আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নের ডুব (ধারাবাহিক)

চলো আবার সবুজ গড়ি

সাড়ে আটটা বাঁজে। এশার নামাজের সময় হয়ে এলো। মাহমুদ জায়নামাজটা বিছিয়ে দেয় লঞ্চের শীতল লৌহ প্রান্তরে। এটা লঞ্চের সামনে যেখানে দাড়ালে বাতাস তার আলতো স্পর্শে শিহরিত করে সেই যায়গ। স্রষ্টার সম্মুখে একমনে দাড়িয়ে আর পবন উড়িয়ে দিচ্ছে গায়ের জামাটাকে।

শীত মাত্র পরতে শুরু করেছে। কিন্তু কে জানতো এতো শক্তিশালী রূপে সে হামলে পরবে আমাদের চামড়ায়? রাত্রীর নিরবতাকে খানখান করে ভেসে আসে বাঙ্গলা সিনেমার আর্ত চিতকার। পাশেই কেবিনে কয়েকজন বসে তাস খেলছে... আর তাদের টিভিটায় চলছে গালাগালি আর মারামারিতে পরিপূর্ণ সব দৃশ্য। নামাজে একাগ্রতায় সমস্যা হচ্ছিলো। কিন্তু কি আর করার? মাঝে মাঝে ভাবে এতো শক্তিশালি একটি মাধ্যম চলচ্চিত্র।

এই মাধ্যম যদি সুস্থ মানুষদের হাতে থাকতো তাহলে এই দেশটার অনুকরনপ্রিয় মানুষগুলোকে ভালো করা ওয়ান টু’র ব্যাপার। সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর শিক্ষক হতে ব্যাস্ত। আজকের সমাজে এদের কোনো নিয়ন্ত্রন নেই। শিক্ষকদের অসহায় মুখের দিকে তাকালে সেই সব দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়না। সেখানে শুধুই অপরাগতার সফলতা খেলা করে।

চেয়ারটা টেনে বসে বসে রাত্রীর সৌন্দর্য উপভোগে ব্রতী হয়ে মাহমুদ বসে পরে ডেকের রেলিঙ্গের পাশেই। বা পাশে কুয়াশাচ্ছন্ন নদী আর ডানপাশে ধুমায়ীত বায়ুতে পরিপূর্ণ উল্লাসে ভরপুর এই যুগের বিবর্ণ কিছু প্রাণের হৈ হুল্লুরে জমা একটি কেবিন। বিষন্ন দৃষ্টিতে দেখে দেখে আবার নদীতে দৃষ্টি ফেরায়। ২১৩ নং কেবিনের বাচ্চাটি সেই সন্ধ্যা থেকে যে একটানা ভেঁপু বাঁজিয়ে চলছে এখনো থামার কোনো নাম নেই। মনে হয় লঞ্চ তার পছন্দ হয়নি।

এই লঞ্চটি অনেক পুরোনো। যদিও পুরোনো তবুও ঈদের এই ভিরে কিছুই করার ছিলোনা। সব বাহনই লোকে লোকারন্য। কেবিনের সামনের বারান্দ পর্যন্ত খালি নেই। ওখানেও বিছানা কাঁথা বিছিয়ে বসে পরেছে নাড়ীর টানে ছুটে চলা মানুষগুলো।

মা অনেক চেষ্টা করছে বাচ্চাটিকে ঘুম পাড়ানোর। কিন্তু কে শোনে কার কথা? চোখের পানি আর নাকের পানি একত্রিত করেই চলছে। অবশেষে মাতৃত্ত্বের আঁধারে মাথা ঢাকতেই কি সুন্দর চুপ হয়ে যায়। বিদ্রোহী ভঙ্গীতে নাড়তে থাকা ছোট ছোট লাল লাল কুসুম কুসুম পা গুলো ধীরে শান্ত হয়ে আসে। মনে হয় যেনো ওখানেই তার সকল সুখ আর শান্তি।

বড় বড় ছেলেগুলো ও যদি তাদের মায়েদের কাছে এভাবেই সুখ ও শান্তি খুঁজতো তাহলে সমাজটা কতোইনা সুখময় হতো। কেবিনের সামনেই লম্বা চুলওয়ালা একজন বুড়ো সাথে তার প্রিয়তমা বুড়িকে নিয়ে বিছানা পেতেছে। বুড়ো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তবে দরজা খোলা কেবিন থেকে অল্পবয়ষ্কা মা বুড়োর দিকে বড় বড় চোকে তাকাচ্ছে। কারন বুড়োর বিকট নাক ডাকা।

আর বুড়ি তার মাথার ঘোমটাটাকে আরো টেনে টুনে একদম বুক পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে। আর হায় হায় করছে। ভাবছে তার চারপাশে এতোগুলো পুরুষলোক নিশ্চই পর্দা ঠিকভাবে হচ্ছেনা। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.