চলার পথ অনেক, সত্য পথ একটাই
নামায আদায়ের সময় মনের অবস্থার উপর নামাযের রুহ পয়দা হওয়া নির্ভর করে । নামাযে দেহ যখন যে অবস্থায় থাকে তখন মনে যে চেতনা থাকা উচিত তা থাকলেই নামায জীবন্ত হয়।
নামায শুরু করার সময় মুখে আরবীতে নিয়ত উচ্চারণের কোন দরকার নেই। এসব নিয়ত এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেখাননি। নিয়ত মুখের কজা নয়, মনের কাজ।
তাই নামাযের উদ্দেশ্যে মন স্থির করে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করতে হয়।
আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করার সময় হাতের তালু কিবলামুখী রেখে হাত কাঁধের বরাবর যখন তোলা হয়, তখন মনে খেয়াল রাখতে হবে যে আমি আমার দুনিয়ার জীবনকে পেছনে রেখে আমার রবের দরবারে হাযির হয়েছি । এ তাকবীরকে তাকবীরে তাহরীমা বলে । অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে দুহাত নাভির নিচে (আহলি হাদীস হলে বুকের উপর ) বেঁধে দাঁড়াবার পর নামাযের বাইরের হালাল কাজও নামাযের ভেতরে হারাম হয়ে যায়। এ কারণে এর নাম তাকবীরে তাহরীমা।
হাত বেঁধে মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে বিনয়ের সাথে নিম্নরূপ হামদ সানা ও তায়াওউয পড়তে হয় :
এটুকু পড়ার সময় মনে নিম্নরূপ খেয়াল রাখতে হবে : “হে আল্লাহ ! গৌরব, প্রশংসা, বরকত ও মর্যাদা তোমারই। আমি খাঁটিভাবে আমার সমগ্র মনোযোগ তোমার প্রতিই দিলাম। ”
রাসূল (স) সূরা ফাতেহা পড়ার আগে কুরআনের নিম্ন আয়াতটুকুও পড়তেন :
কুরআনে ---------- রয়েছে। তিনি ------------------- নামাযে পড়তেন। এ আয়াতের মর্মকথা খেয়াল করলে এমন জযবা ও আবেগ সৃষ্টি হয় যা নামাযের উদ্দেশ্যে পূর্ণতা দান করে।
এ আয়াতের মর্মকথা হলো : হে আমার রব, আমার নামায, আমার কুরবানী ও যাবতীয় ইবাদত এবং আমার হায়াত ও মওত তোমারই জন্য । আমাকে তোমার নিকট সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করলাম।
বুকের বামদিকেই মানুষের কালব বা দিল। সবটুকু মনোযোগ কালবের দিকে থাকবে। মনের খুঁটিটাকে কালবের উপর মযবুত করে গেড়ে দিতে হবে।
শযতান কালব থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেবার চেষ্টা করতেই থাকবে। নামাযীকেও বারবার মনেযোগ কালবে কেন্দ্রীভূত করতে হবে। শয়তানের সাথে এ যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
এরপর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করতে হবে। হাদীসে আছে যে সূরা ফাতিহার এক এক অংশ তিলাওয়াত করার সাথে সাথে আল্লাহ এর জওয়াব দেন।
এ হাদীসের কথাগুলো এমন আবেগময় ভাষায় বলা হয়েছে যা বান্দাহর মনে গভীর দোলা দেয়। হাদীসটি নিম্নরূপ :
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেলন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাযকে আমার ও আমার বান্দাহর মধ্যে দুভাগে ভাগ করেছি। আর আমার বান্দাহ আমার নিকট যা চায় তাই পাবে। বান্দাহ যখন বলে, ‘‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ।
” তখন আল্লাহ বলেন , “ আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করল । ” যখন বান্দাহ বলে ‘আর রাহমানির রাহীম ” তখন আল্লাহ বলেন আমার বান্দাহ আমার গুণ গাইল” যখন বান্দাহ বলে “মালিকি ইয়াওমিদ্দীন ” তখন আল্লাহ বলেন “আমার বান্দাহ আমার গৌরব বর্ণনা করল”
যখন বান্দাহ “ইয়্যাকা না বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন বলে, তখন আল্লাহ বলেন “এ বিষয়টা আমার ও আমার বান্দাহর মাঝেই রইল । আর আমার বান্দাহর জন্য তাই যা সে চাইল (অর্থাৎ আমার ও আমার বান্দাহর মধ্যে এ চুক্তি হলো যে সে আমার কাছে চাইবে, আর আমি তাকে দেব)।
