দিল্লির অত উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম বাঙালি শ্রী প্রণব মুখার্জির সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর তেমন সময়োপযোগী হয়নি। দেশের এই উত্তেজক পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক চাণক্যের দেশ দিল্লি সফরটি সাময়িক স্থগিত করতে পারত। বাংলাদেশও পিছিয়ে দিতে পারত। অমন একজন মহান নেতাকে যথাযথ সম্মান দিতে না পারা একটা জাতীয় লজ্জা। শুধু অতিথির অসম্মান নয়, এ বাঙালির জাতীয় সত্তারও এক নিদারুণ দৈন্য।
এর বিরূপ রেশ কাটতে লাগবে বহুদিন।
ক’দিন থেকে মনটা বেশি ভালো না। মৃত্যু অবধারিত তারপরও কখনও কখনও কোনো কোনো মৃত্যু দেহমনে প্রচণ্ড নাড়া দেয়। তেমনি দেহমনে নাড়া দেয়া মৃত্যু জননেতা আবদুল জলিলের। চেনা-পরিচয় ছিল ৪৪-৪৫ বছর।
কিন্তু তাকে যে এতো ভালোবাসতাম, তিনি যে অতটা হৃদয়জুড়ে ছিলেন তা বুঝলাম এই সেদিন, ৬ মার্চ। কেন যেন কিছুই ভালো লাগছে না। সংবাদটা পেয়েছিলাম বাংলাভিশনে মতিউর রহমান চৌধুরীর সরাসরি উপস্থাপনায় ফ্রন্ট লাইন চলার সময়। অনুষ্ঠানের এক-দুই মিনিটের মধ্যেই মতিউর রহমান জানিয়েছিলেন, এইমাত্র জননেতা আবদুল জলিল ইন্তেকাল করেছেন। খবরটি শুনে আকাশ ভেঙে পড়েছিল আমার উপর।
অনুষ্ঠানে আর স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারিনি, বুক ভারি হয়ে গলা ধরে গিয়েছিল। আবার ওই একই দিনে নয়াপল্টনে বিএনপির একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অযথাই পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। পুলিশ চালিয়েছিল, না তাকে দিয়ে চালানো হয়েছে এটা তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু সভাটি পণ্ড করে দেয়া হয়েছিল। গণতন্ত্রের জন্য যা মস্তবড় অশনি সঙ্কেত।
অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপালের কাছে গিয়েছিলাম কান দেখাতে। কি মজার ব্যাপার! ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও নানারকম চিকিত্সা হয়েছে। কি চিকিত্সা করেছেন তা তারাই জানেন। বাংলাদেশের নাক-কান-গলার শ্রেষ্ঠ চিকিত্সক যাকে ভারতও খুব সম্মান করে, সেই ডা. প্রাণ গোপালও চিকিত্সা করেছেন।
জরুরি অবস্থার সময় নিয়মিত কান নিয়ে কানাকানি শুনতাম। এখন আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কান নিয়ে কোনো কানাকানি শুনি না। তবে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে ফেরার পথে ২-৩ জায়গায় মাটিতে শোয়ায় একটু ঠাণ্ডা লেগে কেন যেন আমার কানে যন্ত্রণা হচ্ছিল। তাই প্রাণ গোপালকে কান দেখাতে গিয়েছিলাম। সবাই ভিজিট দেয় আমি কান দেখিয়ে ওর কাছ থেকে হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে এসেছিলাম, যা ব্যাংকের দলীয় হিসেবে পাঠিয়ে দিয়েছি।
সেখান থেকে গিয়েছিলাম ইউনাইটেড হাসপাতালে। এই হাসপাতালে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার জননেতা আবদুল জলিলকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি ছিলেন পাঁচ তলার ৫০৭ নম্বর কেবিনে। আমি যখন যাই তিনি তখন বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে ছিলেন। সেখানে তার স্ত্রীও ছিলেন।
