বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
স্পর্শ নয়, মৌনতা নয় পাশাপাশি থাকা
মাটির গভীরে মাটি আর জলের গভীরে জল
কাব্য নয়, রাত জাগা নয়, পাশাপাশি হাঁটা ...
রোদের ভেতরে রোদ
ক্রোধের ভেতরে ক্রোধ
এ রকম ভালোবাসায় বিশ্বাসী নও তুমি
অথচ তোমাকে আজ দেখি এই আমি।
অজস্র ছায়ার পাশে দাঁড়িয়ে
কী যেন খুঁজছ
রোদের ভেতরে রোদ
ক্রোধের ভেতরে ক্রোধ
ওপরের লেখাটা যদি কবিতা হয় তো সেটি কবিতা হিসেবে উৎরে যাওয়ারই কথা। কিন্তু, সুর করা হলে? সুর করা হলেও অনেক প্রশ্ন এসে ভিড় করবে।
কেননা, গানের মানে থাকে। ‘সন্ধ্যার ছায়া নামে ঝিরিঝিরি হাওয়া/ভালো লাগে জীবনের এই গান গাওয়া। ’ কবিতার মানে নিয়ে হইচই ওঠে না। ধরে নেওয়া হয় আধুনিক কবিতা, চুপ করে থাকাই ভালো। জটিলতা তো থাকবেই।
গানে সেই জটিলতা সহ্য হবে কেন? রোদের ভেতরে রোদ/ ক্রোধের ভেতরে ক্রোধ ...এর মানেই বা কি?
মনে আছে। ২০০০ সালের মাঝামাঝি এক সকাল। ঘরে বসে সিগারেট টানছি। জন এল। অ্যাকুয়েস্টিক গিটারটা টেনে নিয়ে নতুন কম্পোজিশনটা শোনাল ।
ই-মাইনর। রিফ শুনতে শুনতে টলটলে মেলোডি আছে টের পেলাম। সকাল বেলা। তখনও ঘোরের মধ্যে, খালি পেটে অনেক কটা সিগারেট খাওয়ার কারণেই হয় তো। তখনকার বেকার আর বেকারার উত্তাল রাত্রিদিন।
মাথায় কত কথা যে ঘুরত। প্লেটোনিক লাভ নিয়ে ভাবতাম। প্লেটোনিক লাভ= শরীরহীন মননির্ভর প্রেম। ভাবতাম নিষ্কাম প্রেম সম্ভব কিনা। প্রাণির পক্ষে অ্যাসেক্সুয়াল হওয়া সম্ভব কিনা।
সেসব অপ্রয়োজনীয় ভাবনা নিয়ে ডাইরির পাতা ভরাতাম।
স্পর্শ নয়, যৌনতা নয় পাশাপাশি থাকা
মাটির গভীরে মাটি আর জলের গভীরে জল
কাব্য নয়, রাত জাগা নয়, পাশাপাশি হাঁটা ...
তৃতীয় লাইন: ‘কাব্য নয়, রাত জাগা নয়, পাশাপাশি হাঁটা’ ...আমরা ছেলেবেলায় শুনতাম বিয়ের রাতে বর বউ রাত জেগে কবিতা পাঠ করে। তার মানে বিয়ে নয়, কেবলি পাশাপাশি হাঁটা।
এ রকম ভালোবাসায় বিশ্বাসী নও তুমি
অথচ তোমাকে আজ দেখি এই আমি।
অজস্র ছায়ার পাশে দাঁড়িয়ে কী যেন খুঁজছ
কোনও মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলা।
কেন সেই মেয়েটি শরীরহীন মন-নির্ভর প্রেমে বিশ্বাসী নয়? আমি বলতে পারি না। কেননা, এ কথাগুলির ভিতরে সত্য কোনও ঘটনাই নেই। নিছক কল্পনা। ‘অজস্র ছায়ার পাশে দাঁড়িয়ে কী যেন খুঁজছ’ ...কি এর মানে? মেয়েটা কি নিভৃতি চায়, ভিড়ের মাঝখান থেকে নি®কৃতি চায়? হতে পারে। ক্লান্ত? হতে পারে।
রোদের ভেতরে রোদ
ক্রোধের ভেতরে ক্রোধ
এই দুটো লাইন মূল কবিতায় ছিল কিনা বলতে পারছি না। সম্ভবত গানে কোরাসের কারণে এসেছে। এসে রহস্যময়তা সৃষ্টি করেছে। তবে তৃতীয় লাইন, অর্থাৎ, কাব্য নয়, রাত জাগা নয়, পাশাপাশি হাঁটা ...এর অনুষঙ্গে অনেকটা স্বচ্ছ হয়। রোদের ভিতর পাশাপাশি হাঁটা ...
