হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের মধ্যবর্তী মুচাই নামক স্থানে গ্যাস সঞ্চালন লাইনে কম্প্রেসার স্টেশন স্থাপনের বিরোধিতা করেছিল খোদ র পরিচালক। কম্প্রেসার স্থাপনের পর গ্যাসের চাপ যে পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে প্রকল্প সারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনই সেখানে চাপ ওই পর্যায়ে রয়েছে। ফলে ৩৭০ কোটি টাকার কম্প্রেসার স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পরিচালক।
মুচাইতে বহুল আলোচিত কম্প্রেসার স্থাপনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের এক মাস ১০ দিন পর একজন পরিচালকের লিখিত আপত্তি উত্থাপনের ঘটনা নজিরবিহীন। ওই পরিচালক কেবল চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন তা নয়, পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকেও পরিচালক ইউসুফ আলী তালুকদার মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করেন।
এ নিয়ে তার সঙ্গে তত্কালীন চেয়ারম্যানের তুমুল বাক-বিতণ্ডাও হয়।
৩৭০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ৫২ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে মার্কিন কোম্পানি শেভরনকে কম্প্রেসার স্থাপনের কাজ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ফাইলে অনুমোদন দেন ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের এক মাস ১০ দিন পর ১৫ অক্টোবর পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মোঃ ইউসুফ আলী তালুকদার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের প্রয়োজন নেই বলে মত প্রকাশ করেন। পত্রে (নং-৪০.০১.০৪/৩১) পেট্রোবাংলার পরিচালক বলেন, ‘উত্তর-দক্ষিণ পাইপ লাইনের মুচাই পয়েন্টে কম্প্রেসার স্থাপনের জন্য জিটিসিএল কর্তৃক প্রণীত ও সরবরাহকৃত আরএফপি’র তথ্যমতে মুচাই পয়েন্টে স্থাপিতব্য কম্প্রেসারের ইনলেটে ৯৩৭ পিএসআইজি এবং আউটলেটে ১০৫০ পিএসআইজি চাপে গ্যাস প্রবাহ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে গত ২৪.০৮.০৯ইং তারিখে পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত একটি সভায় শেভরন কর্তৃক তাদের পরিচালিত ফিল্ডগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের বর্তমান ও ভবিষ্যত্ পরিকল্পনাসহ রিজার্ভের বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করা হয়।
সভায় আপনি ও জিটিসিএলের অন্যান্য কর্মকর্তাসহ পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শেভরনের প্রেজেন্টেশনে বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডে গ্যাস রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ওই ফিল্ডগুলো থেকে বর্ধিত হারে ১০৫০ পিএসআইজি চাপে মুচাই পয়েন্টে গ্যাস সরবরাহ বজায় থাকবে বলে দেখানো হয়। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়গুলোতে এসএমএসের মাধ্যমে দেয়া আপানার তথ্যে মুচাই পয়েন্টে ১০৫০ পিএসআইজি চাপে বর্তমানে গ্যাস প্রবাহ হচ্ছে বলে জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের যৌক্তিকতা যথাযথ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। ’ পত্রে বিষয়টি স্পষ্টিকরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
পেট্রোবাংলার পরিচালকের চিঠি পেয়ে জিটিসিএল এ বিষয়ে কোনো জবাবি চিঠি দিয়েছে কিনা জানার জন্য কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন, কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। এক ঘণ্টা পরে যোগাযোগ করার কথা বললেও পরে যোগাযোগ করে তার সেল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানানোর আগে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এ নিয়ে শেভরনের সঙ্গে পেট্রোবাংলার জেএমসির (যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি) বৈঠক হয়। সে বৈঠকে পেট্রোবাংলার দুই কর্মকর্তা মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পেট্রোবাংলার তত্কালীন চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোক্তাদির আলী শেভরনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত হন বলে বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।