যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
রাজেন তরফদারের পালঙ্ক ছবিতে ধলাকত্তা (উৎপল দত্ত) আক্ষেপ করে বলছেন- "বুঝলি রে মকবুল(আনোয়ার হোসেন) ছেলে বলেছে পালঙ্ক বেঁইচে ওরে য্যান ট্যাকা পাঠাই! কইলকেতায় কি মানুষ থাহে? এক বাড়ির মানুষ আর এক বাড়ির মাইনষের খোঁজ নেয়না রে মকবুল, সব ইঁট-কাঠ হয়া গেছে.....। " এই সময়টা চল্লিশের দশক। সে সময়কার কোলকাতা কে বর্ণনা করা হচ্ছে যন্ত্র-মানুষের সন্নিবেশের এক হৃদয়হীন শহর বলে। তখনো এই পূর্ব বাংলায় বোধহয় হৃদয়টিদয় নিয়ে মাতামাতিতে ছিল! এখনো অনেকে মনে করেন পূর্ব বাংলা এখনো অনেক মানবিক! এখানে এখনো মানুষের ভেতরে যান্ত্রিকতা আর পশুবৃত্তি তেমনি করে ব্যাকটেরিয়ার মত ছড়ায়নি। এমনটি যারা ভাবেন তারা এখনো এই বাংলাকে চল্লিশ বছরের পেছনের সেই বাংলা বলে ভুল করছেন।
উপরের এই ছবিটি কি বলছে? এই যে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আকর্ণবিস্তৃত হাসি দিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ‘আনন্দউৎসব’কে আলোকিত করছেন, এই যে তার মুক্তোর মত দাঁতের ওপর রৌদ্রকিরোণ খেলা করছে, এই যে তার হাত থেকে একটি হিরের আংটি নিয়ে ওই গার্মেন্ট কর্মি ধন্য হয়ে যাচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো ছোটখাট যে মানুষটি এক সময় তুখোড় স্ট্রাইকার ছিলেন বলেই বোধহয় বাউলি কেটে ড্রিবলিং করে টঙ্গীর দগদগে ক্ষতকে দূরে ঠেলে মন্ত্রীর পাশে নিজেকে ধুন্ধুমার স্ট্রাইকারের বেশে হাজির করতে পেরেছেন।
এই যে তারা এক মহা আনন্দঘন পরিবেশে গার্মেন্ট কর্মিদের এক ঘেয়ে জীবনে এক পশলা আনন্দ দেওয়ার কসরৎ করে যাচ্ছেন, তা দেখে কে বলবে মাত্র আগের দিনই ওদের নির্দেশে চার চার জন অসহায় গার্মেন্ট কর্মি আর নিরীহ গতরখাটা মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়েছে! শত শত কর্মি এখনো হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে! তিন হাজার কমির নামে মামলা হওয়ায় তারা ফেরার ! হাজার হাজার পরিবারে ওই দিনের পর থেকে হাড়ি চড়েনি! কোলের শিশুগুলো রাতবিরেতে এখনো বাবা বাবা বলে ডেকে উঠছে! ঘরের সব কিছু এলোমেলো রেখে বউটা তার স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে! স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েগুলোর স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে! আর যারা পালাতে পারেনি তারা মোটা শিকের গরাদে মাথা ঠেকিয়ে এক একটি প্রহর পার করছে এক একটি বছরের দৈর্ঘে! না। এই আনন্দউৎসব দেখে কোন হৃদয়বানের মনে হবে না যে মাত্র একদিন আগেই এই স্টেডিয়াম থেকে কয়েক মাইল দূরে ওমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। এটাই এখনকার মিডিয়ার বাহাদুরী। এরা মানুষের হালসাকিন ভুলিয়ে দিতে পারে, দুঃখ কষ্ট বিস্মৃত করে দিতে পারে এক মুহ’র্তে।
এমন নির্লজ্জ নারকীয় তামাশা বোধকরি এই হতচ্ছাড়া জগাখিঁচুড়ির তথাকথিত ভ্যবলামারানির দেশে আবালচন্ডিদের দ্বারাই সম্ভব। দেখুন লাশের গন্ধ হাতে মেখে কি অদ্ভুত আনন্দঘন উৎসবমাতম!
