"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
এনালগ মনে ডিজিটাল প্রেম
এনালগ যুগে প্রথম যেদিন আমার এনালগ মন নিয়ে একটা এনালগ ভাবনার মেয়ের সাথে ভালবাসার দুয়ারে লগিন করলাম সেদিন থেকেই আমি মনে মনে ডিজিটাল হয়ে গেলাম। আমার হাতের এনালগ ঘড়ির কাঁটা আমার সার্বক্ষণিক ভাবনায় ডিজিটালে রূপ নিল। আমার দিন বদলের শুরুটা মনে হয় তখনি। ডিজিটাল কি করে হলাম সে কথায় পরে আসছি। সে যুগে ইন্টারনেটের কোন বালাই ছিলনা।
ডিজিটাল ফোন ছিলনা, মোবাইলতো দূরের কথা। ডিজিটাল ঘড়ি তখনো বাজারে আসেনি। প্রথম ক্যাসিও কোম্পানির নাম শুনি ভার্সিটিতে পড়ার শেষ দিকে। জাপানের সেই ক্যাসিও ক্যালকুলেটর প্রথম ব্যবহার করি ঢাকায় এসে চাকরিতে যোগ দেবার পর। তখন ক্যালকুলেটরের প্রধান কাজ ছিল যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ করা।
অবশ্য ক্যাসিওর আগে “টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট” কোম্পানির বেশ কিছু দামী ক্যালকুলেটর বাজারে এসেছিল। সেগুলো ছিল অত্যধুনিক ও সায়েন্টিফিক। সেগুলোর দাম ছিল অনেক বেশী তাই ছাত্রাবস্থায় পেলেও হয়তো কেনার কথা ভাবতেই পারতাম না। সৌভাগ্যক্রমে ঢাকায় এসে চাকরিতে যোগ দেবার বছর খানেকের মধ্যে একটা “টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট”-এর একটা ক্যালকুলেটর কেনার সৌভাগ্য হয়েছিল এবং সেটা ছিল সেকেন্ড হ্যান্ড। স্টেডিয়ামের একটা ইলেকট্রোনিক্সের দোকান থেকে কিনেছিলাম।
কেনার অবশ্য কারণও ছিল। তখন হাইড্রোফাফিক ও ট্রায়েঙ্গেলুশেন সার্ভের কাজে জটিল কিছু ক্যালকুলেশনের করার জন্য ক্যালকুলেটর অত্যাবশ্যক হয়ে পরেছিল। পরবর্তীতে অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ক্যসিও ক্যালকুলেটরের রমরমা ব্যবসা। ক্যাসিওর ডিজিটাল ঘড়ি বাজারে এলো আরো কিছুকাল পরে।
যাই হোক, যা বলছিলাম।
আমার এনালগ ভাবনা ডিজিটালে রূপন্তারের কাহিনীটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুনা। স্কুলের গন্ডি পেরোনোর আগেই আমার এনালগ মনে একটা এনালগ টাইপের প্রেম লগিন করবো করবো অবস্থা। আমার এনালগ বাড়ীর (একতলা বাড়ী) ছাদ থেকে অদূরেই ডিজিটাল বাড়ীর (দোতালা বাড়ী) ছাদের দিকে আলোর গতিপথের মতো সরল দৃষ্টিতে তাকালেই আমার সমবয়সী কিংবা ছোট বড় কতিপয় মেয়েদের দেখা পাওয়া যেত। তারা অবিবাহিতা চার বোন ছিল আর ছিল একটা মাত্র ছোট ভাই। তারা বিকেল হলেই নিয়মিত ছাদে উঠতো, বেড়াতো, খেলতো, হাসতো আর মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ীর দিকে তাকিয়ে থাকতো।
আমিও তাদের তাকানোর প্রতি সম্মান রেখে রোজই ছাদে উঠতাম। ঘুড়ি ওড়ানোর দিনে ঘুড়ি ওড়াতাম। কদিন পর দেখি ঐ বাড়ীর ছেলেটাও ঘুড়ি ওড়ায়। বেশ মজাই হলো। ঘুড়িতে প্যাঁচ লাগতো আর একার পর এক ঐ ছেলের ঘুড়ি ভাকাট্টা হতো।
ছোটবেলায় নারিন্দায় মামাদের হাতে ঘুড়ির সূতো মাঞ্জা দেয়ার অভিজ্ঞতাটা ভালই কাজে লাগছিল। আমার ডিজিটাল হবার প্রথম পদক্ষেপ। আমাকে রোজ হিসেব রাখতে হতো কয়টা ঘুড়ি কাটলাম। প্রতি মাসের শেষে কাটা ঘুড়ির সংখ্যা কত সেটা ডিজিটালি কাউন্ট করা শুরু করলাম। ইতিমধ্যে সেই ছেলে আমার ফ্যান হয়ে গেল।
সে ঘুড়ি ওড়ালে আমি আর তার ঘুড়ি কাটিনা। সে আমার বাসায় আসে। আমিও তাদের বাসায় যাই। তার বোনদের সাথে পরিচিত হই। তাদের সাথে গান শোনা, গল্প করা, গল্পের বই পড়া এমনকি সিনেমা হলে দল বেঁধে সিনেমা পর্যন্ত দেখতে যাই।
পাড়ার একমাত্র ছেলে আমি যে অমন এক জাঁদরেল উকিলের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতে পারতো।
অবশেষে একদিন স্কুলের গন্ডি পেরোলাম। সেই সাথে তাদের বাসায় যাতায়াত আগের মতোই চলতে থাকলো। আমি ক্রমশই যেন আরো বেশী ডিজিটাল হয়ে গেলাম। কারণ তাদের বাসায় কবে গেলাম, কতক্ষণ থাকলাম সবকিছু নিয়মিত ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ হতে থাকলো।
আগে কখনো মাস দিন ক্ষণের হিসেব কষতাম না, তখন আমি এতো বেশী ডিজিটাল হয়ে পড়লাম যে প্রতি মুহূর্তের হিসেব রাখা শুরু করলাম। সেই বাড়ীর বিশেষ একজন আমাকে এনালগ থেকে কিভাবে যেন ডিজিটালে রূপান্তরিত করে ছাড়লো। আমি তার সাথে এনালগ ফোনে সাধারণ কথা বলি, অথচ ডিজিটালি কাউন্ট করি কতক্ষণ তার সাথে কথা হলো। আমি ফাউন্টেইন পেনে তাকে এনালগ চিঠি লিখি অথচ ডিজিটালি হিসেব রাখি আমি তাকে কটা চিঠি লিখলাম আর সে আমাকে কটা চিঠির জবাব দিল। আমি এনালগ ঘড়িতে ডিজিটালি সময় গুনি কখন কিভাবে তার সাথে দেখা হবে।
বিকেল হতে আর কত বাকি? কথন সে ছাদে উঠবে। এভাবেই আমার এনালগ মন ডিজিটালে বদলে গেল।
আজ এটুকুই। সময় পেলে আর আপনাদের ভাল লাগলে, চলবে........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।