সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
কমলাপুর রেলস্টেশনঃ
আমাদের দেশে কম খরচে যোগাযোগের যে কয়েকটি বাহন আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ট্রেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলওয়ের ভূমিকা অপরিসীম। আর রেলওয়ের যোগাযোগের মূল সূতিকাগার হলো ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন- যা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন নামে পরিচিত।
এক সময় গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় ছিল ঢাকার একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন। ভারত বিভক্তির পর ঢাকা হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী শহর।
ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত রেল স্টেশনটির কলেবর বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিলে অন্য জায়গায় এর স্থানান্তরের চিন্তা শুরু হয়। স্থানান্তরের স্থান নির্ধারণ করা হয় বর্তমান কমলাপুরে।
এক সময় এখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল শুধু ধানক্ষেত। ষাটের দশকে শুরুর দিকে নির্মাণ করা হয় বর্তমান এই স্টেশনটি। সে সময়ের এত বড় স্থাপনা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আর কোথাও ছিল না।
এত বড় নির্মাণ কাণ্ড দেখে মানুষ অবাক হতো। এর নির্মাণ শৈলীও মানুষের নয়ন জুড়াত। তখন এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খুব নজরদারী ছিল। কিন্তু কালের আবর্তে সাধারণ মানুষের কাছে যেমন এর আকর্ষণ কমতে থাকে, শ্রীহীন হতে থাকে এর পরিবেশও। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের যেন ক্ষণিকের জন্যও বিশ্রাম নেই।
যাত্রীদের ডাকাডাকি আর হকারদের হাঁকাহাঁকিতে দিন-রাত সরব থাকে। ট্রেনের হুইসেল ও ইঞ্জিনের ঝকমকে শব্দ দিয়ে শুরু হয় দিনের সকাল। মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে অমুক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে ট্রেন আর তখনি শুরু হয় যাত্রীদের ট্রেনে উঠার তাড়াহুড়ো।
এই স্টেশন থেকে দৈনিক ৫০টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। তেমনি ৫০টি ট্রেন এখানে এসে পৌঁছে।
দিনের বেলায় যেমন সরব রাতের বেলায়ও আলো জ্বেলে যাত্রীদের নিয়ে সজাগ থাকে এ স্টেশন। যাত্রীদের সেবাদানের জন্য কমলাপুর স্টেশনে শতাধিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিভাগে বহুসংখ্যক কর্মচারি কর্মরত। এরপরও নানা সমস্যায় জর্জরিত কমলাপুর রেল স্টেশন। যাত্রী বেড়েছে বহুগুণ। প্লাট ফরমে যাত্রীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
টিকেট কাউন্টারে টিকেটের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
কমলাপুর স্টেশনের বর্তমান জায়গাটি ছিল এক সময় বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। লোকজনের বসবাস ছিল না। রেল স্টেশন গড়ে তোলার পর এলাকার আবাসিক এবং বাণিজ্যিক কদর বেড়ে যায়। নিচু জমি ভরাট করে মানুষ গড়ে তুলতে থাকে বসতি।
পূর্ব দিকের মানুষ মতিঝিল আসা-যাওয়া করে এ রেল লাইনের ওপর দিয়ে। রেল রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য রেললাইনের ওপর গড়ে তোলা হয় ওভার ব্রিজ। বাংলাদেশের এটাই সর্ববৃহৎ রেল ওভার ব্রিজ। তবে সেই ওভার ব্রিজের সৌন্দর্য আর নেই। বর্তমানে বর্ধিত আকারে রিমডেলিংয়ের কাজ চলছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বিরাজ করছে বিভিন্ন সমস্যা। যাত্রীদের সঙ্গে আলাপকালে যে সমস্যাটি প্রথমে জানা যায় তা হলো টিকেট সমস্যা। গাড়িতে সিট খালি থাকলেও কাউন্টারে থাকে না। তবে কিছু টাকা বেশি দিলে সিট পাওয়া যায়। এসব অসাধু টিকেট বিক্রেতাদের কারণে রেলওয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
