বা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১.
পুকুর-ধারে
দোতালার জানালা থেকে চোখ পড়ে
পুকুরের একটি কোনা।
ভাদ্রমাসে কানায় কানায় জল।
জলে গাছের গভীর ছায়া টলটল করছে
সবুজ রেশমের আভায়।
তীরে তীরে কলমিশাক আর হেলঞ্চ।
ঢালু পাড়িতে সুপারি গাছক’টা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
এ ধারের ডাঙায় করবী, সাদা রঙন, একটি শিউলী--
দুটি অযতেœর রজনীগন্ধায় ফুল ধরেছে গরিবের মতো।
বাঁখারি-বাধা মেহেদির বেড়া,
তার ও পারে কলা পেয়ারা নারকেলের বাগান;
আরো দূরে গাছপালার মধ্যে একটা কোঠাবাড়ির ছাদ,
উপর থেকে শাড়ি ঝুলছে।
মাথায় ভিজে চাদর জড়ানো, পা-খোলা মোটা মানুষটি
ছিপ ফেলে বসে আছে বাঁধা ঘাটের পৈঁঠাতে--
ঘন্টার পর ঘন্টা যায় কেটে। ।
বেলা পড়ে এল।
বৃষ্টি-ধোওয়া আকাশ,
বিকেলের পৌঢ় আলোয় বৈরাগ্যের ম্লানতা।
ধীরে ধীরে হাওয়া দিয়েছে--
টলমল করছে পুকুরের জল,
ঝিল্মিল্ করছে বাতাবিলেবুর পাতা। ।
চেয়ে দেখি আর মনে হয়--
এ যেন আর-কোন একটা দিনের আবছায়া,
আধুনিকের বেড়ার ফাঁক দিয়ে
দূরকালের কার একটি ছবি নিয়ে এল মনে।
স্পর্শ তার করুণ, সিন্ধ তার কন্ঠ,
মুগ্ধ সরল তার কালো চোখের দৃষ্টি।
তার সাদা শাড়ির রাঙা চওড়া পাড়
দুটি প ঘিরে ঢেকে পড়েছে;
সে আঙিনাতে আসন বিছিয়ে দেয়,
সে আঁচল দিয়ে ধুলো দেয় মুছিয়ে,
সে আম-কাঁঠালের ছায়ায় ছায়ায় জল তুলে আনে--
তখন দোয়েল ডাকে সজনের ডালে,
ফিঙে লেজ দুলিয়ে বেড়ায় খেজুর-ঝোপে।
যখন তার কাছে বিদায় নিয়ে চলে আসি
সে ভালো করে কিছুই বলতে পারে না,
কপাট অল্প একটু ফাঁক করে পথের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে--
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।