“বহুদিন পর পোশাক শ্রমিকদের একঘেয়ে জীবনে নেমে এসেছিল এক পশলা আনন্দ। জনপ্রিয় শিল্পী মমতাজ, ফকির আলমগীরের গানে গানে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও হাজারো শ্রমিক ভুলে গিয়েছিল প্রতিদিনের যান্ত্রিক কাজের মুহূর্তগুলো। রোববার রাজধানীর কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে র্যাফেল ড্র, যেমন খুশি তেমন সাজ এবং গানে গানে মেতে উঠেছিল প্রায় ৩০ হাজার পোশাক কর্মী। উপলক্ষ ছিল বাটেক্সপো পোশাক কর্মী মিলনমেলা-০৯।
বেলা আড়াইটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পায়রা উড়িয়ে বিজিএমইএ আয়োজিত এই মিলনমেলা উদ্বোধন করেন। এ সময় শত শত বেলুন ওড়ানো হয়। পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ এই প্রথম পোশাক র্কর্মীদের জন্য এ ধরনের আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। র্যাফেল ড্রতে বিজয়ী রাজধানীর এক্সেলগার্মেন্টের কর্মী শারমিনকে নিজ হাতে হীরার আংটি পরিয়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন শারমিন।
এ যেন তার জীবনে এক পরম পাওয়া। ”
বেশ বেশ। আমরা কেবলই মৃত্যু নিয়ে থাকি কেন? আমাদের গার্মেন্ট শ্রমিকদের তো একটুআধটু ফুর্তিটুর্তি করারও খায়েশ হতে পারে! নিশ্চই পারে! পারে বৈকি। ফুর্তী করবে না-ই বা কেন? ওরা তো আর মরে যায়নি! মরে গেছে কোথাকার কোন এক ফ্যাক্টরির কিছু “বেয়াড়া-বে-আদব” শ্রমিক। তাতে ওদের কি? ওদের কে কি তেমনি করেই বোঝানো হয়নি? তাই যদি না হবে তাহলে মাত্র একদিন আগে চারজন শ্রমিকের নৃশংস মৃত্যুর পরের দিন কোন অশিক্ষিত আবেগাক্রান্ত শ্রমিকের পক্ষে কি সম্ভব এমন আনন্দউল্লাস করা? আচ্ছা কি হয়েছিল টঙ্গিরসই নিপ্পন গার্মেন্টে?
নিপ্পন গার্মেন্টের শ্রমিকরা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না।
তাদের বারে বারে বলা হচ্ছিল এই অর্ডারটা শেষ হলেই বেতন দেওয়া হবে। ওই দিন সংঘর্ষের আগে তাদের কথা দেওয়া হয়েছিল ওই দিনই বেতন দেওয়া হবে। অথচ সকালে সব শ্রমিকরা কাজে এসে দেখল মালিকের লোকজন কারখানা লে-অফ ঘোষণা করেছে। লে-অফ মানেই কারখানা অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধ। এখন বন্ধ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দেবে কে? না, এই প্রশ্নের উত্তরও কারো কাছে নেই।
মালিক সরকার এবং এই সেক্টরের ধীমানরা আর সমাজের পরগাছা বুদ্ধিবৃত্তিক বেশ্যারা আশা করেন মাসের পর মাস বেতন না পেয়েও ওই গার্মেন্ট কর্মিরা কাজ করে মালিকের, দেশের রপ্তানিবাণিজ্যকে আরো উন্নতির সোপানে নিয়ে যাবে। মাসের পর মাস আধপেটা খেয়ে, ধারদেনা করে বেতনের আশায় শেয়াল-কুকুরের মত ফ্যাক্টরিগেটে বসে থাকবে ওরা। একসময় মালিক এসে দুএক টুকরো রুটি ছুঁড়ে দেবে আর ওরা হন্যে কুকুরের মত হামলে পড়বে সেই রুটির উপর। তার পর ওরা প্রভুভক্ত কুকুরের মতই মাথা নিচু করে যার যার ঘরে ফিরে যাবে! কিন্তু ওরা “বেয়াক্কেল-অবাধ্য”রা তা না করে মারমুখি হয়েছিল। আমরা যারা তিন বেলা দেশি,কন্টিনেন্টাল আর এ্যগ্রো মিশিয়ে আহার করে তৃপ্তির ঢেকুর ছাড়ি তারা কিছুতেই ঠাওর করতে পারব না ক্ষিদে পেটের মানুষ কি কি করতে পারে!
