২৮ ডিসেম্বর এলেই প্রথমে যে কথাটা খুব বেশী মনে পড়ে, তা হচ্ছে
বয়সে যুক্ত হলো আরেকটি পালক ! বয়স বাড়ছে ! কিন্তু কী করছি
আমি ? কী করতে পারছি ?
হায় মানব জনম ! হায় জীবনের চাওয়া পাওয়া !
জানলার পাশে একটা কফির পেয়ালা নিয়ে বসে থাকি। তাকাই অদূরের
ব্রীজটার দিকে। ট্রাইবরো ব্রীজ। এই ব্রীজ দিয়ে কত যান প্রতিদিন নির্দিষ্ট
গন্তব্যে চলে যায় । কেউ ফিরে ।
কেউ ফিরে না । কখনওই না ।
......................
যে পথ দিয়ে আমি হাঁটি , এর আগে এই পথ দিয়ে অনেকেই হেঁটে গেছে।
ওরা আজ কোথায় ?
কোথায় আমার পিতা, পিতামহ , প্রপিতামহ ? অনেক প্রশ্ন আসে।
আমি বার বারই ভাবি , মানুষ অন্ধকারকামী ।
যে জন্ম আমাদেরকে
আশান্বিত করে , সেই জন্মের বীজও বপিত হয় আঁধারেই।
২৮ ডিসেম্বর এলে আমার আঁধারের কথা খুব মনে পড়ে। মনে হয় শুধুমাত্র আলোর ভ্রমণটা শেষ করেই প্রাণ অন্ধকারে ঠাঁই নেয়।
........................
মনে পড়ে , আমার বড় মামার সাথে আমি একদিন একটা ফসলি জমির
মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তিনি হঠাৎ ই বললেন , জানস, এখানে একসময় নদী ছিল।
আমি চমকে উঠি । বলি - বলেন কী ? আমিতো দেখি সমতল ভূমি !
তিনি বলেন, নদীটা ভরতে ভরতে এই অবস্থা হয়েছে।
তার কথা আমাকে খুব ভাবায়।
আমি জানি আমার পরের প্রজন্ম কোনোদিন জানতেও পারবে না সেই
মৃত নদীটির কথা। সেই বয়ে যাওয়া নদীতে বর্ষার যৌবনের কথা।
মানুষ এভাবেই দূরে চলে যায় , জানা থেকে - মাটির মমতা থেকে।
আর তখন জন্মের পরিপূরক হয়ে উঠে বিত্ত , বৈভব। সাথে অংশ নেয়
একগুচ্ছ দীর্ঘশ্বাস।
...........................
আমি তো ঠিকই থাকবো না! আমার কর্মগুলো থাকবে তো ?
আড্ডার কথা মনে পড়ে শামসুর রাহমানের সাথে। তার কাছে জানতে চাই , মৃত্যুকে নিয়ে কী ভাবেন ?
কবি কিছুটা বিমর্ষ হন।
বলেন ,
মৃত্যুর কথাটি আমার জন্মদিনেই , আমার
খুব বেশী মনে পড়ে। শুভানুধ্যায়ীরা ফুল নিয়ে আসেন । কেক কাটেন।
তারপর সবাই চলে যান। দিনের শেষ ক'টি ঘন্টা আমি একা নির্বাক চেয়ে থাকি।
আর ভাবি , মৃত্যুইতো জন্মের পরিণত পরিণাম !
..............................
একজন ক্ষুদ্র শব্দ সৈনিক হিসেবে সৃষ্টিকর্তার কাছে, প্রকৃতির কাছে
আমার কিছু চাওয়া আছে।
আমি সংশয়বাদী নই। আমার শব্দপ্রাণ , আমার বিশ্বস্থ সহচর।
আমি ভালো কিছু লিখতে চাই। জানি, আমার লেখা সবাইকে খুশী করতে
পারেনা।
কিন্তু সবাইকে খুশী করা একজন লেখকের কাজও তো নয়।
আমি আমার বিবেককে জাগ্রত রেখে সত্যের পক্ষে লিখে যেতে চাই।
..............................
সাম হ্যোয়ার ইন ব্লগে আমার শুভানুধ্যায়ী, স্বজনের সংখ্যা অনেক।
আমার জন্মদিনকে ঘিরে ব্লগার নীলবকুল পোষ্ট দিয়েছেন।
Click This Link
বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি তমিজ উদ্দীন লোদী আমাকে উৎসর্গ করে একটি কবিতা পোষ্ট করেছেন।
Click This Link
এর সকল কৃতিত্বই কবিতার। আমি জানি, কবিতাই পারে বিশ্বে মানুষে
মানুষে ভালোবাসা, সম্প্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করে যেতে।
..............................
ফেসবুকে, ব্যক্তিগত ইমেইলে , টেলিফোনে যারা জন্মদিনের শুভেচ্ছা
জানিয়েছেন, সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ।
আপনাদের প্রীতি আমার চলার পথে চিরদিন সহায়ক হবে।
১৯৬২ থেকে ২০০৯ ,- ৪৭ টি বছর কম সময় নয়।
পেছন ফিরে তাকালে মনে হয়, এই তো আমি হেঁটে যাচ্ছি ক্বীন ব্রীজ ধরে। আমার
মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক জালালি কৈতর।
............................
অবনত শুভেচ্ছা ।
ছবি- হল্ফ বায়েন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।