ইহা একটি তেলাপোকা ব্লগ, ম্যালাদিন ধইরা টিকা আছে, তেলাপোকার মত।
একটু আগে ছাদে গিয়ে পতাকাটা তুলে আসলাম। আমার পতাকা। আমার দেশের পতাকা।
সেদিন হঠাৎ কি মনে করে ১০০ টাকা দিয়ে পতাকাটা কিনলাম সাভার সিটি সেন্টারের সামনে থেকে।
সবচেয়ে বড়টা না, তার ঠিক নিচের টা। একটু আগে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ খেয়াল হল, আয় হায়, কালই তো বিজয় দিবস। সকালে উঠতে হবে, পতাকা তুলতে হবে। কিন্তু সকালে উঠতে পারার কোন সম্ভাবনাই নেই আমার। তাই এখনই তুলে ফেলব কিনা ভাবতে ভাবতে বাসায় ঢুকে পতাকা নিয়ে চলে গেলাম ছাদে।
বাসায় বড় কোন বাঁশ পেলাম না যেটার মধ্যে পতাকাটা বাঁধা যায়। ছাদে গিয়ে খুঁজতেই মোটাসোটা একটা বাঁশ পেলাম মাঝারি সাইজের। কিন্তু সেটা মাত্র দশ ফুটের মত লম্বা। সেটায় বাঁধলে বেশি উঁচু হবে না। আশে পাশে তাকাতেই সিড়িকোঠার উপরে বেরিয়ে থাকা রডগুলো দেখে মাথার পাশে টিং করে বাত্তি জ্বলল।
কিন্তু ওখানে বাঁশটা রাখলে সামান্য বাতাসেই পড়ে যাবার চান্স আছে। অবশ্য কোন কিছু দিয়ে বাঁশটাকে বেঁধে দিলে আর পড়ার চান্স নেই। বিধি বাম , সারা বাসা খুঁজে একটু জি.আই. তার, দড়ি কিছুই পাওয়া গেল না। জোশ উঠে গেছে আমার। কি আছে জীবনে, লাগাও দৌড় বাসস্ট্যান্ডের বাজারে।
এত রাতে হার্ডওয়্যারের দোকান খোলা থাকবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। বাজারে গিয়ে তো দেখি এলাহি কান্ড। কিসের রাত কিসের কি! পুরা দুপুরের মত ভিড়। বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী ভাষণ আর দেশের গানে মুখর হয়ে আছে পুরো সাভার। আর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পুরা রঙ্গীন সাজে সেজেছে ঢাকা-আরিচা মহসড়ক।
এম.পি. মুরাদ জং আর আসন্ন হকার্স/শ্রমিক/সেচ্ছাসেবক (ইত্যাদি) লীগ গুলোর নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বদান্যতায় (!) সাভার বাসস্ট্যান্ডের আগে পরে আধা কিলোমিটারের মধ্যে তৈরি হয়েছে নয়টি তোরণ। অবশ্য তোরণ শুরু হয়েছে সেই গাবতলী ব্রিজের পর থেকে আর শেষ হয়েছে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সবগুলোই টিউবলাইট এবং মিটিমিটি বাতি (বিয়েবাড়িতে যেই মিটিমিটি বাতিগুলো জ্বলে, আসল নাম জানি না) দিয়ে ডেকোরেশন করা। "মহান বিজয় দিবস অমর হোক" এর পাশাপাশি বিশাল করে লেখা "সৌজন্যঃ শাকিব খান, হকার্স লীগ" কিংবা "শুভেচ্ছান্তেঃ আলেকজান্ডার বো, শ্রমিক লীগ"। কোন লেখাটা বড় করে আর কোনটা ছোট করে লেখা, সেটা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না! কারণ, বিজয় দিবসের সকালে তো প্রধানমন্ত্রী এই রাস্তা দিয়েই তো যাবেন।
ম্যাডামের একটু সুনজরে পড়তে কে না চায় বলুন?
যাই হোক আমার কাজ গুণাতার কিংবা জি.আই. তার কেনা। কিনে রিকশায় করে বাসায় ফিরেই সোজা ছাদে চলে এলাম। বাঁশটার সাথে বেঁধে দিলাম আমার দেশের পতাকা। কেন যেন গা কাঁটা দিয়ে উঠল। বইয়ের পাতায় পড়েছি কিংবা সিনেমা/নাটকে দেখেছি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে স্বাধীন দেশের পতাকা।
কিন্তু কখনো এতটা গভীর অনুভূতি হয়নি। পতাকাটার দিকে তাকিয়ে আজ বিনম্র শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এল আমার। (আঁতলামি করতেছি না, একদম সত্যি)। সিঁড়িকোঠার কাছে গেলাম। ছাদের এই পাশটায় আবার রেলিং নেই।
উপরে উঠতে একটু ভয় লাগছিল। আমি আবার ছয়ফুট লম্বা (!) তো, তাই একটা টুল এনে সেটার উপর দাঁড়াতে হল। বাঁশটা শক্ত করে রডের সাথে বাঁধলাম যাতে কাত হয়ে পড়ে না যায়।
টুল থেকে নেমে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে উপরের দিকে তাকালাম। পতাকাটা দেখলাম মাথা উঁচিয়ে।
বাসস্ট্যান্ডের দিক থেকে কানে ভেসে আসছে ....
"এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না
আমরা তোমাদের ভুলব না"
বিজয়ের এই দিনে অজস্র মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও বীরাঙ্গনা সবাইকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।