যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
নতুন যন্ত্রখানি কাজ করছে কিনা এটা কিভাবে পরীক্ষা করা যায় তা নিয়ে মোটামুটি শোরগোল। বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী নিজে কয়েকবার পরীক্ষা করেছেন। দরজা বন্ধ করে। এখন সুপারভাইজারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। পদমর্যাদায় সুপারভাইজার একজন সচিব, এবং তিনি যখন এই ছোট্ট যন্ত্র স্থাপনের তদারকি করছেন তখন বুঝতে হবে এটা যেসে লোকের জন্য নয়।
খোদ প্রধানমন্ত্রীর টয়লেটে ডিজিটাল কমোড স্থাপন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রত্যেক কর্মকর্তা, কর্মচারী শিহরিত। মহেন্দ্রেক্ষণের অপেক্ষায় - কখন প্রধানমন্ত্রী প্রথম সেই কমোড ব্যবহার করবেন। দেশের সব মিডিয়া উপস্থিত, সেনাবাহিনীর বাদ্যবাদকরা তৈরী, টিভি ক্যামেরা ঘুরছে চারদিকে। বিদেশী কুটনৈতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দেশের উন্নয়নের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কমোডে বসলেন। প্রকৌশলী দেখিয়ে দিলেন ব্যবহারবিধি। ডানপাশের ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠলো নো সিট ইজ ডিটেক্টেড। সচিব মুগ্ধ। মেসেজের নিচে অনেক উপাদানের নাম লেখা।
সবকিছুই জিরো জিরো।
প্রকৌশলী বললেন, স্যার, এখানে একটা শক্তিশালী জেনেটিক চিপ বসানো হয়েছে, আপনার রক্তের চাপ, কোলেস্টরলের মাত্রা, মারাত্মক কোনো ভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়েছে কিনা মুহূর্তে তা জেনে যাবেন।
সচিব মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এবার সত্যিই পূর্ণ হতে চললো। শুধালেন, কি করতে হবে সেজন্য?
ভেরি সিম্পল।
প্রকৌশলী একটা টাচবার দেখালেন। বললেন, এটাতে স্পর্শ করলেই আপনাআপনি সব তথ্য চলে আসবে। একটা মেনু চেপে প্রকৌশলী দেখিয়ে দিলেন টাচস্ক্রিনের ফাংশনিং।
সবকিছু জেনেবুঝে সচিব সন্তুষ্ট। দৌড়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে।
বললেন, আপা, টয়লেট রেডি! তার গলায় আনন্দের হেচকি।
প্রধানমন্ত্রী বললেন, তুমি নিজে বসে দেখেছো তো!
সচিব বললেন, জ্বি জ্বি আপা। একটা সুন্দর ডিজিটাল স্ক্রিন বসেছে সামনে - সেখানে সব ডিজিটাল মেসেজ চলে আসছে।
তাই নাকি! প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল মেসেজের কথা শুনে লাফিয়ে উঠলেন। গ্রেট! এক কাজ করো, আমার টয়লেট যে ডিজিটাল হয়েছে সেটা মানুষকে দেখাবার ব্যবস্থা করো! পাঁচ মিনিটির মধ্যে টয়লেটে উদ্বোধন করবো।
পেটটাও ভালো যাচ্ছে না!
সচিবের মাথায় আকাশা ভেঙে পড়লো। প্রধানমন্ত্রী যখন টয়লেটে ঢুকবে সেটা সে কিভাবে দেশবাসীকে দেখাবে! ক্যামেরা নিয়ে তো আর প্রধানমন্ত্রীর টয়লেটে ঢোকা যায় না!
তো! মুখ্য সচিব শলাপরামর্শে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন দলীয় নেতাদের সাথে। এই বিপদের মুহূর্তে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দলীয় নেতারাই তাকে উদ্ধার করতে পারবেন। অতীতেও এমনটি ঘটেছে।
অবশেষে চমৎকার একটা আইডিয়া পাওয়া গেলো।
সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলে প্রধানমন্ত্রীর টয়লেটের ডিজিটাল স্ক্রিনটা বাইরে নিয়ে আসা হবে। টিভিতে সম্প্রচারিত হবে। কুটনৈতিকবৃন্দ, মন্ত্রীপরিষদ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বচক্ষে দেখবেন সেই স্ক্রিনে ডিজিটাল টয়লেটের অভিযাত্রা।
প্রধানমন্ত্রী চেয়ার থেকে উঠলেন। দপ্তরকক্ষের সংলগ্ন কক্ষটি বিশ্রামের জন্য নিদৃষ্ট।
সেখানে দাড়িয়ে আছেন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও সচিব। প্রধানমন্ত্রী রুমে ঢুকেই বললেন, কি বলেছিলাম না আপনাদের ডিজিটাল বাংলাদেশে উপহার দেবো! কখনও কি ভেবেছিলেন ডিজিটাল টয়লেটও আপনাদের জন্য আমি নিয়ে আসবো?
সবাই মাথা নাড়ায়। এতো রীতিমত অকল্পনীয়। একজন নারী নেত্রীর সাথে করমর্দন করে প্রধানমন্ত্রী ঢুকে গেলেন বাথরুমে। দাপ্তরিক কক্ষের বাইরে অপেক্ষমান অতিথিদের সামনে বিশাল টিভি স্ক্রিন।
সবাই দেখলেন প্রধানমন্ত্রী বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন। দরজা বন্ধ হলো। ক্যামেরা ফ্রিজ।
কিছুক্ষণ পরে স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ডিজিটাল একটা উইন্ডো। সবগুলো টিভি চ্যানেল প্রচার করছে এই অসামান্য প্রযুক্তির প্রয়োগ দেশব্যাপী।
দেশের মানুষ দেখছেন নিঃশ্বাস বন্ধ করে। কি ভেসে ওঠে উইন্ডোতে! মুখ্য সচিব, বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ঘামছেন, ডিজিটাল টয়লেট কাজ করবে তো!
ঠিক তখনই চেহারায় স্বস্তি ফিরে এলো প্রকৌশলীর। কলরব করে উঠলো হলরুমের অতিথি। সমস্ত দেশের মানুষ চোখ বড় বড় তাকিয়ে থাকলো স্ক্রিনের দিকে। মূখ্য সচিব হতভম্ব হয়ে গেলেন টিভি স্ক্রিনের দিকে চেয়ে।
সেখানে বড় বড় করে লেখা রয়েছে, ওয়ান শ্রিংক সিট ইজ ডিটেক্টেড!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।