জুলাই সংখ্যা'06
1935 সালের 1 জুলাই অধ্যাপক চেমন আরা জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যিক ও সমাজসেবী। পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের অনত্দর্গত চান্দগাঁও মৌলবী বাড়ি। প্রফেসর চেমন আরার দাদাজন মৌলবী আব্দুল হালিম তৎকালীন সময়ের এন্ট্রাস পাস এবং আরবি, উদর্ু, ইংরেজি, ফার্সি ও বাংলা ভাষায় ছিল তাঁর অসাধারণ দখল।
তাঁর দাদার এই অসাধারণ পারদর্শিতার কারণে কিছুদিন তিনি মহিশূরের রাজা টিপু সুলতানের প্রপৌত্র প্রিন্স বখতিয়ার ও প্রিন্স আনোয়ারের (কোলকাতায় যখন ইংরেজদের নজরবন্দী) গৃহশিৰক ছিলেন।
পিতা এ. এস. এম মোফাখখার বিভাগ পূর্বকালে কোলকাতা হাইকোর্টে মুসলমান এডভোকেটদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতির অঙ্গনেও মুসলিম লীগের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। প্রফেসর চেমন আরার প্রাথমিক শিৰার প্রথম পাঠ শুরম্ন হয় নিজ গৃহে মা ও দাদীর কাছে। 1941 সালে তার স্কুল শিৰা শুরম্ন হয় চট্টগ্রাম গোল এজার বেগম স্কুলে। বিভাগ পূর্বকালে কিছুদিন কোলকাতা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। 1947 সালে 15 আগস্ট তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন।
1950 সালে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 1951 সালে ঢাকার সরকারি কামরম্নন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং 1953 সালে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে বি এ (অনার্স) ও এম এ পাস করেন। 1947 সালে দেশ বিভাগের পর অধ্যৰ আবুল কাশেমের নেতৃত্বে 'পাকিসত্দান তমদ্দুন মজলিস' নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ে তিনি এই সংগঠনের একজন সক্রিয় কমর্ী ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হকের সহায়তায় 'ছাত্রী পরিষদ' নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। এই পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি। সম্পাদক ছিলেন সাবেক সচিব এ এফ এম ইয়াহিয়ার স্ত্রী লতিফা এবং উপদেষ্টা ছিলেন শামসুন নাহার মাহমুদ। ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, বর্তমানে প্রখ্যাত এডভোকেট ফরমান উলস্নাহ খানের 'ছাত্রশক্তি'র সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া তিনি এস এম হল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
1952 সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বকশীবাজার ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে শহীদ বরকতের রক্তাক্ত শার্ট নিয়ে যে মিছিল হয় তাতে তিনিও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। 1956-57 সালে ডাকসুর ম্যাগাজিন কমিটিতে ছিলেন মনোনীত সদস্য। প্রফেসর চেমন আরা এম এ পাসের পূর্বেই নারায়ণগঞ্জের অদূরে নবীগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিৰকের পদে যোগদান করেন। 1959 সাল থেকে ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, তীতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগে প্রায় 32 বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন। অবসর গ্রহণ করার প্রাক্কালে 5 বছর চট্টগ্রামে সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যৰের পদে আসীন ছিলেন।
ইডেন কলেজে অধ্যাপক থাকাকালীন তিনি ইডেন ডিগ্রি কলেজ হোস্টেলে প্রায় 10 বছর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। শিৰকতার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের লৰ্যে প্রতিষ্ঠিত 'সবুজ সেনা' সংগঠনের আজিমপুর শাখার সভাপতি ছিলেন। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রধান ডক্টর ফাতেমা সাদেক ও সমাজসেবী ফিরোজা বারী মালিক। গৃহিনী মা-বোনদের শরীর ও মনের উৎসর্ষ সাধনের লৰ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'ইসলামী পাঠচক্র' নামে সাপ্তাহিক ঘরোয়া বৈঠক এবং এর সভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় তমদ্দুন মজলিসের মহিলা শাখার সভাপতি।
