কৃষ্ণকমল
দশ সন্তানের এক জননী, যিনি পরম স্নেহ ও মমতায় তাঁর ৬ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানদের লালন করেছেন। আজ তারা তাদের অবস্থানে মোটামুটি সফল।
সফল একারণেই বলছি তারা সকলেই সুশিক্ষিত (৪ পুত্র এবং ৩ কন্যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট বাঁকী ৩ কন্যাদের ১ জন SSC আর ২ জন HSC পাশ করেছেন)। চার পুত্র সকলেই চাকুরীজীবী। কন্যা সন্তানদের যারা চাকুরী করতে চেয়েছেন তারা একই সাথে গৃহিনী ও চাকুরীজীবী আর যারা চাকুরী করতে চাননি তারা শুধুই গৃহিনী।
একটি কথা উল্লেখ্য যে দশ সন্তানের প্রত্যেকেই হাইস্কুল পর্যন্ত গ্রামের স্কুলেই লেখাপড়া করেছে।
দশ সন্তানের এই জননী প্রায় ৫০ বছর আগে ২য় বা ৩য় শ্রেনী পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। সংসারের নানা কাজের ব্যস্ততার মাঝেও প্রত্যেক সন্তানের ২য় শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া তিনিই শিখিয়েছেন। আর এই দশ সন্তানের জনক ছিলেন সরকারী প্রাইমারী স্কুলের একজন হেড মাস্টার যিনি গ্রামের স্কুলে ৭ম বা ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করে গুরু ট্রেনিং নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন (১৯৮৫ সালে অবসর গ্রহন করেন)।
দশ সন্তানের এই জনক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সামান্য জমি ও তাঁর জীবনের স্বল্প উপার্জন দিয়ে সংসার চালিয়েছেন এবং কিছু জমিও কিনেছিলেন যা পরবর্তীতে বিক্রি করে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার খরচ যোগানো হয়েছিল।
সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার খরচ যোগাতে জমি বিক্রি করতে তিনি মোটেও কার্পণ্য করেননি।
এতক্ষন দশ সন্তানের যে জননী ও জনকের কথা বললাম তাঁরা আমার মা-বাবা। আমি তাঁদের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ও পুত্র। আমার বাবা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন ২০০৬ সালে। মা আমাদের মাঝে আজও বর্তমান।
এই কথাগুলো বলে আমাদের পরিবার নিয়ে গর্ব করার কোনো উদ্দেশ্যই আমার নেই। তবে হ্যাঁ- আমি গর্ব করি আমার মা-বাবাকে নিয়ে যাঁরা অতি সামান্য সনাতন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং যতদুর পেরেছেন স্বয়ং নিজেরাই তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন।
আমার এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য দুইটি-
একঃ
আমাদের দেশে আজ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মা-বাবা আছেন যারা তাদের শিশু সন্তানদের শিক্ষার জন্য গৃহ শিক্ষক দিচ্ছেন, খরচ দিচ্ছেন আর তার পরই তাদের দায়িত্ব শেষ মনে করছেন। ফলে একটা সময় পর সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে খরচ যোগানো ছাড়া আর কোনো খবর রাখেন না তারা। ফলে সন্তানেরা বিপথগামী হয়ে পড়ে যার খবরাখবর প্রায়ই পত্রিকা মাধ্যমে আমরা জানতে পাই।
কম বয়সের বাচ্চারা মা-বাবার কাছ থেকে যা কিছু শিখতে পারে তা আর কার কাছ থেকে শেখা সম্ভব? সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়াটা আজকের মা-বাবাদের জন্য কি খুবই কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার?
দুইঃ
শিক্ষার শক্তি বা মর্যাদা কতখানি!!! যে মা-বাবা তা অনুধাবন করতে পারেন তাঁরা শত কষ্টেও সন্তানের শিক্ষার পথের সব বাধা দূর করার চেষ্টা করেন। আর মা-বাবা শিক্ষিত হলে সন্তানের শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষার শক্তি সম্পর্কে সহজেই তাঁরা বুঝতে পারেন।
আমদের দেশে আজও শিক্ষার হার খুব বেশি না। ফলে জাতি হিসাবে আমরা আজও পুরোপুরি শিক্ষিত হতে পারিনি। জাতি হিসাবে শিক্ষিত হতে হলে দরকার সুশিক্ষিত সন্তান আর তা হতে পারে যদি মা-বাবা শিক্ষিত হন এবং যতদুর সম্ভব নিজেরাই নিজেদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেন।
তা হলে আশা করা যায় প্রায়ই আমরা পত্রপত্রিকায় তরুণ প্রজন্ম সম্পর্কে যে অনাকাংখিত সংবাদ পড়ে থাকি অদুর ভবিষ্যতে তা আর পড়তে হবেনা।
পরিশেষেঃ
আমি এ উদ্দেশ্যেই আমার মা-বাবা ও আমাদের পরিবারের কথা বলেছি যে আমাদের দেশে আমার মা-বাবার চেয়ে অনেক অনেক শিক্ষিত মা-বাবা আছেন যাঁদের কাছে দেশ অনেক অনেক বেশি শিক্ষিত সন্তান আশা করে যারা আমাদের দেশটাকে অনেক উঁচু স্থানে নিয়ে যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।