনঅভ্যুত্থানে রুপ নিলো। তিনি জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের প্রধান শ্লোহান “জ্বালো জ্বালো-আগুন জ্বালো”- এ শ্লোগান নিজ কণ্ঠে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “জুলুমের বিরুদ্ধে আত্মচেতনা প্রজ্জ্বলিত কর, জাতীয় চেতনা সংগঠিত কর”। আইয়ুব শাহীর জুলুমের বিরুদ্ধে তীব্র গনলড়াই শুরু করায় সারা দুনিয়ায় মওলানা ভাসানী পরিচিত হলেন আগুনের নবী-ফায়ার ইটার মওলানা হিসেবে।

এ মহান নেতা তার প্রিয় শেখ মুজিবকে তথাকথিত আগরতলা মামলা ঘোষিত ফাঁসীর হুকুম থেকে মুক্ত করে আনলেন। এ লড়াই ছিল মজলুম বাঙালিরর লড়াই। এ লড়াই ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের লড়াই। বাঙালি জাতি ভাসানী-মুজিব জুটিকে পিতা-পুত্রের জুটির মত মেনেছে এবং বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানীদের নৃশংসতা ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে এদের পিছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা জানবাজী যুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছিলাম। আমাদের অগ্রজরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, আর্য-হানাদার আর পাক-হানাদাররা একই রক্তধারাজাত-ভ্রাতা।

এক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করি। এ ইতিহাস যারা মুছে দিতে চায় তারা কারা? দুঃখের বিষয় এই যে, এবারও এ অখন্ড ভারতপন্থী জামাত-ই-ইসলামীরা বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে চলে যায়। এরা মুসলিম উম্মার বিশ্ব আন্দোলনের নামে বাঙালির জাতি-রাষ্ট্রটির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের জেনারেশন হিসেবে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এ চেতনা ধর্মীয় চেতনার ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের বিপরীত চেতনা।

উপমহাদেশের ধর্ম-শাসিত রাষ্ট্সমুহ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র চায় না। এ রাষ্ট্র সমুহের নেতারা একমত হয়ে দ্বিত্ত্ববাদের আদি তরবারী দিয়ে আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে প্রথমে আমাদেরকে দিয়েই দ্বিধাবিভক্ত করলেন। আমরা দ্বিধাবিভক্ত হলাম। কেহ বাঙালি হলাম, আর কেহ হলাম বাংলাদেশী। আমাদের জাতীয় চেতনাবোধ বিভক্ত হয়ে গেলো।

এর ভিত্তিতে এখন দেশের ৯০ভাগ মুসলমানের সাথে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে প্রতিযোগী করে তোলা হলো। বলে রাখা ভালো আওয়ামি লীগ বা এর সহযোগী কোন দল বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিশ্বাস করেন না। এ দলগুলু ক্ষমতা পাবার জন্য দলবাজি করেন মাত্র। তা না হলে ১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে ঘোষিত রাজনৈতিক দল নীতি (পি পি আর) অনুযায়ী এরা “বাঙালী জাতীয়তাবাদ”কে বনবাসে পাঠাতেন না। খুঁজে দেখুন ১৯৭৬ সাল থেকে বিগত ৩৫ বছর ধরে এসব দলগুলুর মেনিফেস্টোতে “বাঙালি জাতীয়বাদ” প্রত্যয়টি নেই।

বাংলাদেশের ক্ষমতাকাংখী এসব দলগুলুর বন্ধু রাষ্ট্রসমুহ বাঙালি জাতীয়তাবাদ চায় না। দক্ষিন এশিয়ার ধর্ম-শাসিত দেশগুলুর ক্ষমতাবানরা এথনিক জাতি জাগরনকে নিজেদের রাষ্ট্র-স্বত্তার অস্থিত্ব বিনাশী জাগরন হিসেবে দেখেন। এদেশগুলু এ কারনে বাঙালী জাতির যুগ যুগ ধরে লালিত অসাম্প্রদায়িক চেতনা ব রদাস্ত ক রেন না। এ চেতনার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এরা ধর্মীয় রাষ্ট্র বানাতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা জামাত-ই-ইসলাম-বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ বাঙালি মুসলমানের প্রতিপাদ্য ধর্ম বিশ্বাসের পাঠকে (Text) এরা প্রতিযোগী পাঠ হিসেবে প্স্থাপন করছে। এর ভিত্তিতে এরা ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ধর্ম বিশ্বাসকে রাজনৈতিক বিরোধের দিকে (Contest) দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটা বাঙালি জাতির হাজার বছরের লড়াইয়ের চেতনাকে বিনাশ করার এক মহা অপচেষ্টা। এ একটি মাত্র কারনেই আমরা মনে করি বাঙালি জাতির লড়াই শেষ হয়নি এবং বাঙালনামা লেখার কাজও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। জয় বাংলা-জয় বাংলাদেশ।

এটা একটা কপি/পেস্ট পোস্ট। মূল পোস্ট এখানে : Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.