খুবই যত্ন করছিলেন। আমায় দেখে কি যে খুশি হয়েছিলেন বলে বোঝানো যাবে না। দেখা হলে কয়েক বছরে দু’তিন বার শারীরিক অসুবিধার কথা বলেছেন, কিন্তুু তা ছাড়া শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে কখনও কোনো কথা বলতেন না। সবসময় কাজের কথা বলতেন, দেশের কথা বলতেন। তার মার্কেন্টাইল ব্যাংকে গেলে লোকজন গিজগিজ করতে দেখতাম।
জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ‘নেত্রী আমাদের ছাড়লে কি হবে, মানুষ তো ছাড়ে না। ’ হাসপাতালে হাসিমুখেই বলেছিলেন, ‘কাদের ভাই, শরীরটা কেমন দুর্বল হয়ে এসেছে। তেমন শক্তি পাই না। ’ কয়েক মিনিট পর চলে এসেছিলাম। তার স্ত্রী বলেছিলেন, ‘বুধবার সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাব, ভাই দোয়া করবেন।
’ সত্যিকার অর্থে জননেতা আবদুল জলিলকে সবসময় দোয়া করেছি, শুভ কামনা ছাড়া তার জন্য কিছু খুঁজে পাইনি। যেমন বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী যখন আমাকে বকাবকি করেন বলে লোকজন মনে করে, তখন তার জন্য অন্তরে শুভ কামনা ছাড়া হাতিপাতি করে আর কিছু পাই না। তেমনি জননেতা আবদুল জলিলের জন্য কেন যেন অন্তরে একসাগর ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু ছিল না, যা কোনো দিন শেষ হবে না। আজ আবদুল জলিল নেই, কিন্তু সেদিন আবার ইউনাইটেড হাসপাতালের সেই পাঁচ তলায় গিয়েছিলাম বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খানকে দেখতে। নজরুল ইসলাম খানের স্ত্রী কান্তা আমার ছোট বোন।
মায়ের পেটের বোনেরা হয়তো কোনো ভাইকে অত আদর-যত্ন করে না যতটা কান্তা করে। ওর মেয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম শত মানুষের মাঝে যেভাবে আকুল হয়ে জড়িয়েছিল সম্পর্ক ভালো থাকলে একমাত্র মায়ের পেটের বোনেরা ওভাবে জড়িয়ে থাকে। যেভাবে পাখনা ধরে সারা ঘরময় অতিথিদের ‘আমার ভাই’ ‘আমার ভাই’ বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, কল্পনাই করা যায় না। আমার স্ত্রীও কোনো অনুষ্ঠানে ওভাবে বগলদাবা করে থাকে না। যেমনটা আমাকে পেলেই কান্তা করে।
কান্তা আমাকে ধরলেই মনে হয় যেন মা ধরে আছে। আসলেই একটা স্বর্গীয় প্রশান্তি অনুভব করি। ছোট বোন শুশুর সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম কান্তা। ডল, সাবরিনা, আঁখি, মোনা, বুলা, শম্পা, করবী—একজনের চাইতে আরেকজন ছোট ভাই বলতে অজ্ঞান। এখনও ওরা আমায় গভীর ভালোবাসে।
নজরুল ইসলামকে দেখতে নাসরীনও গিয়েছিল। গায়ে অসংখ্য ছররা লেগেছে। ফুটি ফুটি ছোট ছোট দাগের ভবিষ্যত্ পরিণতি ভালো নয়। শরীরে জ্বালা থাকে বহুদিন, হয়তো আজীবন চিকিত্সাধীন থাকতে হবে। বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতারা যা শরীরে বহন করতেন।
দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী বাহাউদ্দিন নাছিম ও অন্যান্যের গায়ে দেখেছি। প্রায় এক যুগ হয়ে গেল সেসব ছররার যন্ত্রণা এখনও তারা ভোগ করেন। হয়তো নজরুল ইসলাম খানকেও অনেকদিন ভোগ করতে হবে।