না তারা তেমন কিছুই করেনি।
শুধু পাওনা বেতন চেয়েছিল। তাতে রাষ্ট্রের পুলিশ ‘ভীষণ বেয়াদবি’ আর ‘ঊশৃংখলতা’ আবিষ্কার করেছিল। পুলিশের সাথে বাঁদরামি? এদেশে কে কবে এই ‘বাঁদরামি’ করে বেঁচে থেকেছে? কেউ না। আর তাই পুলিশ বরাবরের মত মালিকের পোষা গুন্ডার মত আচরণ করে এ্যাকশনে নেমেছিল। লাঠি, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট এখন পুলিশের এ্যাকশনের মেজাজ আনতে পারেনা।
তাই সরাসরি গুলি! সেই কবেকার ট্রেনিংয়ের কথা মনে করে নতুন নতুন ট্রেনিংয়ের ঝালাই আরকি! পটাপট চারটি লাশ পড়ে গেল।
এর পর যা যা হয়- লাশ গুম করা চলে, ধাপ্পাবাজীর সুরৎহাল হয়, একজন ম্যাজিস্ট্রেট সেই সুরৎহাল করেন। একটা চার বা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, কমিটিকে কয়েকটা দিন সময় দেওয়া হয়, কমিটি একে তাকে ধরে ধরে হুমকি দিয়ে স্বাক্ষ্যপ্রমান সংগ্রহ করে, হাজার হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়, মৃত ব্যক্তির নামেও মামলা হয়, কয়েক দিন ধরপাকড় চলে, কেউ কেউ এর মধ্যে নতুন বাণিজ্য খুঁজে পায়, পুলিশ নাম কাটানোর বাবদে নতুন টাকা খাওয়ার ত্বরিকা বের করে.......আর বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগের জল ধীরে ধীরে আরো গড়িয়ে দক্ষিণে চলে যায়। সাথে এই কেসটাও ডেড ফাইল হিসেবে হিমঘরে ঠাঁই পায়। আমরা এই ‘অসাধারণ’ নিয়মের ব্যতিক্রম এবারো দেখব না।
এবং দেখিওনি।
টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হতভাগ্যদের নিয়ে এখন নানা নাটক। লাশ নিয়ে দিনভর লুকোচুরির পর এবার নিহত দু'জনকেও করা হয়েছে মামলার আসামি। 'নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো বাড়াবাড়ি করছে' পুলিশের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলেছে আরেকটি লাশ। তাহলে এই মৃত্যুর দায় কার? দায় এড়াতেই কি পুলিশ নিহতদের লাশ নিয়ে লুকোচুরি করেছে? ইতিমধ্যেই এমন প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন বলেছেন, “পুলিশ এভাবে গুলি করে মানুষ মারতে পারে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেই। পুলিশের গুলিতে আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করে পুলিশ যেভাবে বিষয়টি চেপে গেছে তাতে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হতে পারে। পুলিশের এ ভূমিকা মানবাধিকার ও সংবিধানের লঙ্ঘন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
”
আ ম’ল যা! মানবাধিকার নেত্রীর এই কথা শুনে হাসিও তো পাচ্ছেনা!বলেন কি? ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’, বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি’ এসব কথা তো এখানে বেমানান! বরং মঙ্গল গ্রহে-ট্রহে গিয়ে বললে তাও কিছু একটা হতে পারে!