সাহিত্যচর্চার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্কুলে পড়াকালীন থেকেই। তাঁর প্রথম ছোট গল্প 'ওরা জাগে' 1948 সালে ঢাকার সাপ্তাহিক 'সৈনিক' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে তাঁর বহু গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা প্রকাশিত হয়। তাঁর কিশোর উপন্যাস 'সুখ দুঃখের মেলায়' 1987 সালে মাসিক পত্রিকা অগ্রপথিকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। 1993 সালে দৈনিক ইনকিলাবের সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিক প্রকাশিত হয় 'জীবন তরঙ্গ' নামে ভ্রমণ কাহিনী।
এ ছাড়া তিনি ঢাকা, চট্টগ্রামের রেডিও-টেলিভিশনে গল্প, প্রবন্ধ পাঠে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : 1. স্বগত ভাবনা (কবিতা), 2. অনন্য জীবন সাধক এ. এস. এম মোফাখখার (প্রবন্ধ সম্পাদনা), 4. হৃদয় নামের সরোবরে (ছোট গল্প)। তাঁর ছোট গল্পগ্রন্থের সংখ্যা 3টি। তিনি বর্তমানে 'নারী অধিকার আন্দোলন' নামে একটি মানবকল্যাণমুখী সংগঠনের সভাপতি। মহাখালীতে 'তামরীন' নামক একটি স্কুলে তিনি 10 বছর যাবৎ নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
তিনি ভ্রমণ করেন সুইডেন, নরওয়ে, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুঙ্মেবার্গ, মক্কা, মদিনা, বাহরাইন। এ ছাড়া ছাত্রীদের সঙ্গে কলেজ প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শিৰা সফর করেন।
48 সালে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালীন সময় থেকে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত 3 সাপ্তাহিক দৈনিকে লেখালেখি শুরম্ন করেন।
তার প্রথম লেখা সাপ্তাহিক সৈনিকেই প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে তিনি নানা পত্রপত্রিকায় গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী কিশোর উপযোগী উপন্যাস, প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখে যাচ্ছেন।
সাহিত্যকর্ম : প্রায় পঞ্চাশ বছরকাল ধরে তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র আটটি।
1. হৃদয় নামের সরোবরে- গল্পগ্রন্থ
2. ঘরে ফেরা-
3. সুখ-দুঃখের মেলায়- কিশোর উপন্যাস।
4. ওমরা ও হজ্বের স্মৃতি- ভ্রমণ কাহিনী
5. সহজ মিলাদ পাঠ- সম্পাদিত
6. স্বগত ভাবনা- কবিতার বই
7. অন্যন্য জীবন সাধক
এ. এম. এম মোফাখখার- সম্পাদিত
8. ইমনের ফুলের বাগান- ছোটদের জন্য লেখা।
স্বীকৃতি
ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য ভাষা আন্দোলনের জনক সংগঠন- কেন্দ্রীয় তমদ্দুন মজলিস তাঁকে 2004 সালে তমদ্দুন মজলিস ভাষা সৈনিক পদকে ভূষিত করেন।
2004 সালে বাংলাদেশ মহিলা সাংবাদিক ফোরাম- নারী নেতৃত্বে অবদানের জন্য 'বাংলাদেশ মহিলা সাংবাদিক ফোরাম' সংবলিত ক্রেস্ট উপহার দেন।
2006 সালে জালালাবাদ ফাউন্ডেশন নারী নেতৃত্বের জন্য- 'হাছান রাজা স্মৃতি' পদকের জন্য মনোনীত করেন।
কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশনের সাহিত্য পুরস্কার নির্বাচনী কমিটি এই বছর আমাকে শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য সাহিত্য পুরস্কার দেবেন-
সংবাদটি আমার কাছে অবিশ্বাস্য ও অবাসত্দব মনে হতো- যদি না আমি কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান স্বাৰরিত একটি দাওয়াত নামা না পেতাম।
অনুভূতি প্রকাশ
দাওয়াতটি পেয়ে আমি একাধারে অভাবিত অপার আনন্দে অভিভূত হচ্ছি অন্যদিকে শিশুদের জন্য আমার লেখালেখির ৰেত্রটি বিশাল পরিসরে করতে পারিনি বলে- লজ্জিত ও অনুতপ্ত হচ্ছি।
নৈতিক অবৰয়ের ভয়াবহ এক কঠিন যুগ আমরা মোকাবেলা করছি। এই প্রজন্মও আগামী প্রজন্মদের এই জুলমাতের অাঁধার থেকে মুক্তি দিতে হলে- তাদের মনের নরম পেলব মাটিতে নৈতিকতার বীজ বপণ করতে হবে।
জিহাদি প্রেরণায় কলমকে হাতিয়ার করে ঈমানের দৃপ্ত আলোয় মনের আনন্দকে আলোকিত করতে হবে।
আশার কথা- আমার কিশোরকণ্ঠের ভাইরা, কর্মপরিষদ- এই পথে দৃঢ় পদৰেপে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই মহান ব্রতে আমিও যেন সঙ্গী হতে পারি- এই আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং সমগ্র কিশোরকণ্ঠ পরিবারকে আমার কৃতজ্ঞ অনত্দরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।