কিন্তু, ক্রোধ কেন?
তখন বলছিলাম, ভাবতাম নিষ্কাম প্রেম সম্ভব কিনা।
প্রাণির পক্ষে অ্যাসেক্সুয়াল হওয়া সম্ভব কিনা। ক্রোধ =যৌনতা ধরা যায়। যেমন, মাটির গভীরে মাটি আর জলের গভীরে জল ...তেমনি রোদের ভিতরে নিষ্কামমনে পাশাপাশি হাঁটলে ও ক্রোধ ভিতরে ভিতরে থাকে।
ডায়েরিটা বার করে লেখাটা জনকে দেখালাম। মজা করে বললাম: প্লেটোনিক লভ নিয়ে লেখা।
জন পরবর্তী প্রজন্মহেতু ‘স্পর্শ নয়, যৌনতা নয় পাশাপাশি থাকা’ এই লাইনটা রেখেই সুর করা শুরু করল। আমি হা হা করে উঠলাম। বললাম, কবিতায় যা সম্ভব; গানে তা সম্ভব নয়। গান আর কবিতার পার্থক্য সবে বুঝতে শিখছি। বয়স যদিও তিরিশের কাছাকাছি।
আমার বুদ্ধিশুদ্ধি বিলম্বে বিকাশপ্রাপ্ত হয়। যাক, বংশের ইজ্জ্বত আর পারিবারিক সম্মান বাঁচাতেই ‘যৌনতা’ কেটে ‘মৌনতা’ করে দিলাম। কবিতায় না হলেও গানে আরও জটিলতার সৃষ্টি হল।
জন
এর পরও প্রশ্ন ওঠে-এত কঠিন কথা আর ভাবের লেখা ওদের দেওয়া হল কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে কেবল বলল, তখন কে জানত লোকে ওদের চিনবে! ওদের গানও শুনবে! আমি ভাবতাম, গান করতে চাইছে করুক, কতজনই তো করে। বন্ধুদের শোনাবে ... এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার বন্ধুদের গান শুনিয়ে এল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ...
ব্লুজ অ্যান্ড রোদ নামটা কিন্ত আমি দিইনি, দিয়েছে জন এর ছোট ভাই জেমস (স্টেনটোরিয়ান ব্যান্ডের ফাউন্ডার মেম্বার, তপুর (যাত্রীর) লিড গিটারিস্ট) ব্লুজ অ্যান্ড রোদ মানে কি? গানে রোদ শব্দটা থাকায় রোদ।
কিন্তু ব্লুজ? ব্লুজ কি দুঃখের ইঙ্গিতবহ? হতে পারে। নিষ্কাম হয়ে শরীরহীন মন-নির্ভর প্রেম না করার দুঃখ?
গানটা এখন আমার শুনলে তত ভালো লাগে না, ২০০০/২০০১ এ শুনলে যেমনটা লাগত। আট নয় বছর আগের রেকডিং, গাওয়া, বাজানো । এখন আর অত ম্যাচিওর লাগে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।