সংঘর্ষের ঘটনায় টঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে যে ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে নিহত বাবুল শেখ ও শফিকুল ইসলাম রয়েছেন। শ্রমিকরা বলছেন, মৃত ব্যক্তিদের আসামি করে হীনমানসিকতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ। কুৎসিত প্রতিহিংসার কারণেই পুলিশ এ কাণ্ড করেছে বলে নিহতদের পরিবারের অভিযোগ।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পোশাক মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে টঙ্গীর ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
লাশ গুম করার অভিযোগের মধ্যেই টঙ্গীতে নিহত আরেক ব্যক্তির লাশের খোঁজ দিয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে শনাক্ত একটি লাশ টঙ্গীতে শনিবার সংঘটিত সংঘর্ষে নিহত বলে জানিয়েছে তারা। এ নিয়ে ওই ঘটনায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হলো।
“শ্রমিকদের ভয়ে ভীত মালিক পক্ষ এবং সরকার শ্রমিকদের দেশের প্রচলিত আইন-কানুন আর বিচার ব্যবস্থা থেকে আলাদা জগতে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। আগামীতে এই আশুলিয়া বা অন্যান্য শ্রমিক বেল্টগুলোতে কোন প্রকার বিদ্রোহ বা আন্দোলন যেন অংকুরেই বিনাশ করা যায় তারই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
খুবই বৈপরিত্যপূর্ণ ব্যাপার! শ্রমিক ছাড়া দেশের শিল্প চলেনা,চলছে না, শ্রমিক ছাড়া দেশ এক পা-ও এগুতে পারেনা, পারছে না। আবার শ্রমিককে নিয়ন্ত্রণ-নিবর্তন এবং নিপীড়নের জন্য সরকার-মালিক সবাই একসাথে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামছেন! তবে কি আশুলিয়া আর শ্রমিক অঞ্চলগুলো দেশের বিশেষ পুলিশ বা বিশেষ বাহিনীর নতুন ‘ট্রেনিং সেন্টার’ হয়ে উঠতে যাচ্ছে? এভাবেই কি সেই দেড়শো বছর আগেকার ব্যবস্থায় জোর করে উৎপাদন করিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে? সমস্ত শ্রমশক্তি ছিবড়ে শুষে নেওয়ার পাকাপাকি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে?”
এই কিছুদিন আগে গত আগস্ট মাসেই এই কথাগুলো বলেছিলাম আতংকিত হয়ে। এখন দেখা যাচ্ছে সেই বিশেষ শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠনের আর দরকার হচ্ছেনা। নিয়মিত পুলিশই র্যাপিড এ্যাকশনে নেমে মালিক এবং সরকারকে “কাঙ্খিত” সাফল্য এনে দিচ্ছে! দুম করে গুলি শুরু। তারপর পটাপট চার-পাঁচটা লাশ পড়ে যাওয়া।
তারও পরে একটা গার্মেন্ট শ্রমিকদের আনন্দউৎসব! হোয়াট আ কম্বিনেশন!!
