সুইজারল্যান্ড চমৎকার দেশ জানা কথা, কিন্তু সুইজারল্যান্ড দেখার ইচ্ছা কয়েকশগুন বেড়েছে 'Dilwale Dulhania Le Jayenge' ছবিটি দেখার পর, ওই ছবির বেশিরভাগ শুটিং সুইজারল্যান্ড হয়েছিল। ছবির কিছু দৃশ্য দেখে মনে হয়েছিল রীতিমতো স্বর্গ!! আমরা ইউরোপ টুর দিব কিন্ত স্বর্গ-এ যাবনা তা কেমন করে হয়! তার উপর সুইজারল্যান্ড যাওয়াকে আরো পোক্ত করতে আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবি ওখানে ডক্টরেট (PhD) করছে! দুইদিনে স্বর্গের তেমন কিছুই দেখা যায়না, তবু আমার বান্ধবির অতি 'shortcut but intelligent plan' অনুযায়ি চলায় অনেক main attraction দেখতে পেরেছিলাম!!
সেপ্টেম্বর ২৯-এ প্লেন নামল Zurich এয়ারপোর্ট -এ। আমার বান্ধবি এসেছিলো আমাদেরকে নিতে। ওর বাসায় রাতে এক প্রস্থ আড্ডা দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমালাম। পরদিন শুরু হলো স্বর্গ দর্শন
১ম দিনঃ (সেপ্টেম্বর ৩০, ২০০৯)
বান্ধবী নিয়ে গেল তার ইউনিভার্সিটিতে - ETH University - ওরা বলে ই টি হা, H কে হা উচ্চারন করা হয়!! চমৎকার সাজানো গোছানো ইউনিভার্সিটি! মনে মনে ভাবলাম এত সুন্দরের মাঝে এরা পড়ে কেমনে! আমি হলে হা করে খালি সৌন্দর্য দেখতাম ওদের অফিস রুমগুলোও অনেক প্রফেশনাল, অফিস দেখে ওর practical research এর রুমে গেলাম।
সেখানে গিয়ে এমন কারসাজি করলাম ওদের কাজের কল কব্জা নিয়ে, মনে হলো ওই মুহুর্তে কিছু একটা আবিষ্কার করে patent বানিয়ে ফেলব আমরা দুপুরের খাবার খেলাম ভার্সিটিতেই, কোনোমতে গিলা যাকে বলে, কেন যেন ওইসব খাবার মুখে রুচেনা! খাবার শেষে গেলাম 'Botanical Garden ', চমতকার সবুজে ঘেরা! ওখানে ৩টা ডোম আছে, একেকটাতে একেক দেশে weather এবং সেই অনুযায়ি গাছপালা, ডোমগুতরে গুলোর ভেতরে ঢুকে মনে হচ্ছিল কোনো এক গভীর জঙ্গলে এসে গেছি!! জঙ্গল পর্ব শেষে শহরটা (Zurich) একটু ঘুরে দেখলাম। Zurich Lake -এ গেলাম, সেখানে পানির ফোয়ারায় রংধনু দেখা যাচ্ছিল, বিকেলটা যে কী ভীষন সুন্দর ছিল, কত আড্ডা দিলাম...কত nostalgic স্মৃতি নিয়ে কথা...আমাদের একসাথে বাংলাদেশে হস্টেল থাকতে কত অদ্ভুত স্ম্রৃতির গল্প!!!
ETH University ছাদ থেকে জুরিখ শহর:
দুপুরের খাবার ভার্সিটি ক্যামপাসে:
Botanical Garden-এর ডোম:
জুরিখ লেক:
২য় দিনঃ (অক্টোবর ০১, ২০০৯)
পরদিন গেলাম আল্পস পর্বতমালা দেখাতে। প্রথমে Zurich থেকে Luzern যেতে হয় ট্রেনে, ট্রেনে যেতে যেতে দুপাশের যেসব দৃশ্য দেখেছি তা অবর্ননীয়। কত মুভীতে এই অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যগুলো একসময় দেখেছি!! এরপর Luzern থেকে জাহাজে করে গেলাম Pilatus । জাহাজের সেই journey আরেক অসাধারন অভিজ্ঞতা! এইগুলো আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা।
আমরা জাহাজের দোতালায় বসে চা কফি খেলাম, কিছু পাখি আমাদের খাবারের লোভে আমাদের পাশে পাশে উড়ছিল, লেকের দুইধারে অপুর্ব সব জায়গা, অদ্ভুত আর কী রোমাঞ্চকর সময় কেটেছে সেদিন!
Pilatus পৌছে আমার সুখ শেষ কারন পরবর্তী adventure হলো ছোটো এবং তেরছা(!) একটা ট্রেন করে ৭০০০ ফুট উপরে উঠা এবংসেই ট্রেন 45 Deg angle-এ উঠে!! বলা হয়ে থাকে সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে খাড়া ট্রেন ভ্রমন (Steepest Train Ride)। আমি উচ্চতার ব্যাপারে একটু ভীতু মানুষ, ট্রেন দেখে আমি ভয়ে কাইত!! আমাকে সবাই মিলে বোঝালো ট্রেনটা কতটা safe & risk free! অনেক সাহস করে বান্ধবীকে বিশষাস করে অবশেষে উঠলাম, যতটা ভয় পাব ভেবেছিলাম ততটা পাইনি, আমাকে কথা বলে busy রাখার চেষ্টা চলছিল আর ফাকে ফাকে আমিও দেখছিলাম ride-টা আসলেই অসাধারন (এক কথায় mindblowing)!!
এক পর্যায়ে এসে হাত বের করে মেঘ পর্যন্ত ধরা যায়। ৭০০০ ফুট উপরে জায়গাটাকে বলে 'Pilatus Kulm', ওখানে পৌছেই দেখি খুব বিষন্ন সুরে একজন বাশী বাজাচ্ছে! আর এত উপরে হিমশীতল ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম, তবু কীযে ভালো লাগছিল!!
Pilatus অনেক ঘুরাঘুরি করে ট্রেনে করে Luzern ফেরত আসলাম, ওখানে একটা খুব চমৎকার ব্রীজ আছে, চারদিক ফুলে ঘেরা, অনেক মুভীর গানের শুটিং নাকি সেখানে হয়। আরো কিছু আশপাশ দেখে বাসা ফেরত গেলাম। ফেরার সময় ট্রেনে বারবার মনে হচ্ছিল নিশ্চয়ই জিবনে কোনো এক ভাল কাজ করেছি, যার জন্য আজ বিধাতার প্রকৃতির এই অপুর্ব রুপ আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে...আমার সেইদিনের সেই মুগ্ধতা এখনো কাটেনি আর এই জীবনে কাটবে বলেও মনে হয়না!!!
Pilatus-এ খাড়া ট্রেন ভ্রমন:
Pilatus-এ যাবার পথে:
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।