শারীরিক অক্ষমতা কোন প্রতিবন্ধকতা নয়। অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও আত্মপ্রত্যয় মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের উচ্চ শিখরে। এজন্য সততা আর নিষ্ঠার সাথে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে। প্রতিবন্ধি নারীরা সমাজের সবচেয়ে বেশি অধিকার বঞ্চিত। তারা দেশের বৃহৎ জনগোষ্টির মধ্যে একজন হলেও অধিকার আদায়ের লক্ষে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্যের কারণে প্রতিবন্ধিদের শিক্ষা বিস্তারে নানা অন্তরায় সৃষ্টি করছে। তারা শিক্ষা ক্ষেত্রের প্রতিটি ধাপে ধাপে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের অধিকার ও দাবি গুলো অতি স্পর্শকাতর। প্রতিকুল অবস্থার কারণে প্রতিবন্ধিরা বহুক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হলেও তা দূর করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্য উদ্যোগ বাড়ছে।
প্রতিবন্ধকতা কোন অভিশাপ নয়। হতাশার মাঝে আশার আলো দেখার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যেতে হবে। আগামিতে উদার মানসিকতা নিয়ে প্রতিবন্ধিদের জন্য সকলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে বাংলাদেশ গর্বিত হবে বলে মনে করি।
বাবা ডাঃ মোঃ আজাহারুল ইসলাম। মাতা মৃত আমিরুন্নেছা।
বাবা মায়ের নয় সন্তানের মধ্যে মিষ্টি ও খুশী যমজ বোন । পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই ২০০৮ সালের b‡f¤^‡i সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। বড় ভাই শহীদুল ইসলাম বাবাকে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।
যশোর জেলার ঝিকরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে প্রাথমিক বৃত্তি লাভ করেন আশরাফুন নাহান মিষ্টি। ঝিকরগাছা পাইলট গার্লস হাইস্কুল থেকে ৮ম শ্রেণীতে জুনিয়ার বৃত্তি লাভ করেন ।
১৯৯২ সালে এসএসসিতে স্টার মার্ক পেয়ে ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার লাভ করেন। এসএসসি পাশ করার পরপরই টিপ টিপ বৃষ্টি চলাকালিন বাড়ির দোতলার ছাদ থেকে পড়ে যান । ঢাকার মগবাজার আরোগ্য নিকেতন ক্লিনিক ও সাভার সিআরপিতে দেড় বছর যাবৎ চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে মাত্র ছয় মাসে ১৯৯৪ সালে ঝিকরগাছা শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ওই কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে বিকম পাশ করে। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে ঢাকা, কুষ্টিয়া ও চট্টগ্রাম কলেজে অতিরিক্ত একাডেমিক ভবন না থাকার অজুহাত দেখিয়ে তাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে সূযোগ না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে কমার্স নিয়ে ভর্তি হতে হয়।
চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট পড়ার সূযোগ পেয়েও নানাবিধ সমস্যার কারণে পড়তে পারেননি। কাটাবনের হুদাএণ্ড কোম্পানীতে মাষ্টার্স পড়ার সূযোগ পেয়েও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে পড়া হয়নি। পরে মাষ্টার্স এ ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার কারণে হুইল চেয়ার নিয়ে উপরে ওঠা সম্ভব নয় বলে ঝিকরগাছা শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম তাকে পড়াশুনা না করার জন্য বোঝান। পরবর্তীতে স্যারকে প্রতিবন্ধকতা কোন সমস্যাই নয় এটা বোঝানোর জন্য ৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে তার অযোগ্যতা প্রমান পেলে পড়াশুনা করবেন না বলে জানান।
সে অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে তিনটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে সকলকে চমকে দেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নীচের তলায় ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরীক্ষার সময় একাউনটেন্সি বিভাগের শিক্ষক মিষ্টার পাল ও আক্তারুল ইসলাম তাকে পরীক্ষার সময় হুইল চেয়ার দোতলায় তুলতে সাহায্য করেন। সহপাঠি হিসেবে মামুনুর রশিদ,শরিফুল ইসলাম ও রাণু তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ থেকে এমকম পরীক্ষায় সেকেন্ড ক্লাসে পাশ করে প্রথম ও জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন মিষ্টি।
এরপর থেকে ওই কলেজটি বেসরকারি হলেও প্রতি বছর প্রতিবন্ধিদের বিনা খরচে পড়াশুনা করার সূযোগ দেওয়া হয়। ২০০১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধি কল্যাণ সমিতির সহকারি mgš^qKvwi হিসেবে যোগদান করেন। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল করার জন্য ভর্তি হন। এ সময় প্রফেসর শফিক ছিদ্দিক তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ২০০৩ সালে স্কলারশীপ নিয়ে এক বছরের জন্য জাপানে যান।
২০০৪ সালে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূণঃরায় ভর্তি হতে গেলে একাডেমিক ভবনের সমস্যা দেখিয়ে ভর্তি নেওয়া হয়নি। শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তার পিএইচডি করা হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্যের ফলে তার মত অনেক প্রতিবন্ধি প্রতিটি ধাপে পড়াশুনা করার সূযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধি পূর্ণবাসন কল্যাণ সমিতিতে কাজ করার সুবাদে আন্তর্জাতিক লিডারশপি প্রশিক্ষণ, প্রতিবন্ধিদের অর্থনৈতকি উন্নয়ন, আন্তজাতিক সম্পর্ক, এডভোকেসি ও কাউন্সিল সম্মেলনসহ বিভিন্ন কাজে কয়েকবার থাইল্যাণ্ড ও জাপান গেছেন। বর্তমানে প্রতিবন্ধি নারীদের কল্যাণে বিপিকেএস এ mgš^qKvwi হিসেবে কাজ করছেন।
শিক্ষিত,পরিশ্রমী নারীদের mgš^‡q প্রতিবন্ধি নারী উন্নয়ন ফাউণ্ডেশন গড়েছেন। প্রতিবন্ধিদের সার্বিক কল্যানে সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। জীবন যুদ্ধে একটি সুন্দর ¯^cœ বাস্তবায়ন করতে না পারলেও প্রতিবন্ধিদের জন্য বাকি জীবনটা উৎসর্গ করে যেতে চান মিষ্টি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।