আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার দেখিলাম....



জ্বর কাশি নিয়ে ছাদে রোদ পোহাচ্ছিলাম। রোদ আমার চোখে সয় না। রোদ চশমা পড়া ছিল, তবে রোদে পেপার পড়তে পারছিলাম না। কাজেই মুঠোফোনটা নিয়ে একে ওকে ফুনাইয়া গ্রামীণ এর দেয়া কম রেট এ গপাচ্ছিলাম। এক বন্ধুকে বহুদ্দিন ফুনাই না, তারে ফুনাইলাম......... সে বলে আমি কি ভুল দেখি....: না ভুল শুনি।

হেন তেন নানা কথার পরে শুনলাম তারা সপরিবারে বসুন্ধরায় সপিং করে। তাইলে তো থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার দেখতে পারো...আমার চিৎকার। সে বলল তারা দেখে ফেলেছে। পরে জানাইল আমি দেখতে চাইলে আমারে টিকিট কেটে এনে দিবে। এর কয়েক দিন পর সে টিকেট কেটে আমাকে জানাল দুটো টিকেট কাটা হয়েছে, আমার কোন সঙ্গী থাকলে ভাল, আমি তাকে নিতে পারি.........না থাকলে সে নিজে সঙ্গী হতে রাজী।

অফিস ডে তে প্রোগ্রাম, কাজেই বাড়ীর কেউ সাথী হবে না জানা কথা..........আমি কইলাম, সঙ্গী নাই..........তুমিই ফাইনাল। আমি সকাল সকাল অফিস থেকে বাড়ী ফিরলাম, জাফনাকে স্কুল থেকে বাসায় এনে নাইয়ে খাইয়ে জায়গামত পোস্টিং দিলাম ( টিভির সামনে আরকি........ওটাই তার সার্বক্ষণিক ঠিকানা)। অবেশেষে বাড়ী থেকে রওনা হলাম, পথে সঙ্গীরে তুলে নিলাম। অনেক দিন পর দেখা...হুলাস্থুল গপ্প করতে করতে চললাম। যাবার আগে এক দোস্তকে বলেছিলাম........আজকের মিশনের কথা........হিহিহি .......যাচ্ছি ছবি দেখতে! সেই দোস্ত বলল......যাও, শুনলাম ছবিটা তে একটু এডাল্ট ফ্লেভার আছে।

আমি বললাম কি রকম, কি রকম! সে বলল..........কিছু বলল না.....লজ্জা পাইছে মনে হয়। বললাম........শোনো আমাদের বয়স তো আর পনের ও না, পঁচিশও না....আমাদের আর কি এডাল্ট দেখাইব। ওটা নিয়ে আমরা মজা করতে করতে গেলাম। পৌঁছার পর.........সঙ্গী বলল একটু কফি খাই। সময় বেশী নাই, তাও বসলাম........কফির নামে যে বস্তুটা দিল সেটা যে কি বস্তু বুঝতে না পেরে বললাম.........এটা কেমন কফি ভাইডি।

সে ভাব নিয়া বলে কেন কফি তো এমনই হয়! আমি বললাম, আসবার আগে বসায় বসে যেটা খেলাম ওইটার সাথে এইটার কোন মিল পাইলাম না। তবে একদিন সংসদ ভবনে রাস্তায় এইজাতীয় একটা গরম পানি খেয়েছিলাম, ওইটাও মনে হয় এর চেয়ে ভাল ছিল! বিজাতীয় কফি খাওয়া বাদ দিয়ে সিনেমা হলে যেয়ে বসলাম। ছবিটা শুরু হয় একটি মেয়ে একা চলতে গেলে কি কি সমস্যা হয় তা নিয়ে। চারপাশে হাজারো সমস্যা, সে রাতে পথে পথে ঘুরছে..........মায়ের বাড়ী থেকে চলে এসেছে..........রাতের শহরে একা একটা মেয়ে মানেই যেন নিষিদ্ধ নারী। সবাই হাত বাড়ায় তার দিকে।

গৃহিনী এক বোন তার বাড়ীতে আশ্রয় দেয ভয়ে ভয়ে, প্রতি মুহুর্তে শাশুড়ির হুমকি শুনতে হয়..........এক সময় সে আশ্রয়টি ও হারাতে হয়। বাড়ী ভাড়া পায় না........একা এই শহরে কি ছেলে কি মেয়ে কেউই বাড়ী ভাড়া পায় না। আমার এক সময় মনে হয়......আচ্ছা মেয়েটা যদি বাড়ী ভাড়া পেয়েও যায় ভাড়া দেবে কোথ্থেকে? খাবে কি, এই বাজারে সবকিছুর তো অনেক দাম! পাশের বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করি.......সে বলে চাকরী খুঁজে নেবে একটা। আমি বলি বাহ, ডিরেক্টর সাহেব আগে মেয়েটারে একটা চাকরী দিয়া পথে বাইর করতো! কোন মানুষ নিজের পায়ের নীচে মাটি ঠিক না করে রাগ করে মায়ের আশ্রয় ছাড়ে না.........যতই দন্দ্ব থাকুক। যা হোক নানা ঘটনার পর মেয়েটা একটা চাকরী পায়।

