আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্প্রতিক পাঠ : ১। 'শেষ দৃশ্যের আগে' : যা ঘটতে দেয়া হয় নি

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে...

তপন বাগচী মূলত গবেষক। তিনি গবেষণাকর্মের বাইরে যথেষ্ট ভালো কবিতা লেখেন, ছড়াও দেখেছি। তবে এবারে 'ভোরের কাগজ ঈদ সংখ্যা' ২০০৯ তপন বাগচীর একটি উপন্যাস ছেপেছে-- 'শেষ দৃশ্যের আগে'। অর্থাৎ এবারে জানা গেল তিনি কথাসাহিত্যেও হাত দিয়েছেন। বলাবাহুল্য এর আগেই শুনেছিলাম, তিনি উপন্যাস লিখেছেন, কিন্তু এবারে ভোরের কাগজের লেখাটিই প্রথম পাঠ করলাম।

আমার জানা মতে এটি তাঁর প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসের ঘটনা খুব বেশি জটিল নয়। সুহাস একজন গবেষক ও সংবাদিক। ঢাকার নিকটবর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার নুরুল্লাপুরে যাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জেনে উপস্থিত হয় সেখানে। যাত্রাপাগল এমএ মজিদের সাথে দৈনিক সংবাদের আলোকচিত্রী শিহাবউদ্দিনও সঙ্গী হয় গবেষক সুহাসের।

নুরুল্লাপুরে যাওয়ার পর 'সবুজ অপেরা' যাত্রাপার্টির অধিকারী দেলোয়ার হোসেন বাচ্চুর সাথে সাক্ষাৎ হয় তাদের। যাত্রা অধিকারীর সাথে কথাপ্রসঙ্গে গবেষক সুহাস যাত্রাদলের আদিঅন্ত ইতিহাস শোনায় স্বগতোক্তিতে। বিশেষত সুহাসের এই যাত্রা বিষয়ক জ্ঞান গরিমা উপন্যাস পাঠের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে পাঠককে। হয়তো কোন যাত্রা গবেষকের কাজে আসনে এসব তথ্য। কিন্তু যারা উপন্যাসের পাঠক তারা কিন্তু তথ্যের চেয়ে কাহিনীর দিকে অভিনিবেশী থাকেন।

বলাবাহুল্য, ঔপন্যাসিক যাত্রা বিষয়ক আলোচনা এতোটা দীর্ঘ না করলেও পারতেন, তাতে এ কাহিনীর অঙ্গহানি ঘটত না। এরপর যাত্রা দেখতে গিয়ে যে কাহিনী আমাদের সামনে উঠে আসে সেখানেও তথ্য কম নেই। তারপরও জানা যায়, সুহাসের নিজ এলাকার এক মেয়ে 'সবুজ অপেরা'য় নৃত্যশিল্পীর কাজ করে। যদিও সুহাস নৃত্যশিল্পী সাদিয়ার পশ্চাৎপ্রেক্ষাপটে জানিয়েছেন এক করুণ কথা। কারণ, সাদিয়ার বাড়ির লোক জানে, সে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে।

কিন্তু সুহাসের কাছে সাদিয়া জানিয়েছে-- গার্মেন্টসে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠান সম্ভব হয় না। এজন্যই সে যাত্রাদলে নাচের কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে পিতামাতা ও ভাইবোনের সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে। বলাবাহুল্য সাদিয়ার এই মহতী উদ্যোগের প্রতি পাঠকের সমীহ জাগে। তবে ঔপন্যাসিক বারবার জানাতে চেয়েছেন, যাত্রায় যেসব মেয়েরা কাজ করে তারা সকলেই নষ্টা নয়। একথা স্বীকার করতেও আপত্তি নেই।

তবে, একথা বারবার ঔপন্যাসিক স্মরণ করিয়ে না দিলেও পারতেন। এমনকি সাদিয়ার আচরণকেও যেন লেখক ইচ্ছাকৃত পবিত্রতার জলে ধুয়ে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। তবে একথাও সত্য যাত্রায় প্রিন্সেসের নৃত্য প্রসঙ্গে সমকালীন অবক্ষয়ের কথা জানাতেও ভোলেন নি লেখক। উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা দেখাতেই যেন লেখক দেখিয়েছেন, সুহাস ঢাকায় ফিরবার পথে দেখতে পায় একদল গুণ্ডার হাতে সাদিয়া ধৃত হয়েছে। তবে সে যে পুলিশ ভ্যানে ফিরছিল, সেই পুলিশদের সহায়তায় সাদিয়াকে উদ্ধার করে, ইজ্জত রক্ষা করে সাদিয়ার।

শুধু তাই নয়, তাকে পুনরায় যাত্রা প্যাণ্ডেলে পৌঁছে দেয়ারও দায়িত্ব পালন করে। এ সময় সাদিয়ার যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা ঔপন্যাসিক জানিয়েছেন, সেখানেও কৃত্রিমতার ছাপ আছে, আছে ইচ্ছাকৃত সাদিয়ার সাথে সুহাসের ঘনিষ্ঠতা দেখানোর প্রয়াস। সে যাই হোক শেষ দৃশ্যে যেখানে সাদিয়ার ইজ্জত লুণ্ঠিত হতে যাচ্ছিল, সেই ভয়াবহতা থেকে একটি মেয়েকে রক্ষা করাই মূলত 'শেষ দৃশ্যের আগে' উপন্যাসের মূল কথা। ঔপন্যাসিক শেষ দৃশ্যের সমাপ্তিও পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী রচনা করেছেন। সামগ্রিকভাবে 'শেষ দৃশ্যের আগে' উপন্যাস পাঠ শেষে এক ধরনের ক্লান্তি তো অনুভূত হয়ই, তার ওপর মনে যাত্রা বিষয় তথ্যগুলো জানাবার উদ্দেশ্য থেকেই যেন লেখক একটি কাল্পনিক গল্প ফেঁদেছেন পাঠকের সামনে।

সোজা কথায়, পাঠক এ উপন্যাস পাঠ শেষে অনুভব করে, বাস্তবে এ ধরনের ঘটনা আদৌ ঘটে নি, ঘটবে কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই। গল্পটি লেখক কর্তৃক পরিকল্পিত। অর্থাৎ লেখকের কল্পনাসৃষ্ট এক কাহিনী পাঠকের নিকট খুব একটা বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে নি বলে মনে হয়। ভবিষ্যতে লেখক গল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে, তা বিশ্বস্ত করে তোলার দিকে মনোযোগী হবেন এ প্রত্যাশা করা খুব একটা অপরাধ হবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.