যখন বান্দাহ বলে “ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম সিরাতাল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ দোয়াললীন” তখন আল্লাহ বলেন এটা আমার বান্দাহর জন্যই রইল আর আমার বান্দাহর জন্য তা ই যা সে চাইল । ”
এ হাদীসে মহ্বতের এমন অগ্নিকণা রয়েছে যে, বান্দার দিলে ঈমানের বারুদ থাকলে এবং নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার সময় আল্লাহর আবেগময় কথার দিকে খেয়াল করলে আল্লাহর প্রতি ভালবাসার এমন আগুন জ্বলে উঠবে যে, জযবায় বান্দাহ নিজেকে মনিবের অতি কাছে বলে অনুভব করবে।
নামাযে সূরা ফতিহা পড়ার সময় এ হাদীসটির কথা খেয়ালে রাখলে এক একটি আয়াত পড়ার পর আল্লাহর প্রেমময় জওয়াবটা মনের কানে শুনবার জন্য বান্দাহকে থামতেই হবে। আল্লাহর জওয়াবে যে তৃপ্তি ও শান্তি তা তারাই বোধ করতে পারে, যারা আয়াতগুলো ধীরে ধীরে মজা নিয়ে পড়ে।
সূরা ফতিহা ও কেরায়াত পড়ার পর রুকুতে যখন সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম ”তাসবীহ পড়া হয় তখন আমার রব কথাটি যেন আবেগ সৃষ্টি করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বা সারা জাহানের রব। অথচ আমার রব বলা শেখানো হয়েছে যাতে রবের সাথে নৈকট্য বোধ জাগে ।
তাসবীহটির অর্থ : আমার মহান রব কত পবিত্র!
রুকু থেকে ওঠে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। এ সবটুকু পড়া অভ্যাস করল কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার ওয়াজিবটা সহজেই আদায় হয়ে যায়।
এটা পড়ার সময় মাবূদের দরবারে মাথা নত করার তাওফীক দেওয়ার জন্য শুকরিয়ার গভীর অনুভুতি বোধ করতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে থাকা অবস্থায় এমন সব দোয়া পড়তেন যাতে বিনয়ের অনুভূতিটা গভীর হয়।
এর একটি দোয়া নিম্নরূপঃ
অর্থ : হে আল্লাহ আমি তোমার জন্য রুকু দিলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম তোমার প্রতি আত্মসমর্পণ করলাম, তোমার উপর ভরসা করলাম, তুমিই আমার রব।
আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় ও শিরা- উপশিরা তোমার প্রতি একাগ্রভাবে বিনয়ী হয়েছে।
এরপর সিজদায় চরম বিনয়ের ভাব নিয়ে পড়তে হবে () আমার মর্যাদাবান রব কতই পবিত্র! রাসূল (সা) বলেছেন,,তোমরা যখন সিজদা কর তখন তোমাদের রবের সবচেয়ে কাছে পৌঁছে যাও । তখন বেশি করে দোয়া কর।
ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ । সিজদার অবস্থাটা আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত বাস্তব রূপ।
কপাল ও নাক মানুষের সবচেয়ে সম্মানজনক স্থান। মহান প্রভুর উদ্দেশ্যে কপাল ও নাক মাটিতে রেখে গোটা দেহকে সর্ম্পূণরূপে সমর্পণ করে দেওয়া হয় সিজদায়। সিজদারত অবস্থায় মনে অনুভব করবে যে আমার মহান রবের নিকট আমি ধরনা দিলাম । আমাকে যেন গোলাম হিসেবে তিনি কবুল করেন।
রাসূল (স) সিজদায় থাকাকালে বহু আবেগময় দোয়া করতেন এর একটি দোয়া নিম্নরূপঃ
অর্থ : হে আল্লাহ তোমার জন্যই সিজাদা করলাম ।
তোমারই উপর ঈমান আনলাম এবং তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। তোমারই ওপর নির্ভর করলাম, তুমি আমার প্রভু । আমার চেহারা ঐ সত্তার নিকট সিজদারত হলো যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন ও আকৃতি দান করেছেন এবং তাকে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। আল্লাহ বরকতময়। তিনিই সকল স্রষ্টার সেরা।
”
শিশু মায়ের কোলে আশ্রয় পেলে যেমন সেখানেই দীর্ঘ সময় থাকতে চায়, তেমনি সিজদায় আল্লাহর নৈকট্য বোধ হলে তাড়াতাড়ি সিজদা থেকে উঠতে মন চাইবে না। তাসবীহ ৩, ৫, ৭ যতবার খুশি পড়ার পর কুরআন ও হাদীসের দোয়াগুলো থেকে নিজের বাছাই করা দোয়া সিজদায় পড়তে পরম তৃপ্তি বোধ হয়।
সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসে পড়তে হবে : ()
এখানে সাতটি জিনিস চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থেকে কোন সময় তিনটি কোন সময় আরও বেশি পড়া যেতে পারে । এটা পড়ার অ্যভ্যাস করলে দু’সিজদার মাঝখানে কিছুণ স্থির হয়ে বসার ওয়াজিবটুকু সহজেই আদায় হয়ে যায়।
এ দোয়াটির অর্থ : হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর, আমার উপর রহম কর, আমাকে শক্তিশালী কর, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি কর, আমাকে হেদায়াত দান কর, আমাকে সুস্থ রাখ আমাকে রিয্ক দাও।
এ দোয়াটি বড়ই মূল্যবান । এত ৭টি বড় বড় নেয়ামত চাওয়া হয়েছে, যা সবারই কাম্য হওয়া উচিত ।
রাসূল (স) সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় মাটিতে হাত দিয়ে উঠতেন না। হাঁটু ও ঊরূতে হাত দিয়ে দাঁড়াতেন ।
(বৃদ্ধ লোকেরা অবশ্য মাটিতে হাতের ভর না দিয়ে উঠতে পারে না। )
এভাবে দুরাকাআত পড়তে হয়। দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহার আগে বিসমিল্লাহ পড়া উচিত । রাসূল (সা) দ্বিতীয় রাকআতে আউযুবিল্লাহ পড়তেন বলে প্রমাণিত নয়। অনেকেই বিসমিল্লাহকে সূরা ফাতিহার অংশ মনে করেন।
তাই বিসমিল্লাহ পড়াই নিরাপদ।
দু’রাকাআত পড়া হলেই বসতে হয়। দু’রাকআত বিশিষ্টি নামাযে এ বৈঠক ফরয। আর তিন বা চার রাকাআতবিশিষ্ট নামাযে দু’রাকাআতের পর বসা ওয়াজিব এবং শেষ বৈঠক ফরয ।
এখানে যা পড়তে হয় এর নাম তাশাহুদ
অর্থ : সকল সম্মানজনক সম্বোধন, বরকত ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য ।
হে নবী ! আপনার উপর শান্তি আল্লাহর রহমত ও বরকত নাযিল হোক। আমাদের উপর ও আল্লাহর নেক বান্দাহদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর দাস ও রাসূল।
আত্তাহিয়্যাতের কথাগুলো সম্পর্কে একটি চমৎকার ইতিহাস রয়েছে। রাসূল (স) মেরাজে যখন আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সুযোগ পেলেন তখন তিনি প্রথমে আল্লাহকে সম্বোধন করে বললেন :
() এর জওয়াবে আল্লাহ বলেন :
() রাসূল (স) তখন আল্লাহ থেকে পাওয়া সালাম একা গ্রহণ না করে আল্লাহর সকল নেক বান্দাহর নিকট পৌঁছাবার উদ্দেশ্যে বললেন :
() আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে সালাম বিনিময়ের পর ফেরেশতারা বলে উঠলেন :
()
মেরাজের এ মহান স্মৃতিটুকু নামাযীকে মেরাজের স্বাদ উপভোগের সুযোগ দেয়।
এখানে নামাযী আল্লাহ, রাসূল ও আল্লাহর সব নেক বান্দাহকে সালাম পৌঁছাবার সৌভাগ্য লাভ করে।
এ ঘটনাটি সহী হাদীস দ্বারা প্রমাণিত না হলেও এর ভাষা ঐ ঘটনার সাথে যেভাবে খাপ খায় তাতে ঘটনা সঠিক বলে মন সাক্ষ্য দেয় । প্রথম বাক্যের সাথে দ্বিতীয় এবং দ্বিতীয় বাক্যের সাথে তৃতীয় বাক্যের কথাগুলো ঐ ঘটনা ছাড়া খাপছাড়াই মনে হয়।
বিখ্যাত তাফসীরে কুরতুবিতে সূরা আল বাকারার শেষ আয়াতের তাফসীরে মেরাজের সাথে তাশাহহুদের সম্পর্ক ঐভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে, যেভাবে উপরে বর্ণিত হয়েছে। (দারুল ইফতার মুফতী মাওলানা আবদুল মান্নান থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে)।
তাশাহহুদের পর দরূদ এবং দরূদের পর নামাযের শেষ দোয়াটি নিম্নরূপ :
()
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার নাফসের উপর অনেক যুলম করেছি (মানে অনেক গুনাহ করেছি) তুমি ছাড়া আর কেউ তা মাফ করতে পারেনা। সুতরাং তোমার পক্ষ থেকে আমাকে মাফ কর এবং আমার উপর রহম কর । নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও মেহের বান।
