সবাই বলে, ছোটবেলায় ঈদের একটা আলাদা মজা থাকে, বড় হলে আর সেভাবে অনুভব করা যায় না। আমার তো এখনও ঈদ আসলে 'ঈদ ঈদ' ভাব লাগে, এখনও মনে হয় বড় হয়ে উঠতে পারলাম না। অবশ্য ছোটবেলার মত অত বেশী আনন্দ হয়তো পাই না।
তখন রোজার ঈদ, কুরবানীর ঈদ দুটোতেই সমান আনন্দ করতাম। ঈদের দুই-তিন দিন আগে থেকেই একেকটা বাসা থেকে ম্যা ম্যা শব্দ আসতে থাকত সারারাত, মাঝে মধ্যে একটু হাম্বা ডাকও শোনা যেত।
এমনভাবে বলছি যেন এখন আর শোনা যায় না, এখনও শোনা যায়, তবে ছোটবেলায় এই ডাকগুলো শুনে মজা পেতাম, কার বাড়ির গরু কিভাবে ডাকে সেটা নিয়ে গবেষণা করতাম।
ঈদের দিন ভোর বেলা উঠে আমি আর ছোটবোন গোসল সেরে রোজার ঈদের জামা বের করে পরে নিতাম। (রোজার ঈদের পরপরই জামা তুলে রাখতাম কুরবানীর ঈদে আবার পরার জন্য। ) এরপর শুরু হত আমাদের অভিযান। কোন বাড়িতে কখন কুরবানী দিচ্ছে সব ঘুরে ঘুরে দেখতাম।
একটু ভয় ভয়ও লাগত, তারপরও কেন যেন সব বাড়ির কুরবানী দেখতে ইচ্ছা করত, নিজেদেরটা তো দেখতামই।
এরপর কসাইরা চামড়া ছাড়িয়ে মাংসগুলো কাঠের গুড়ির উপর রেখে কিভাবে টুকরো টুকরো করে ফেলত, খুব অবাক হয়ে দেখতাম। পুরোটা আব্বা তদারকি করতেন। এরপর আম্মাকে সব বুঝিয়ে দিতেন, আম্মা মাংস তিনভাগ করে গুছিয়ে ফেলতেন। এরই মধ্যে ঝটপট এক হাড়ি মাংস রান্নাও করে ফেলতেন।
এরপর শুরু হত আমাদের মাংস বিতরণের অভিযান। গরীবদের ভাগটা আগেই বুঝিয়ে দিতেন আম্মা। আত্মীয়দের বাসায় মাংস পৌছানোর কাজটা আব্বা করতেন। আর আমার আর ছোট বোনের উপর ছিল প্রতিবেশীদের বাসায় মাংস দেয়ার কাজ। রোজার ঈদে যেভাবে পাড়ার সব পরিচিতদের বাসায় গিয়ে গিয়ে সেমাই-পায়েস খেতাম সেইভাবে কুরবানীর ঈদে সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংসের পোটলা দিয়ে আসতাম দুই বোন।
মজাই লাগত।
দুপুরে কুরবানীর মাংস দিয়ে পোলাও খাওয়ার পর শুরু হত আম্মার মাংস জ্বাল দেয়া। ডিপফ্রিজে কিছু মাংস রাখার পর বাকীটুকু জ্বাল দিয়ে নরমাল ফ্রিজে রেখে দিতেন। আমিও মাঝে মাঝে একটু নাড়াচাড়া করে সাহায্য করতাম, কিন্তু হাত ব্যথা হয়ে যেত আর একটু পরপর আম্মাকে ডেকে বলতাম, আম্মা, হইছে না? আম্মা বলতেন, না হয়নাই, আরেকটু লাগবে, নাড়তে থাক।
এখন ছোটবেলার মত কুরবানী দেখার আগ্রহ পাই না।
তবে মাংস বিতরণের কাজটা এখনও করি, যদিও দুই বাড়ির মধ্যে সেটা সীমিত থাকে, তবু করি তো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।