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই স্ত্রীর মুখে শুনলাম কালিহাতীর জিন্নাহ দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কালিহাতীর জিন্নাহ বলতে স্মৃতিতে কেউ ছিল না।
পরে সোহেলের কাছে শুনলাম, ভাবলার জিন্নাহ। জিন্নাহ আমাদের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। ছাত্র জীবনে আমার সহকর্মী, ছোটখাটো একজন মুক্তিযোদ্ধা। জিন্নাহ, আমানুল্লাহ, হাকিম, নায়েব আলী, মিরুল্লা ছিল আমার ছায়াসঙ্গী। ’৬৯-এ গণআন্দোলনে নাগরপুরের সিওকে পাড়িয়ে মেরে জিন্নাহ হয়েছিল এক নম্বর আসামি।
নানা কারণে আমার হৃদয়ে জিন্নাহর অনেকখানি জায়গা ছিল। হঠাত্ করে ওর মৃত্যু সংবাদ শুনে খুব আঘাত পেয়েছিলাম। তাই পরশু ওর কবর জিয়ারতে গিয়েছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে হাজারখানী লোক হয়েছিল। শুনলাম এলেঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিপুল সমর্থন পাওয়ার পরও কালিহাতী উপজেলার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ঠাণ্ডু তাকে মনোনয়ন দেয়নি।
তাই মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত ছিল। ঠিক সেই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে এলাকার মানুষ আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। প্রায় ২৫-৩০ বছর জিন্নাহদের বাড়ি যাইনি। শেষবার যখন গিয়েছিলাম ওদের বাড়ির দক্ষিণে কোনো বাড়িঘর ছিল না। নিচু জমি থেকে অনেক উপরে উঠতে হতো।
এখন অনেক বাড়িঘর হয়ে সব সমান হয়ে গেছে। কবর জিয়ারত করে জিন্নাহর পুরনো ঘরে গিয়ে ওর ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তোদের দুই ছোট ছোট ফুপু ছিল তারা কোথায়?’ বলল একজন এখানেই আছে। ’৬৭-’৬৮-র দিকে যখন ওদের বাড়ি গেছি তখন ওরা ছিল খুবই ছোট, পরীর মতো দেখতে, ছুটে এসে কোলে বসতো, মায়ের কাছ থেকে এটা-ওটা এনে খাওয়াতো, না খেলে কান্নাকাটি জুড়ে দিত। আসলে তখন গ্রামে ছিল এক মধুর পরিবেশ, ছায়ায়-মায়ায় জড়ানো গ্রাম। বিদ্যুতের পাখা, বাতি, পাকা রাস্তা, ডিশের কল্যাণে দেশের কোথাও ছায়া নেই, মায়া নেই, নেই কোনো মানবতা, ভালোবাসা।
সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। পড়ালেখার এত চল কিন্তু প্রকৃত মানুষ হচ্ছে না কেউ। ন্যায়-নীতি, দয়া-মায়া-মমতা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বেশিক্ষণ থাকিনি, ফেরার পথে বারবার পুরনো স্মৃতি সিনেমার পর্দায় ছায়াছবির মতো ভেসে উঠছিল, বুক ভারি হয়ে আসছিল। কবরের পাশে প্রার্থনা করেছি, আল্লাহ যেন ওর সব ত্রুটি ক্ষমা করে বেহেশতবাসী করেন।
আগের দিন আমার দেশ-এ হালাল-হারাম সম্পর্কে এক প্রতিবেদন ছিল। সেখানে মারাত্মক এক অসঙ্গতি। হারামের ক্রমিক ১৭টি বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে নবম-১০ম শ্রেণীতে ইসলাম ও নৈতিকতা শিক্ষার বইয়ে ৮২ পৃষ্ঠায় পাঁচ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে, ‘দেব-দেবীর বা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উত্সর্গকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। ’ পত্রিকা পড়ে বিস্মিত হয়েছিলাম। হালাল-হারাম একমাত্র মুসলমানের জন্য, হিন্দু-খ্রিস্টানের জন্য হারাম-হালালের বিধি-বিধান নেই।
