"ধর্মীয় কুসংস্কারে যারা আবদ্ধ তারা সব সময়েই দরিদ্র থাকে। " মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন
কোন তথ্য মানবজাতির কাছে দৃষ্টিলব্ধ করে উপস্থাপনের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে আমরা ডিসপ্লে ডিভাইস বলি। যা আমদের কাছে মনিটর নামে বেশি পরিচিত। মনিটর বলতে আমরা সাধারনত কম্পিউটারের মনিটরকেই বুঝি। কিন্তু বাস্তবে একেক কাজে একক ধরনের মনিটর (কম্পিউটার কিংবা টেলিভিশন উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য) ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এটি মূলত আউটপুট ডিভাইস অর্থাৎ মনিটরের কাজ হচ্ছে অন্য কোন উৎস্য হতে প্রাপ্ত প্রক্রিয়াকৃত তথ্য দৃষ্টিলব্ধ করে উপস্থাপন করা। আবার অনেক মনিটর আছে যেগুলো আউটপুট ডিভাইসের পাশাপাশি ইনপুট ডিভাইস হিসেবেও কাজ করে। যেমন টাচ স্ক্রিন মনিটর। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেক কিছুর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাজারে তিন ধরনের মনিটর পাওয়া যায়।
ক্যাথোড রে টিউব (সিআরটি), লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (এলসিডি) এবং অন্যটি হচ্ছে লাইট এমিটিং ডায়োড (এলইডি)। সিআরটি মনিটর এনালগ মনিটর হিসেবে পরিচিত হলেও এলসিডি ও এলইডি মনিটর ডিজিটাল মনিটর হিসেবেই পরিচিত। মূলত সিআরটি, এলসিডি ও এলইডি মনিটরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রযুক্তিগত।
কিছু দিন আগেও সিআরটি মনিটরগুলোর চল ছিল বেশি। সিআরটি মনিটরগুলোতে যেকোনো এঙ্গেল থেকে সমানভাবে ছবি দেখা যায় কিন্তু আকারে বড় ও ওজনে ভারি এবং বিদ্যুৎ অপচয় ও খরচ বেশি।
স্ক্রীনে প্রদর্শিত ছবির ধরন ততটা ন্যাচারাল মনে হয় না। মনিটরগুলোর মূল অংশ হচ্ছে এর পিকচার টিউব। সিআরটি মনিটরে ব্যবহার করা হয় ভ্যাকুয়াম টিউব যার সাথে থাকে ইলেক্ট্রন গান। তিনটি ইলেক্ট্রন গান থেকে ইলেক্ট্রন বিম পর্দার পেছনে ফেলা হয়। পর্দার ওপরে পড়া আলোকরশ্মি পর্দার ফসফর দানাগুলো (তিনটি মৌলিক রং লাল, নীল ও সবুজ বিন্দুর সমন্বয়ে অসংখ্য পিক্সেলের সমাহার) আলোকিত করে তোলে এবং পর্দার ওপর থেকে নিচের দিকে টানা অনেকগুলো রেখা সন্নিবেশিত হয়ে পর্দার অপর পাশে ছবি ফুটে ওঠে।
রেজ্যুলেশন বেশি মানেই হলো মনিটরের পিক্সেল সংখ্যাও বেশি, আর মনিটরে যত বেশি পিক্সেল থাকবে ছবি তত উজ্জ্বল এবং স্পষ্ট হবে। পিক্সেলের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে মনিটরের ডট পিচ বলা হয়। ডট পিচ যত কম হবে মনিটরে ইমেজ প্রদর্শন তত সূক্ষ্ম ও নিখুঁত হবে। মনিটরের স্ক্রিনে কতটুকু এবং কোথায় কোথায় ইলেকট্রন নিক্ষিপ্ত হবে, তার জন্য মনিটরের স্ক্রিনের ওপরে বাম থেকে ডানে পর্যায়ক্রমে স্ক্যান করা হয়। এই স্ক্যান করার হারই মনিটরের রিফ্রেশ রেট।
তুলনামূলক ভাবে দাম কমে যাওয়ায় এখন বাজার ছেয়ে গেছে এলসিডি মনিটরে। এলসিডি মনিটর চোখের জন্য সহনশীল, নিরাপদ ও আরামদায়ক তবে যেকোনো এঙ্গেল থেকে সমানভাবে ছবি দেখা যায় না কিন্তু আকারে ছোট ও ওজনে হালকা এবং বিদ্যুৎ অপচয় ও খরচ কম। স্ক্রীনে প্রদর্শিত ছবির ধরন প্রায় ন্যাচারাল। এখানে কোনো রকম পিকচার টিউব থাকে না। এলসিডি মনিটরের স্ক্রীণ দুই ধরনের হয়।
ওয়াইড এবং স্কয়ার। মনিটর নির্মাতারা সাধারণত কিছু স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখে। যেমন একটি ১৭" স্কয়ার মনিটরের নেটিভ রেজ্যুলেশন ১২৮০×১০২৪। সুতরাং এর পিক্সেলের সংখ্যা ১৩,১০,৭২০টি। আবার একটি ১৭" ওয়াইড মনিটরের নেটিভ রেজ্যুলেশন ১৪৪০×৯০০।
সুতরাং এর পিক্সেলের সংখ্যা ১২,৯৬,০০০টি। ওয়াইড মনিটরের চেয়ে স্কয়ার মনিটরের পিক্সেলের সংখ্যা বেশি। অনেক সময় মনিটরের কিছু পিক্সেল নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো সব সময় একই কালার দেখায়। মনিটরে নেটিভ ও অপটিমাম রেজ্যুলেশন সাপোর্ট রয়েছে। নেটিভ রেজ্যুলেশন হচ্ছে মনিটরের স্বাভাবিক রেজ্যুলেশন আর অপটিমাম রেজ্যুলেশন হচ্ছে গ্রাফিক্স কার্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কত পর্যন্ত পৌছানো যাবে তা।
