আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতা পেয়েছি মুক্তি কি পেয়েছি? (রিপোস্ট)

মন আর মানসিকতায় মহাপুরুষ হতে পারিনি। তবে মহাপুরুষদের অনূকরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত

কনতো দেহি আইজকা দ্যাশে সবচে শরীল তাজা কার? -যেই শালারা রাজাকার। পাইলটে লেবাস কোন ব্যাটারা আইজ সমাজে পায় কদর? -যে শালারা আল-বদর। গদির পাশে বইছে ক্যাডা? (পান খাওয়া মুখ যা লালরে!) -একাত্তুরের দালাল রে! (রাজাকারের ছড়া, লুৎফুর রহমান রিটন) রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে মাত্র পয়ত্রিশ বছর আগে লাখো জনতার রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছিলাম তার সুফল কি আমরা পেয়েছি?কেউ কি তার সঠিক উত্তর দিতে পারবেন? আজ যখন একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে ভিক্ষা করে তখন তার পাশ দিয়ে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে হনহন করে গাড়ি হাকিয়ে যিনি চলে যান তিনি একজন রাজাকার। তিনি হয়তো দয়া পরবশ হয়ে মাঝে মাঝে দু এক টাকা ভিক্ষেও তুলে দেন সেই আহত মুক্তিযোদ্ধার ভাঙ্গা থালায়।

এরই নামই বোধ হয় স্বাধীনতা?একজন রাজাকারের ভিক্ষেতে বেঁচে থাকবে একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাজাকারের গাড়ির কালো ধোয়ায় ভুগবে জটিল রোগে। রাজাকারের ছুটে যাওয়া গাড়ির ছিটকে যাওয়া কাদায় আর কত শরীর নোংরা হবে মুক্তিযোদ্ধার? স্বাধীনতার বদলে যাওয়া সংজ্ঞা যখন ছোট ছিলাম তখন স্বাধীনতা বলতে বুঝতাম ইচ্ছেমতো কোন কিছু করা। একটু বড় হয়ে বুঝলাম স্বাধীনতা বলতে বুঝায় অন্যের অধিকার খর্ব না করে নিজের পূর্ণ অধিকার ভোগ করা। কিন্তু আজ এ পর্যায়ে এসে স্বাধীনতার সে সংজ্ঞাটার বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি তা এ রকম-"স্বাধীনতা মানে একই সংসদে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার সহাবস্থান।

একই অনুষ্ঠানে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার জ্বালাময়ী ভাষণ। একই কাতারে দাড়িয়ে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার পুস্পদান । স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ফলে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অভুদ্যয়। কিন্তু আমরা কি সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুক্তি পেয়েছি?আজো মানুষ অনাহারে মারা যায়, উত্তরবঙ্গে আজো মানুষ মঙ্গায় ভোগে,(মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন তিনি মঙ্গা শব্দের অর্থ জানেন না। ) উপযুক্ত বাসস্থানের অভাবে ঢাকা শহরের মত বড় বড় শহরের আনাচে কানাচে গড়ে উঠে বিশাল বিশাল বস্তি।

বাসের ভিতর আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে মানুষ, জনসভায় গ্রেনেড- বোমা হামলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অগনিত। জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বারবার। বিচারের সম্মুখে দাড় না করিয়ে ক্রসফায়ারে লাশ ফেলে দেয়া হয় জাতীয় সন্ত্রাসীদের। রাস্তায় বের হলে বাসায় সুস্থ্যভাবে ফিরে আসার কোন গ্যারান্টি নেই। সত্য বলতে গেলেই টুটি চেপে ধরা হয়।