পুরোনো এক বন্ধুকে স্বামী সাজিয়ে ভাল একটা বাড়ী ভাড়াও নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় অন্য ঘটনা। মেয়েটার জেলে থাকা স্বামী আর মেয়েটার মাঝে চলে আসে সেই উপকারী বন্ধুটা। আমার কাছে এই মানসিক দন্দ্বের চেয়ে সামাজিক সমস্যাগুলোই বেশী ভালো লেগেছে, অকপট মনে হয়েছে । কদর্য এবং নির্মম বাস্তব সব ঘটনা।

অনেক দিন আগে ডেইলী স্টারের শুক্রবারের সংখ্যাতে এই শহরে একাকী থাকা স্বাবলম্বী মেয়েদের নিয়ে লেখা একটি আর্টিক্যালের কথা বারবার মনে হল। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল অনেক নারী, যারা হয়তো কোন না কোন কারনে সে রকম ভাবে স্বামী সংসার নিয়ে নেই। যাদের ইচ্ছে নিজের একটা একান্ত গৃহকোন থাকবে........বাবার বাড়ীর সেই পরম আশ্রয়টিতে সে এখন আর ততটা স্বস্তি পায় না। সময় যখন বদলায়, সম্পর্কগুলোর ধরনও তখন বদলায়। দুরত্ব তখন একটি ভাল উপায় সম্পর্কটিকে একটি স্বাভাবিক রূপ দেয়ার জন্য ।

সেই সব নারীরা স্বাবলম্বী হয়েও একাকী তার নির্জন গৃহকোণের শান্তি ধরে রাখতে কত শত সামাজিক চোখ রাঙানীর মুখোমুখি হয়.......কত শত উটকো ঝামেলা তার ঘারে এসে পড়ে.........এসব ছিল সেই লেখাটিতে। ছবিটিতে তার একটি অংশ দেখতে পেলাম। এই শহরে.........অতি পছন্দের এই শহরে, অথবা এই সুন্দর দেশটিতে নারী হয়ে বারবার কতবার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নিরাপত্তাহীণতায় ভুগী। নিজের মতন করে আমরা কিছুই করতে পারিনা। চাইলেই পাহাড়ে অথবা সাগরে চলে যেতে পারিনা।

আর একা একা জীবন যুদ্ধ করা সে তো অনেক কঠিন কাজ। একসময় সাহায্য করা বন্ধুটিও বলবে চাইলেই তুমি তোমার ঋন শোধ করতে পারো! ঋন শোধ করার বেশ এক সহজ সমীকরণ। ঘুরে ফিরে সেই একই কথা, নারী তোমার একটি শরীর আছে; বিনিময়ের এক সহজ মাধ্যম। আমার সমবয়সী ভাইটি কিশোর বয়সে আমাকে সাবধান করে বলত.......মানুষ লাভ ছাড়া তুলার বোঝাও নেয় না। সেই কথাটা মনে পড়লো।

নাথিং ইজ ফ্রি! ফেরার পথে বন্ধুটির সাথে এইগুলিই আগড়ম বাগড়ম প্যাঁচাল পাড়লাম। সে আমার অনেক কথাই স্বীকারও করে নিল। তাকে বললাম,তুমি আমাকে ছবি দেখতে নিয়ে গেছ, সেজন্য কৃতজ্ঞতা/ধন্যবাদ কিছুই দিলাম না......যদি আবার তোমার ও মনে হয় ঋন শোধ করা যায়। সে বাসায় পৌঁছে দিয়ে সবাইকে বলে শ্রাবণ সারাদিন একটা পাঁচশ টাকার নোট নিয়া ঘুরছে আর বলে ভাংতি নাই। এইভাবে আমার কাছ থেকে টাকা ভাংগাইয়া খাইছে।

এদিকে আমি বাসা তালা দিয়ে গেছি, যার আগে আসবার কথা সে আগে আসে নাই। জাফনার আব্বা আগে এসে একঘন্টা পাশের বাসায় বসেছিল। বাসায় পৌঁছার আগেই মুঠোফোনে ক্রমাগত ঝাড়ি খেলাম, বাসায় আর না আসলেও চলবে এমন কথাও শুনলাম । তবে বাড়ী না ফেরার রিস্ক নিতে পারলাম না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।