স্ক্রিনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাতকে অ্যাসপেক্ট রেশিও বলে। ৪:৩ অনুপাতের মনিটরগুলোকে বলা হয় স্কয়ার মনিটর এবং ১৬:৯ অনুপাতের মনিটরগুলোকে বলা হয় ওয়াইড স্ক্রিন মনিটর। সাদা এবং কালো এর মানের পার্থক্যের অনুপাত হচ্ছে কনট্রাস্ট রেশিও। কনট্রাস্ট রেশিও দুই ধরনের হয়। টিপিক্যাল (TCR) এবং ডাইনামিক (DCR)।
একটি মনিটরে স্বাভাবিক যে কনট্রাস্ট রেশিও থাকে, তাই হচ্ছে টিপিক্যাল কনট্রাস্ট রেশিও। কিন্তু কনট্রাস্ট রেশিও বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ যে পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে তা হচ্ছে ডাইনামিক কনট্রাস্ট রেশিও। ডিসপ্লেতে পিক্সেলগুলো কত দ্রুতগতিতে রং পরিবর্তনের সাথে সাথে সাড়া দিতে পারে, তা পরিমাপ করা হয় রেসপন্স টাইম দিয়ে। কত ডিগ্রি কোণ পর্যন্ত মনিটরের স্বাভাবিক কালার দেখা যায় তা বোঝাতে ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করা হয়। মনিটরের ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল যত বেশি হবে তত ডিগ্রী পাশ থেকে মনিটরে পূর্ণ স্বচ্ছ ছবি দেখা যাবে।
এটা উলম্ব এবং সমান্তরাল উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বর্তমানে প্রায় সব এলসিডিতে ইনপুট ইন্টারফেস হিসেবে ভিজিএ পোর্ট এর পরিবর্তে ডিভিআই (Digital Visual Interface) দেয়া থাকে, যা ডিজিটাল সিগন্যালকে কোনোরকম রূপান্তর ছাড়াই এলসিডিতে প্রদর্শন করে। ফলে এতে ভিজিএ এর চেয়ে ভালোমানের ছবি পাওয়া যায়। এলসিডি মনিটরে বেশ কয়েক ধরনের প্যানেলের ব্যবহার দেখা যায়, এগুলোর মধ্য জনপ্রিয় কয়েকটি হচ্ছেঃ Twisted Nematic (TN), Vertical Alignment (VA) এবং In Plane Switching (IPS). টিএন প্যানেলের মনিটরগুলো দামে সস্তা এবং এগুলোর রেসপন্স টাইম ভালো। কিন্তু এ প্যানেল কালার রিপ্রোডাকশন, কন্ট্রাস্ট রেশিও এবং ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলের দিক থেকে বেশ দুর্বল।
ভিএ প্যানেলের মনিটরগুলোকে মাঝারি পর্যায়ে ফেলা যায়। আইপিএস প্যানেল হচ্ছে সব প্যানেলের মাঝে সেরা।
এলসিডি ও এলইডি ডিসপ্লে নিয়ে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকের ধারণা এলইডি মনিটরগুলো এলসিডি মনিটরের চেয়ে আলাদা। কিন্তু আসলে তা নয়।
এলইডি মনিটরগুলোকে এলসিডি মনিটরের উন্নত রূপ বলা চলে। ব্যাকলিট বা পর্দার পেছনের আলোক উৎসের ভিত্তিতে এলসিডি মনিটরগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে সাধারণ এলসিডি মনিটর এবং অন্যটি হচ্ছে এলইডি এলসিডি মনিটর। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ব্যপারটা এই রকম যে, এলসিডি মনিটরের ক্ষেত্রে লিকুইড ক্রিস্টালের ওপরে আলো ফেলে তা দিয়ে পর্দায় ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। আলোর উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফ্লুরোসেন্ট লাইট কিংবা লাইট এমিটিং ডায়োড (এলইডি)।
ব্যাকলিট লাইট হিসেবে লাইট এমিটিং ডায়োড ব্যবহার করা ছাড়া এলইডি ও সাধারণ এলসিডির মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ফ্লুরোসেন্ট টিউবের তুলনায় এলইডিতে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কম হয় ও পর্দায় ছবির মান ভাল আসে।
বর্তমানে এলইডি মনিটর ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে নতুন প্রজন্মের ডিসপ্লে ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে ওএলইডি কিংবা প্লাজমা প্রযুক্তির।
[ লেখকঃ মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রোগ্রামার, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
ই-মেইলঃ ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।