ইহুদিদের জন্য কিছু থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু দেব-দেবীর নাম এখানে আসে কি করে? বইটি রচনা করেছেন মুহাম্মদ আবদুল মালেক, ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ, ড. মোহাম্মদ ইউছুফ। সম্পাদনা করেছেন বিখ্যাত ডক্টর মো. আখতারুজ্জামান। স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহ বলেছেন, তার কোনো শরিক নেই, ‘লা শরিক আল্লাহ’— এখানে কি করে দেব-দেবীদের ওই পণ্ডিতরা শরিক করে ফেললেন বুঝতে পারলাম না।
প্রথম প্রথম পত্রিকার রিপোর্টটি বিশ্বাস হয়নি। প্রায় দু’বছর ধরে আমার দেশ-এ লিখি। পত্রিকাটি নিয়ে যেমনি আমার গর্ব আছে, ঠিক তেমনি শতভাগ একমুখী হওয়ায় অসন্তুষ্টিও আছে। তবে পত্রিকাটি এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়। পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে বেশি টানাহেঁচড়া করে সরকার তাকে অনেক উপরে তুলেছে।
তাই রিপোর্টটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নবম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিকতা শিক্ষার বই এনেছিলাম। প্রথম প্রথম কেনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে বইটি এনেছি। কারণ সরকারের বাইরে স্কুলের বই কোথাও পাওয়া যায় না। পড়ে দেখলাম আমার দেশ শুধু পাঁচ নম্বর ক্রমিকে দেব-দেবীর বা আল্লাহর প্রতি উত্সর্গ ছাড়া মাংস খাওয়া নিয়ে বলেছে, সাত নম্বর ক্রমিকে মদ খাওয়া নিয়ে বলেনি। সেখানে হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, আফিমের কথাও বলেছে।
বুঝতে পারলাম না কোরআনে নেশা নিষেধ, যেভাবে লিখেছে সেখানে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনের নাম নেই। লেখার কৌশল দেখে মনে হলো জনসম্মুখে ওইসব বস্তুর পরিচিতি করার উদ্দেশ্যেই রচনাকাররা লিখেছেন কি-না তা স্রষ্টাই জানেন। লেখাটি খুবই দৃষ্টিকট,ু অসঙ্গত। আমাদের এ ঢাকারই এক হিন্দু পণ্ডিত ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন প্রথম কোরআনের বাংলা অনুবাদ করেছেন তাও প্রায় শত বছর আগে। সেখানে এখন পর্যন্ত তেমন ত্রুটি ধরা পড়েনি।
কিন্তু নবম-১০ম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিকতা শিক্ষা বইয়ে এমন হলো কি করে? নাকি ইচ্ছা করেই এসব করা হয়েছে? হিন্দু দেব-দেবীদের তো হারাম-হালালের কোনো ব্যাপার নেই। হিন্দুদের নানা অনুষ্ঠানে, পূজা-পার্বণে পশু বলি দেয়া হয়। কোনো দেব-দেবীর নামে পশু বলি না দিয়েও হাজার হাজার পশুর মাংস তারা খায়, সেটা তাদের জন্য বৈধ? হিন্দুরা বলি দেয়, মুসলমানরা যে পশুর মাংস আহার করে তা বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহু আকবর ছাড়া ছুরি চালালে তা কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। শিশুদের এই গোমড়া করার চেষ্টা হলো কেন? গণমাধ্যম হিসেবে আমার দেশকে এই মারাত্মক ত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য এখন কি পুরস্কৃত করা হবে, নাকি আগের মতো টানহেঁচড়া করা হবে?