নামায শেষ করার পূর্বে এ দোয়াটি ছাড়া আরও বহু দোয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় পড়তেন। সব দোয়ার মধ্যে এ দোয়াটিই প্রায় সবাই পড়ে।
এ দোয়াটি বান্দাহর জন্য বড় সম্বল। বান্দাহর তো হামেশাই গুনাহ হতে থাকে। তাই মাফ চাইতে থাকাই উচিত । মুমিন হিসেবে এক মুহুর্তেও আল্লাহকে ভুলে থাকা উচিত নয়। ভুলে থাকলেই মনে এমন সব খেয়াল আসে যা মুমিনের জন্য মোটেই সাজে না।
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে বললেন তোমরা আল্লাহকে লজ্জা কর। সবাই বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা তো লজ্জা করি। রাসূল (সা) বললেন, আল্লাহকে লজ্জা করার মানে হলো, তোমার মগজকে পাহারা দাও যেন এমন চিন্তা সেখানে না ঢুকে যা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় । তোমার পেটকে পাহারা দাও যাতে এমন খাবার সেখানে না ঢুকে যা হালাল নয়। আর মৃত্যুকে বেশি করে ইয়াদ কর।
অর্থাৎ এমন ভাবনায় সব সময় থাকতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন এবং আমার মনের খবরও তিনি রাখেন। এ অবস্থায় এমন চিন্তা আমি কেমন করে মগজে স্থান দিতে পারি যা মন্দ এবং এমন খাদ্য কেমন করে আমি খেতে পারি যা হারাম। এ লজ্জাবোধকে রাসূল (স) ঈমানের শাখা বলেছেন।
সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করার পর রাসূলুল্লাহ (স) বিভিন্ন সময় বহু দোয়া পড়তেন। এ সব দোয়ার মর্মকথা হলো মাফ চাওয়া, দয়া ভিক্ষা করা, আল্লাহর নৈকট্য কামনা করা ও সব অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
নামায শেষ হলে তিন তাসবীহ পড়ার উপর রাসূল (স) বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। একদিন রাসূল (স) হযরত মুয়ায (রা) কে তিনবার বলেন “মুয়ায তোমাকে আমি ভালবাসি। প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং ১বার () পড়তে ভুলবে না।
এ তাসবীহগুলো পড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতিটি তাসবীহই তাওহীদের ঘোষণা । কুরাআনে সুবহানাল্লাহ তাসবীহটি শিরকের প্রতিবাদেই ব্যবহার করা হয়েছে ।
যেমন : ()
আলহামদুলিল্লাহ মানে সকল প্রশংসা শুধু আল্লাহর জন্য, আর কোন সত্তা এর অধিকারী নয়। আল্লাহু আকবার তো স্পষ্টভাবেই ঘোষণা করে যে, আর কোন সত্তা এর চেয়ে বড় নয়। এভাবে এ তাসবীহগুলো তাওহীদের ঘোষণা হিসেবেই উচ্চারণ করতে হবে।
এভাবে নামায আদায় করতে পারলেই নামাযে রূহ পয়দা হবে। নামাযের আসল অর্জনই হলো নামযের রূহ।
মৃত দেহ যেমন কোন কাজের নয়, নিস্প্রাণ নামাযও আসল নামায নয়। প্রাণহীন নামাযে এর উদ্দেশ্য পূরণ হতে পারে না।
নামাযের জামায়াতে যত লোক শামিল হয় তারা সবাই একই নামায পড়ে, কেরায়াত ও তাসবীহ একই ভাষায় পড়ে, রুকু সিজাদা একইভাবে করে, কিন্তু আল্লাহ এর সওয়াব কি সবাইকে এক সমানই দেবেন? হাদীস অনুযায়ী প্রত্যেক নেক আমলের পুরস্কার ১০গুণ থেকে ৭০০ গুণ দেওয়া হবে। একই সাথে যারা নামায আদায় করে তাদের কেউ ১০ গুণ, কেউ ২০, কেউ ২০০ কেউ ৫০০ গুণ কেন পাবে? কিসের ভিত্তিতে এত পার্থক্য হবে?
নামাযের দেহ কতটুকু সুন্দর হলো, যা কিছু পড়া হয় তা কী পরিমাণ শুদ্ধ হলো, নামায আদায়ের সময় মনের অবস্থা কার কেমন ছিলো , নামাযে কার কতটা আবেগ ও আন্তরিকতা ছিলো ইত্যাদির পার্থক্যের কারণেই সওয়াব বেশ কম হবে। তাই এসব দিক দিয়ে নামাযের মানকে যাতে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
উন্নতির কোন শেষ নেই। তাই প্রচেষ্টা ও চলতেই থাকা উচিত।
ইসলাম.কম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।