তবে গ্রাহকরা অভিযোগ জানালে এই সমস্যার সাময়িক সমাধান পাওয়া গেলেও স্থায়ী কোনো সমাধান মেলে না। অর্থাৎ অসাধু টিকেট বিক্রেতারা আবার ফিরে যায় স্বরূপে।
টিকেটের অতিরিক্ত অর্থের ভাগ বাটোয়ারায় অনেক সময় উপর মহলের কর্মকর্তারা জড়িত থাকে বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না কর্তৃপক্ষ বলে জানান এক কর্মকর্তা। বর্তমানে রেলওয়ে স্টেশনে চলছে আধুনিকায়নের জন্য সংস্কার কাজ। ঝকঝকে করার চেষ্টা থাকলেও সব সময় তা করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
শহরতলীর স্টেশনটির অবস্থা নাজুক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গাড়ি নারায়ণগঞ্জ অভিমুখে যায় এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে আসে। কিন্তু এই স্টেশনের প্লাটফর্মে সব সময় থাকে ভবঘুরে, ছিনতাইকারী ও ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের জটলা। যদিও পুলিশ বা আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রায় সময়ই এদের তাড়ানোর লোক দেখানো ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের তৎপরতাও বাড়তে থাকে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গভীর রাতে আসা যাত্রীদের পড়তে হয় যানবাহন সমস্যায়। কারণ যেসব গাড়ি অর্থাৎ রিকশা বা ট্যাক্সি স্টেশনে থাকে তারা ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকায়। এতে দূরের যাত্রীদের পড়তে হয় বিপাকে। নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা নেই এসব রিকশাওয়ালা বা ট্যাক্সিচালকদের।
হকার ও কুলিদের সমস্যা তো আছেই।
আপনি যদি মালামাল নিয়ে যান তাহলে কুলিরা জোর করে মাল পৌঁছে দেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দেয়। পৌঁছানোর পর ইচ্ছামতো টাকা আদায় করে নেয়। আর যদি চাহিদা মাফিক না দেয়া হয় তাহলে এদের সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে নাজেহাল হতে হয়।
রেলওয়ে স্টেশনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই খারাপ। স্টেশনের বাইরে দুইটি পাবলিক টয়লেট থাকলেও ব্যবস্থাপনা খুবই নিম্নমানের।
ফলে অনেকেই বিশেষ করে যারা জলবিয়োগ করতে চান তারা দুই টাকা ফিস দেয়ার চাইতে নির্বিঘনে রেললাইনে দাঁড়িয়েই সেরে নেন।
রাতের বেলায় স্টেশনের অবস্থা ভিন্নরূপ। এ সময়ে সাদা পোশাকে টিকেট চেকারদের দৌরাত্ম্য দিনের চাইতে বেড়ে যায় বহুগুণে। বিশেষ করে তারা যদি লুঙ্গি পড়া লোকদের পায় তাহলে তাদের হয়রানি করে একটু বেশিই।
তবে সময়ের ব্যাপারে বড়ই বেরসিক বাংলাদেশ রেলওয়ে।
বিশেষ করে যে ট্রেনগুলো কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়সূচি থাকলেও তা অনুসরণ করা হয় না। অবশ্য রেলওয়ের কর্মকর্তারা এর জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী করেছেন।
যাত্রী চলাচল এবং পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে এক সময় রেলপথ ও নৌ-পথই ছিল মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কালের আর্বতে সড়ক পথের বিস্তৃতি ও উন্নতি ঘটেছে।
ভারি পণ্য বহনের জন্য বড় বড় ট্রাকের আবির্ভাব ঘটেছে। বিলাসবহুল এসি বাস চালু হওয়ায় সময় কম লাগে এবং বিড়ম্বনাও কম। রেলপথের চলাচল দেশের নির্দিষ্ট জায়গাগুলোতেই সীমিত থাকে। কিন্তু সড়কপথে যে কোন জায়গায় যে কোন সময় যাওয়া যায়। তারপরেও সহজ স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামদায়ক নিরাপদ ভ্রমণের জন্য রেলওয়ের কোনো বিকল্প নেই।
যারা একটু নিরাপদে ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য প্রিয় বাহন ট্রেন। এসব সমস্যার পরেও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা রক্ষা করে চলছে। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।