আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশু কিশোরকে কি খাবার দেয়া হবে



শিশু কিশোরকে কি খাবার দেয়া হবে তা নিয়ে অনেক মা-বাবা কিংবা অভিভাবকদের চিন্তার কোনো শেষ নেই। কারণ মা-বাবা এবং অভিভাবকরা সব সময় কামানা করেন তার সন্তানটি যেন সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে। এ কারণে গরীব বাবা-মা সন্তানের মুখে সাধারণ খাবার দাবার তুলে দেন আর দুশ্চিন্তায় ভুগেন। তার সন্তানটি হয়ত সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে না। অথচ খাবারটি সুষম হলে তাই দেহের প্রয়োজনীয় বৃদ্ধির সহায়তা করে।

এ জন্য দামি খাবারের কোনো দরকার নেই। অন্যদিকে ধনী মা-বাবা বা অভিভাবকরা এই পুষ্টির যোগান দিতে যেয়ে কথিত দামি এবং তেল-ঘি সমৃদ্ধ মজাদার খাবার অকাতরে সন্তানের পাতে তুলে দেন-যা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত যে কোনো বয়সের মানুষের খাদ্য তালিকা সুষম হতে হবে। সুষম বলতে একজন পুষ্টি বা খাদ্যবিদ, শর্করা, স্নেহ, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ উপাদানকে বুঝিয়ে থাকেন। এ সাথে অবশ্য পানির কথাটি এসে যাবে।

খাদ্যের সাথে প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণেরও প্রয়োজন রয়েছে। আসলে খাবারের দাম থেকে তার পুষ্টিমান যাচাই হতে পারে না। ডাল-ভাত সস্তা খাবার। অন্যদিকে যে কোনো ধরণের গোশতই দামি খাবার। কিন্তু ডাল-ভাত খেলে দেহের বিশেষ করে শিশু এবং কিশোরের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান ঘটতে পারে।

অর্থাৎ গোশতের মতো দামি খাবার দেহের জন্য যতোটা আমিষের যোগান দেয় তার প্রায় সবটাই পাওয়া যেতে পারে যে কোনো ধরণের ডাল এবং সাথে আরেকটি শর্করা জাতীয় খাবার থেকে। এই শর্করা জাতীয় খাবার ভাতই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এটি রুটি বা অন্য কিছু হতে পারে। রুটি হলে তা গমের আটা না হয়ে যদি ভুট্টা বা যবের আটা হয় তাতেও কোনো অসুবিধা হবে না। বাড়ন্ত শিশু বা কিশোরের জন্য বাড়তি আমিষের প্রয়োজন রয়েছে।

এ কথা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। তার এই বাড়তি আমিষের চাহিদাও সহজেই ডাল ও শর্করা জাতীয় খাবারের সংমিশ্রণে প্রস্তুত খাদ্য দিয়ে পূরণ করা যায়। বাংলাদেশে এ জাতীয় একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য হলো খিচুরি। মূল উপাদান ঠিক রেখে এই খাবারকেই নানা ভাবে মুখরোচক এবং উপাদেয় করে সন্তান সহ বাড়ির সবার পাতে পরিবেশন করা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো খাদ্য সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানের অভাবে একশ্রেণীর মানুষ চারপাশে সস্তায় প্রয়োজনীয় খাবারের মজুদ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করতে পারছেন না।

আর অন্য একটি শ্রেণী সস্তা খাবারে দিকেই ঝুঁকেন না। তারা দামী এবং সেরা খাবার যোগানোর জন্য যা নিয়ে আসেন একজন খাদ্য বিজ্ঞানী সে সব খাবারকে এক কথায় বাজে ছাড়া আর কিছুই বলতে পারবেন না। তারাও সুষম খাদ্যের কথাটি ভুলে যান তার জায়গায় সন্তানকে দেহের জন্য ক্ষতিকর রিচ ফুড বা সমৃদ্ধ খাবারের যোগান দেন অকাতরে। এই দুই শ্রেণীর মধ্যেই খাদ্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের অভাব রয়েছে তা স্বীকার করতেই হবে। কিংবা পড়ালেখা বা প্রচার মাধ্যম থেকে যে জ্ঞান তারা পাচ্ছেন তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না।

আর এ কারণেই এই দুই শ্রেণীর মানুষই তাদের সন্তানের সঠিকভাবে বেড়ে উঠার পথে প্রধান বাধা হয়ে উঠছেন তা বোধ হয় স্বীকার করতে কারোই অসুবিধা হবে না। খাদ্যকে সুষম করতে হলে তাতে আমিষ, শর্করা, স্নেহসহ খনিজ, ভিটামিন প্রভৃতি থাকতে হবে। তেল দিয়ে খাবার রান্না হয় তা থেকে এই স্নেহ জাতীয় খাবারের যোগান আসতে পারে। আর আমিষ ও শর্করা নিয়ে আগেই কথা বলেছি। বাংলাদেশে সব ঋতুতেই নানা ধরণের দেশি ফল এবং শাক সবজি পাওয়া যায়।

দেশি এই সব ফল এবং শাক সবজি দামে মোটেও বেশি নয়। তাই যদি নিয়মিত এ সব খাবার সন্তানের মুখে তুলে দেয়া হয় তা হলে তার খনিজ ও ভিটামিনের যোগান ঠিক থাকবে। সন্তানের দৈহিক ও মানসিকভাবে তার বেড়ে উঠতে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু সঠিক পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা না করে শিশু বা কিশোরকে দামি এবং তেল-চর্বি বহুল সমৃদ্ধ খাবার দেয়া ঠিক হবে না। বরং এ জাতীয় খাবার হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দিতে পারে।

শিশু কিশোরের দৈহিক উন্নয়ন ঘটাতে যেয়ে তাকে বাড়তি ওজনের বিপদের দিকে ঠেলে দেবেন না। ইদানিংকালে চিকিৎসা এবং খাদ্য বিশেষজ্ঞরা শিশু-কিশোরদের বাড়তি ওজনের ব্যাপারে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। অনেকেই আবার বলে থাকেন তার বাচ্চা সবজি খেতে চায় না বা গোশত ছাড়া আর কিছুই মুখে দেয় না। এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে বাবা-মা বা অভিভাবক তার সঠিক খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো শিশুই মুখে কোনো স্বাদ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে না।

বরং স্থান ও কালভেদে তার খাদ্য অভ্যাস গড়ে ওঠে। আর এ অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেন বাবা-মা সহ পরিবারের সবাই। শিশুকে বিশেষ কোনো খাবার বা আমিষ এককভাবে গ্রহণ করলেই তার দেহের পুষ্টির প্রয়োজন মিটবে না। শিশু-কিশোরকে অবশ্যই সুষম খাদ্য অর্থাৎ মিশ্র খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাই শিশুর খাদ্য অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে সতর্ক হবেন।

চারপাশে সহজলভ্য এবং সহনীয় দামের খাদ্যদ্রব্য থেকে যখন শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির সহজ যোগান পাওয়া যাবে তখন কেনো কথিত দামী খাদ্য দ্রব্যের দিকে ঝুকবেন ? কমদামি খাবার মানেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক এবং দামি মানেই ভালো সে কথা সব সময় ঠিক নয় সে কথা নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পেরেছেন। #

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.