সেদিন চলার পথে হঠাত্ই এক কর্মী কীভাবে যে বলল বুঝতে পারলাম না। কিন্তু কথাটি বড় মারাত্মক।
সে বলছিল, ‘লিডার, পুলিশরা যে এত গুলি চালায়, কেন? তবে হাটে-বাজারে লোকজন বলাবলি করছে সারা বছর যে গোলাগুলি বিক্রি হয়েছে বা হারিয়েছে তা মিল করতে ইচ্ছে স্বাধীন গুলি চালাচ্ছে। যাতে ৫০টা খরচ করে ৫০০ বলতে পারে। ’ হতেও পারে, বাংলাদেশের হাটে ঘাটের কোনো আলোচনাই একেবারে মিথ্যে হয় না—এটাই বা হবে কেন?
আগামী ১৮ মার্চ সোমবার ঢাকা কোর্টে যাব। পাকিস্তান আমলে বহু মামলার আসামি হয়েছি, জেলেও গেছি। তখন জেল ছিল আমাদের জন্য ডাল-ভাত।
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়েও আসামি হয়েছিলাম। এবার হয়েছি পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে জান-প্রাণ কোরবানকারী, মানুষের জীবন-মান লুণ্ঠনকারী তস্য রাজাকারদের এক-দু’জনের নাম বলায় সেইসব রাজাকারের মামলায়। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে কোর্টে যাব। দেশে তো কোনো বিচার-আচার নেই। দেখিই না একবার, জেল ফাঁস কি হয়! তবে শুনছি কেউ কেউ ওইদিন আমার জন্য কোর্টে যাবেন।
আনন্দে মনটা ভরে গেছে। যাক বা না যাক, বলেছে তো, ওতেই খুশি। ’৯৯ সালে যখন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করি, তখন আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছিলে, কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী-ছেলেমেয়ে ছাড়া আর কেউ তার সঙ্গে নেই। এখন দেখছি তার চেয়েও দু’চার জন বেশি আছে। সেদিন গাজীপুরের একজন ফোন করে বলেছিলেন, আপনার কোর্টের জন্য যা খরচ হবে আমি দেব।
তাকে বলেছি, ‘মোকদ্দমার জন্য দিতে হবে না। যদি ইচ্ছে হয় দলের তহবিলে পাঠিয়ে দেবেন। ’ তিনি বলেছেন, কোন অ্যাকাউন্টে পাঠাব। তাই অ্যাকাউন্ট নম্বর দিলাম। কিছুদিন ধরে চারদিক থেকে আক্রমণের কারণে মনে হয় রাস্তাঘাটের মানুষের সহানুভূতি বেড়েছে।
সেদিন সিলেট থেকে আসার পথে রাস্তায় রাস্তায় সেখানেই বসেছি দু’একশ’-হাজার টাকা অনেকেই সাহায্য করেছে। তাতে রাস্তা খরচ হয়েও টাকা-পয়সা বেঁচে গেছে। মানুষ যদি এভাবে দু’হাত ঝেরে সাহায্য করে তাহলে রাজনীতিকদের যা খুশি তাই বলার পথ থাকবে না। যাকে তাকে ভেচকি দেয়া চলবে না। তাই মনস্থির করেছি, ১৮ তারিখ যিনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তার দরবারে হাজির হব।
যদি অনুমতি পাই জিজ্ঞেস করব, ঘর-বাড়ি, বাপ-মা ফেলে জীবনের মায়া কাটিয়ে হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ করে নিজের রক্ত ঝরিয়ে আমি হলাম স্বাধীনতাবিরোধী, আর যারা স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানের জন্য জীবনপাত করল, বাংলাদেশকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করল—তারা হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা। কাগজপত্র দিয়ে জিজ্ঞেস করব, বিএনপি জামায়াতি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে যদি অপরাধী হয় তাহলে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি
সিএসপি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে কেন অপরাধী নয়? এতকাল প্রশ্নটা ছিল আমার। এবার প্রশ্নটা তুলে ধরলাম সমগ্র জাতির সামনে। তারাই শ্রেষ্ঠ বিচারক, তারাই বিচার করবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।