আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রশিবিরের প্রতিক্রিয়াশীল সমালোচনা আর ঘৃনা দিয়ে সত্যি কি কিছু হবে?



বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামাত শিবির চরম বিতর্কিত একটি দল। আমদের স্বাধীনতা যুদ্ধের রাজনৈতিক বিরোধিতা, পাকিস্তানী হানাদারদের কোলাবরেট করা এবং হত্যা, খুন, ধর্ষন সহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে যুক্তথাকায় সীমাহীন ঘৃনা আর লাঞ্ছনা জোটে এই দলটির কপালে। ব্লগে এই ঘৃনাবোধ আমাদের গড়পড়তা সমাজের চাইতে অনেক বেশি। এর বহিপ্রকাশও অনেকটা প্রচলিত রুচিবোধের সীমানার বাইরে। জামাতশিবিরের ব্যাপারে অনেকেরই অবস্থান তাদেরকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনীতি করার অধিকার না দেয়ার পক্ষে।

মানুষ হিশাবেও স্বীকার করতে আপত্তি আছে অনেকের। ব্লগার জোকার৬৬৬ এর ভাষায় এর কারন ‘আমার পক্ষে দেনা পরিশোধ সম্ভব না, কারন আমি একজন ডিষ্টার্বিং এলিমেনট । আমার পক্ষে তাদের বাক স্বাধিনতা দেয়া সম্ভব না যারা মানবতার বিরোধী, যাদের হাত রক্তে রন্জিত। আমি আমার বোনের ধর্ষনকারীর সাথে একই টেবিলে বসে কেক খেতে পারিনা। আমি সেই সুশীল হতে চাইনা যে ধর্মের নামে মানুষ খুন করার সার্টিফেকেট দেয়।

‘ খুনী, ধর্ষক আর রুক্তে রঞ্জিত মানবতা বিরোধীদের প্রতি এই ঘৃনাবোধ ঠিক আছে। কিন্তু এই ঘৃনাবোধ কি অবজেক্টিভ, নাকি সাব্জেক্টিভ? যদি অবজেক্টিভ না হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত কি এই ঘৃনাবোধ যৌক্তিক? আমরা কি সব খুনী, ধর্ষক আর রুক্তে রঞ্জিত মানবতা বিরোধীদের প্রতিই একই ঘৃনাবোধ পোষন করি নাকি আমার পছন্দের খুনী, ধর্ষক আর অপছন্দের খুনী, ধর্ষকদের মধ্যে পার্থক্য করি?আমরা কি পার্থক্য করি আওয়ামীলিগের যুদ্ধপরাধী, বিএনপির আর জামাতের যুদ্ধপরাধীদের মধ্যে? নিজের বোনের ধর্ষনকারীর সাথে একই টেবিলে বসে কেক খেতে যদি সত্যিই আমার আপত্তি থাকেই তাহলে সেঞ্চুরিয়ান মানিকের ছাত্রলীগের সাথে কেক খেতে আমার আপত্তি নাই কেন? যে ছাত্রলীগের কর্মী ধর্ষন করে সিডি বাজারজাত করে সেই ছাত্রলীগকে কেন শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দেয় না মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবিচল বিশ্বস্ত মানুষগুলো? মানুষ খুনকে যদি ঘৃনাই করি তাহলে রাজনীতির নামে মানুষ খুনকে কেন ঘৃনা করি না? হরতালের নামে যখন পরিকল্পিত ভাবে বাসে আগুন দেয় যুবলীগ , তখন চেতনা কেন ধর্মের নামে মানুষ খুন আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবাদী দলের ক্ষমতার জন্য মানুষ খুনকে সমান পরিমান ঘৃনা করে উঠতে পারে না? যুদ্ধপরাধীদের গাড়িতে পতাকা উঠলে আমাদের শরীরের প্রতিকনা রক্তবিন্দু বিদ্রোহ করে উঠে। এরশাদের সময় রাজাকার মান্নানের গাড়ীতে পতাকা উঠেছিল, হাসিনার সময়ে দালাল আইনে সাজা খাটা ফাইজুল হকের গাড়ীতে পতাকা উঠেছিল, সেই এরশাদ এখন মহাজোটের অংশীদার, হাসিনা এখন ক্ষমতায় আর চেতনা অপেক্ষায় থাকে শুধু জামাতী যুদ্ধপরাধীদের । যুদ্ধপরাধীরা জামাতী না হলে আমাদের চেতনায় আগুন জ্বলে না! চাকমা রাজার রাজাকারীর জন্য আমরা সব চাকমাকে ঘৃনা করতে শিখি নাই, চীনাপন্থি বামদের যুদ্ধপরাধের জন্য তাদের নিশিদ্ধ করার দাবী করতে শিখি নাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতার জন্য রবীন্দ্রনাথকে ঘৃনা করতে শিখি নাই, বংগভংগের বিরোধীতাকারীদের সাম্প্রদায়িক বলতে শিখি নাই, শুধু নিজামী মুজাহিদের অপরাধের জন্য শিবিরকে ঘৃনা করতে শিখেছি, তাদের সমর্থনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদকে ঘৃনা করতে শিখেছি, এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্ম পর্যন্ত ঘৃনার চাষাবাদকে প্রসারিত করতে শিখেছি মাত্র। স্বাধীনতার ৩৮ বছরে এইটুকুই আমাদের অর্জন।

তরুন প্রজন্মের একটা অংশ আজো চেতনায় রাজাকার। আমরা যুদ্ধপরাধী ভুট্টোকে দাওয়াত করে এনে লাল গালীচা সংবর্ধনা দিতে পারি, রাজনীতির কথা বলে পাকিস্তানী সেনাবাহীনীর যুদ্ধপরাধীদের ক্ষমা করে দিতে পারি, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী আমেরিকার সাথে দহরম মহরম করতে পারি,সীমান্তে মানুষ খুন করা আর পানি আটকে বাংলাদেশকে কারবালার ময়দান বানানো ভারতকে বন্দর আর ট্রানজিট দিতে পারি,মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইজারা দিতে পারি বিজ্ঞাপনের ব্যবসায়র জন্য,যুদ্ধপরাধীদের নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে এম পি বানাতে পারি সব দল থেকে, শুধু রাজনীতি নির্বিশেষে সত্যিকারের যুদ্ধপরাধীদের বিচার করে বাকিদের ক্ষমা করে দিয়ে একটি বিভক্তিহীন জাতিসত্বা তৈরি করে ঘৃনার চাষাবাদ বন্ধ করতে পারি না। এই প্রতিক্রিয়াশীল ঘৃনা দিয়ে সত্যি কি কিছু হবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.