এ আমরা কোন বাংলাদেশে বাস করছি?আমরা কি এ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? পাঠক একবার বুকে হাত দিয়ে বলুনতো আমরা কি এ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? যুদ্ধাপরাধীরা আজ: বিজয় পরবতর্ী তথাকথিত ছোট ছোট রাজাকারদের হয়তোবা বিচারের মুখোমুখি করা গিয়েছিল কিংবা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নিজস্ব বিচারেই পরপারে পাঠিয়েদিয়েছিল। কিন্তু ধেড়ে বা রাজাকার প্রধানদের তো টিকিটিও স্পর্শ করা যায়নি। বিচারের সম্মুখীন না করে বরং আমরা ওদেরকে গভীর আবেগে, গভীর ভালবাসায় বুকে টেনে নিয়েছি, আত্মীয়তার বন্ধন শক্ত করেছি ওদের সাথে। একই টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছি আজ মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকার। রাজাকারের দলকে ভালবেসে বসিয়ে দিয়েছি ক্ষমতার মসনদে।

ওদের গাড়িতে নিজ হাতে উড়িয়ে দিয়েছি ত্রিশ লাখ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত সবুজের ভিতর লাল বৃত্তাকার পতাকাটি। ওদের হিংস্র নখের আঁচড়ে, হিংস্র থাবায় ত বিত হচ্ছে আজো বাংলাদেশের বুক। খন্ড বিখন্ড হচ্ছে আমাদের জাতীয় পতাকা। এ থেকে কি আমাদের পরিত্রান নেই? আজ দেশের মন্ত্রী যখন তথাকথিত রাজাকারদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন-"একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখন্ডতা চেয়েতো কোন ভুল করেনি। " তখন কেমন লাগে সেই আহত মুক্তিযোদ্ধাদের কিংবা কবরে কতটুকু শান্তিতে ঘুমান শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা? আমি জানিনা।

জানতেও চাইনা। কারন যে জানা কেবল মনে দুঃখই বাড়াবে তা না জানাই ভাল নয় কি? বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে: জামর্ানি, ফ্রান্স এর মতো দেশগুলোতে আজো খুজে খুজে ধরা হয়ে থাকে হিটলারের দোসরদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে। বসনিয়া হার্জেগোভিনায় যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। কিন্তু বিচার হচ্ছে না কেবল 1971 সালে এদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাহাজানি, অগি্নসংযোগ প্রভৃতি যুদ্ধাপরাধের।

কিন্তু বিজয়ের পরপরই ঘোষনা দেয়া হয়েছিল এসব অপরাধের বিচার হবে। বিশেষ ট্রাইবুনালও ঘটন করা হয়েছিল কিন্তু কোন এক অজানা কারনে তা আবার বাতিল করে দেয়া হয়। কিন্তু এতদিন স্বজন হারানো পরিবারগুলো চেয়েছিল জনপ্রতিনিধিদের দিকে। ভেবেছিল একদিন এসব অপরাধের বিচার হবে। কিন্তু আজ যখন সেই সব যুদ্ধাপরাধী জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে লম্বাগলায় ভাষণ দেন তখন স্বজন হারানো সেই পরিবারগুলোতো দূরের কথা দেশের সবচেয়ে বোকা লোকটিও ঐ অপরাধীদের বিচারের ব্যপারে কোন আশা রাখেনা।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এসব যুদ্ধাপরাধীদের কি বিচার হওয়া উচিত নয়? রক্তের ঋণ পরিশোধের সময় কি এখনো আসেনি?আর কতদিন বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদবে? এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়: কবি হাসান হাফিজ তার কবিতায় লিখেছিলেন "এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ট সময়" । পৌঢ়ত্বে নাকি মানুষের মন মানসিকতায় লোহার মত মরিচা ধরে। তারা সব কিছুকে যৌবনের মত রঙ্গিন দেখতে পান না। সেই পৌঢ়রা আজ কান্ত সেইসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাইতে চাইতে । আসুননা, এখন আমরা যারা কঠিন যৌবনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি তারা একই কাতারে দাড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে একটা ছোটখাট বিপ্ল্লব ঘটাই।

বিপ্লব ঘটাই দেশের চেহারা আমুল পরিবর্তন করতে। পৌঢ়রা পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার আগে দেখে যাক তাদের যৌবন বৃথা যায়নি। বৃথা যায়নি তাদের রক্ত, বৃথা যায়নি তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা। দেখে যাক আমরা তাদের ত্যাগের প্রতিদান দিতে জানি। (লেখাটি ডিসেম্বর, ২০০৫, দৈনিক আমারদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.