কবিতা/ গল্প/ উপন্যাস/ প্রবন্ধ/ অন্যান্য
এক.
কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় গত ৭ জানুয়ারী একটি সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদটির শিরোনাম ছিল “ আইজিপির লোক পরিচয়ে জেলা শহর দাপটে বেড়াচ্ছে এক যুবক”।
সংবাদ ছিল ঠিক এ রকম ( কোন প্রকার সংশোধন ছাড়া উল্লেখ্য করা হল)
“পুলিশের মহা পরিদর্শক (আইজিপি) নুর মোহাম্মদ এর কাছের লোক পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা শহরে দাপটে বেড়াচ্ছে এক যুবক। কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, সদর মডেল থানায় রয়েছে এ যুবকের অবাধ বিচরণ। পুলিশ কর্মকর্তারাও ওই যুবককে সমীহ করে চলেন।
পুলিশের গাড়িতেও দেখা যায় তাকে। অভিজাত রেস্টুরেন্ট ও নিরিবিলি পরিবেশে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তাকে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে দেখা যায়। এই সুযোগ ব্যবহার করে ওই যুবক পুলিশের বিকল্প হয়ে উঠছেন। পুলিশ বিভাগ ও বিচার প্রার্থীদের মাঝে “আলী ভাই” নামে তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়েছে। থানায় মামলা দায়ের, আসামী ছাড়িয়ে নেয়া, নির্দোষ ব্যক্তিকে মামলায় জড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে তার দ্বারস্থ হয় লোকজন।
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আসামী ছাড়িয়ে নেয়া, চার্জশীট থেকে নাম বাদ দেয়া, চার্জশীটে নাম অন্তর্ভুক্তি, মামলার চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া, মামলায় জড়ানো, পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার সহ নানা ধরণের কাজ করে দেয় ওই যুবক। এমনকি ওই যুবক পুলিশের কর্মকর্তাদের বদলি করার ক্ষমতা রাখে বলে প্রচার আছে। আলী ভাইকে ম্যানেজ করতে পারলেই থানায় সবকিছু করা সম্ভব এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে বিচার প্রার্থীদের মধ্যে। তার দাপটে অনেক মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে। ঃ
চলছে নানা অনিয়ম দুর্নীতি।
ভূক্তভোগী লোকজন তার দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও উক্ত যুবকের হাতে হয়রানীর শিকার হচ্ছে বলে জানা গেছে। এভাবে ৩/৪ বছরের মধ্যে ওই যুবক কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।
একাধিক ভূক্তভোগীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ভূক্তভোগী লোকজন ওই যুবকের শাস্তি দাবী করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি শুনেছেন উল্লেখ করে বলেন, এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ”
দুই.[/sb
এ সংবাদের সূত্র ধরে একই দিন শহরে মিছিল সমাবেশ হয়েছে। এ মিছিল সমাবেশ পক্ষটি প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে আজ স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটির শিরোনাম হল “ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ঃ শহরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ”
সংবাদ ছিল ঠিক এ রকম ( কোন প্রকার সংশোধন ছাড়া উল্লেখ্য করা হল)
“কক্সবাজার শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজসেবক সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় জেলা শহরে বিশাল সমাবেশ করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। কয়েক হাজার নারী পুরুষের বিশাল মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কক্সবাজার পৌরসভার সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, মোহাম্মদ আলী অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি এক যুবক। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সমাজ বিরোধী কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না। সৈয়দ মোহাম্মদ আলী জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত একজন সমাজসেবক। সমাজের গরীব-দুঃখি মানুষের পাশে থেকে অনেক দৃষ্টান্ত তিনি ইতোমধ্যে স্থাপন করেছেন।
বক্তারা আরো বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার থাকা যুবক আলী ভাই সুবিধাবাদিদের পথের কাঁটা হয়েছেন।
স্থানীয় কতিপয় পাতি নেতা পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, আসন্ন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে সৈয়দ মোহাম্মদ আলী ৩নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী। মহল বিশেষ তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। সামাজিক অবস্থান ও নিরীহ মানুষের কাছে আলীর গ্রহণযোগ্যতা দেখে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
বক্তারা আরো বলেন, সৈয়দ মোহাম্মদ আলী আইজিপি নামের কাউকে চিনেন না।
তার সাথে পুলিশ প্রশাসনের কোন সম্পর্ক নাই। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা আকতার নেওয়াজ খান বাবুল, সাবেক ইউপি সদস্য আবু তাহের, ব্যবসায়ী নেতা নাছির উদ্দিন বাচ্চু, মো. মোর্শেদ, জানি আলম পুতু ও মো. ডালিম প্রমূখ।
তিন.
এ প্রসঙ্গে আমার কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় “আইজিপি’র লোক পরিচয়ে জেলা শহর দাপটে বেড়াচ্ছে এক যুবক” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের কোথাও এ যুবকের পূর্ণ নাম, ঠিকানা ও পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
শুধু সংবাদের একটি অংশে যুবক থানার বিচার প্রার্থীদের কাছে আলী ভাই হিসেবে পরিচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে মিছিল করা যুবক কে? কে এই আলী ভাই ? আমি ব্যক্তিগত ভাবে মিছিলে গিয়ে আলী ভাইকে চিনতে চেষ্টা করি। তবে মিছিল সমাবেশেও আলী ভাইয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এসব লোকজন মিছিল করেন। মিছিলে আলী ভাইয়ের পক্ষে নানা শ্লোগান দেয়া হয়।
এমনকি একটি মিছিলের সামনে পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে ব্যানারও দেখা গেছে। মিছিলে বিভিন্ন মামলার কয়েকজন আসামীও অংশগ্রহণ করে। মিছিল শেষে কোট বিল্ডিং চত্ত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসব বিষয় দেখে শহরের এক প্রবীণ আইনজীবী বলেন, সংবাদেও আলী ভাই চিনা গেল না, প্রতিবাদ সমাবেশেও আলী ভাই নেই। তিনি আলী ভাইকে চিনতে কৌতুহল প্রকাশ করেন।
এতে অনেকেই মন্তব্য করতে দেখা গেছে সংবাদে আলী ভাইয়ের কোন পরিচয় উল্লেখ করা না হলেও মিছিল-সমাবেশের বিষয়টি “ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না” এ প্রবাদকে সত্য প্রমান করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।