তারা যে গার্মেন্ট নিয়ে বেশুমার মাতম করেন, বৈদেশিক মুদ্রার কারিগর বলে চরম তামাশা করেন, সেই গার্মেন্ট নারী শ্রমিকদের সত্যিকারের জীবনযাপন কেমন তা কি কখনো আমাদের মন্ত্রী বাহাদুর(অথবা বাহাদুরনী) দেখতে চেয়েছেন? আজ পর্যন্ত কি কোন গুলির হুকুম দেওয়া বা গুলি করার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা মালিক গ্রেফতার হয়েছেন? কারো কি কোন সাজা হয়েছে? কাউকে কি সরকার বাধ্য করেছে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে ? এই সবগুলো প্রশ্নেরই একটি উত্তর- না।
তাহলে কি ধরে নেওয়া যায়না যে প্রধান মন্ত্রীর যে উদাত্ত ঘোষণ-‘দায়ী মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, এটা কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকা হয়ে যাচ্ছে না? শাক দিয়ে মাছ বা মাছ দিয়ে শাক, যাই ঢাকা হোক না কেন, আগামীতে একটা সময় এমন নিশ্চই আসছে যখন আর কোন ঢাকাঢাকিতে কুলোবে না। ঠিকই সত্য বেরিয়ে পড়বে। এখন নির্দিধায় বলে দেওয়া যায় যে, এখানে হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিকের শ্রম শোষণ হচ্ছে শুধু না তাকে শৃংখলিত করে অনেকটা হ্যান্ডকাফ পরানোর মত করে বন্দি করে তার শ্রম নিংড়ে নেওয়া হচ্ছে। কৃতদাসদের এভাবে শ্রম নিংড়ে নেওয়া হতো।
সেই কৃতদাসের সাথে এখনকার আধুনিক কারখানা শ্রমিকের কি কোন তফাৎ আছে? না, নেই।
এখন তো তবুও এটি হচ্ছে। আরো পরে হয়ত আক্ষরিক অর্থেই এই শ্রমিকদের মাটির তলাকার কুঠরিতে বন্দি করে লাগাতার বৃদ্ধবয়স পর্যন্ত শ্রম নিংড়ে নেওয়া হবে। তাদের চারপাশে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ঘুরবে মালিক/সরকারের ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনী। কেউ কাজে ফাঁকি দিলে ওমনি শপাং চাবুকের বাড়ি।
আর পুরো ব্যাপারটা লোকচক্ষুর আড়ালে করার জন্য এই শিল্পগুলোকে শহরের বাইরে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যাওয়া হবে, যার আলামত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এবং এই যে দেড়শ বছর আগের দাস ব্যবস্থার মত শ্রম শোষণ চলছে, এ নিয়ে উচ্চকণ্ঠে বলার মতও কেউ থাকবেনা, কারণ বলনেঅলাদের ইতিমধ্যেই কিনে ফেলা হবে(প্রায় কেনা সম্পন্ন) সকলে তখন বলবেন- উন্নয়ন না হলে দেশ এগুবে কি করে? দেশকে এগুনোর জন্য কাউকে না কাউকে তো আত্মাহুতি দিতেই হয়, নাকি? কেউ কেউ পোঁদ চুলকে চুলকে কবিতা লিখবে-“তোমাদের রক্তঘামে আমাদের এই সভ্যতা তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে হে মহান শ্রমদানকারী ভাইয়েরা আমার!”।
এরই আলামত কি আমরা গত ১লা নভেম্বরে কমলাপুর স্টেডিয়ামে দেখলাম? লাশের গন্ধ ঢাকার জন্য ফুলের সমারোহ ঘটিয়ে চার চারটি লাশের শরীরের হাঁড়গোড় দিয়ে বানানো হিরের আংটি যার হাতে পরিয়ে দেওয়া হলো, হয়ত এর পরের এ্যাকশনেই ওই মেয়েটি কতল হতে পারে, অথবা ওর বাবা, কিংবা ওর স্বামী! সেই যাই হোক, আপাতত ও সত্যি ধন্য এদেশের শিল্পপতিরা যে কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়াই তেল আর জল মেশাতে পারেন তা দেখে। মেয়েগুলি কিন্তু একবারও ছিঃ বলেনি, তাহলে আমরা কেন বলব!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।