আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের সেরা সাহিত্য সাময়িকী

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

এক প্রতিষ্ঠান বিরোধী বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। কইলেন, প্রতিষ্ঠান বিরোধী আমি, ভাবতাম মানুষের বিরুদ্ধে রাগ আমারই বেশি। কিন্তু আপনেরে দেখতেছি আর অবাক হইতেছি। সবার ওপর আপনের এত রাগ কেন? আমি কইলাম দাদা, জিনিশটা আসলে রাগ বা অনুরাগের না।

জিনিশটা কথা বলার। অবস্থা এমন দাঁড়াইছে যে, কেউই উচিত কথাগুলা বলতেছে না। হয় এড়ায়ে যাইতেছে নয়তো না বলার মতো কইরা কিছু একটা বলতেছে। তো কেউ যখন কথা বলার সিদ্ধান্ত নিতেছে তখন তাকে ম্যান্দা মাইরা থাকা সব লোকের নীরবতার বিরুদ্ধেও বলতে হইতেছে। ফলে, কণ্ঠস্বর উঁচু হইতেছে।

কণ্ঠস্বর খুব উঁচু হয়া আপনার শান্তির বিঘ্ন ঘটাইলে আমি সরি। বড় ভাই আমার মতো বেয়াবদের ভদ্রতায় একটু অবাক হয়া যায়। আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকায়ে থাকে। পরে বলে, চলেন চা খাই। ওনার সাথে লিটল ম্যাগাজিন নিয়া কিছু কথা হয়।

আমি বলি, দাদা লিটল ম্যাগাজিনের কোনো দরকার আমাদের নাই। উনি বলেন, এইটা কিন্তু ঠিক না। মানলাম না। আমি বললাম, দাদা, যেই দেশে সাহিত্যের মূলধারা বইলা কিছু নাই। সেই দেশে তরুণ প্রতিভাবানরা যদি অলটারনেটিভে চইলা যায় তাইলে তো মুশকিল।

তাই না? আপনি হয়তো বলবেন, প্রতিষ্ঠান আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগ, বাংলা একাডেমী আর প্রথম আলোর সাহিত্য পাতারে যদি আপনার প্রতিষ্ঠান মনে হয় তাইলে আমার বলার কিছু নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগগুলা তো নিম বুদ্ধিজীবীদের আখড়া। জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথের ওপর নোট বই লেখার ক্ষমতা নিয়া তারা বুদ্ধিজীবীতা করে। বড় জোর বাংলা একাডেমী থেকে একটা গবেষণা পুস্তক বের করা ছাড়া অধ্যাপক, নিম অধ্যাপকদের আর কোনো ক্ষমতা হরেদরে নাই।

এর মধ্যে কিছু বাঘের বাচ্চা ছিল বটে, কিন্তু ওরা একা একাই বাঘ। প্রতিষ্ঠানের বাঘ না। বাংলা একাডেমীও প্রতিষ্ঠান না। কারণ সাহিত্য বিষয়ে কিছু বলার ক্ষমতা তার নাই। এক বলে প্রথম আলো।

সাহিত্য বিষয়ে বাঙালি মুসলমানের প্রতিষ্ঠান যে কিছু বলে সেইটা প্রথম আলোই দেখায় প্রথম। এইটা ভালো ওইটা খারাপ এইটা তারা বলার চেষ্টা নিছিল। অন্তত তরুণদের ক্ষেত্রে। পৌঢ় ও বৃদ্ধ বঙ্গসাহিত্য বিষয়ে প্রথম আলো কলকাতা থেকে দেশভাগের পর বাংলাদেশে আসা পশ্চিমবঙ্গের চতুর্থসারির বুদ্ধিজীবীদের উপরে তুইলা রাখে। এই কাজ সবাই করে, আমাদের এখানে প্রকাশনা সংস্থা, সাময়িকী, সভা-সেমিনারে এই চতুর্থ শ্রেণীর কলকাতা ফেরত বুদ্ধিজীবীদের একটা আধিপত্য আছে।

এরাই এইখানে বাংলা সাহিত্যের নিয়ন্ত্রক। এদের রুচি অনুসারে সাহিত্য ও জ্ঞান পরিচালিত হয়। দাদা একটু রুখে দাঁড়ান বলেন, তাইলে কি বলতে চান এইসব বুদ্ধিজীবী নমস্য ব্যক্তিরা কিছুই করেন নাই? আমি বলি, দাদা, বাংলাদেশের সাহিত্যে কলকাতা ফেরতদের অবদান বইলা কিছু নাই। এরা ভাব ধইরা থাকে। মিষ্টি কইরা বলে।

সার বলতে কিছু নাই। এরা পশ্চিমবঙ্গে সাহিত্যের অনুসরণ ছাড়া গত পঞ্চাশ বছরে আর কিছু আসলেই করে নাই। .................. কথাগুলা বলে চলে আসার পর ভাবতে বসি। আমাদের এখানে সাহিত্যে কী হইতেছে আসলে? যায়যায়দিনে থাকার সময়ে আমরা নিয়মিত একটা কলাম চালু করছিলাম সাহিত্য সাময়িকী রিভিউ। আমি প্রতি সপ্তাহে সাময়িকী রিভিউ করতাম।

এর আগে পরে সাময়িকীগুলা দেখার অভ্যাস ছিল আছেও। পড়া খুব কম হয়। এর কারণ এই ন যে সাময়িকীগুলাতে পড়ার জিনিশ থাকে। দুনিয়ার বস্তাপঁচা লেখার সমাহার হইলো এই সাময়িকীগুলা। প্রথম আলো সাময়িকী বাংলাদেশে ছাপা কাগজে শ্রেষ্ঠ সাময়িকী।

আমি বলতে পারি না, তাদের মূল বা প্রচ্ছদ রচনা আমি গত এক বছরে একটাও পড়ছি কি না। মূল রচনা হিসাবে তারা যেসব বিষয়ে যাদের রচনা ছাপে সেইগুলা কে পড়ে কে জানে। বাকী সাময়িকীগুলার কথা আর বললাম না। অবস্থা দেইখা আমি সাময়িকীগুলা সম্পর্কে কয়টা পর্যবেক্ষণ জানায়ে রাখি : ১. সাময়িকীর মূল কাজ পত্রিকার সঙ্গে রাজনৈতিক, অধ্যাপকীয় ও আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতাধর সাহিত্যিকদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ২. সাময়িকীগুলার সঙ্গে ন্যাচারাল লেখকদের সম্পর্কে গুরুতর ফাটল ধরেছে ৩. কবিতা বা গল্পের জায়গা অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে কমে এসেছে। ৪. এগুলোতে বুক রিভিউ বলতে যা ছাপা হয় তা আসলে বই পরিচিতর সীমা ডিঙ্গাইতে পারে না।

৫. সাহিত্য সম্পাদকদের সংঘের লোক না হলে এইসব সাময়িকীতে জায়গা মেলে না। ৬. শূন্য দশকের সাহিত্যিকদের ব্যাপারে সম্পাদকদের কোনো আগ্রহ নাই। ৭. লেখা ছাপানোর ক্ষেত্রে সাহিত্য সম্পাদকদের রিস্ক নেওয়ার ক্ষমতা আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ৮. সাহিত্য না বোঝাটাই সাময়িকী সম্পাদনার অন্যতম গুণে পরিণত হয়েছে। ৯. সাহিত্যিকদের কাছ থেকে লেখা চাওয়ার প্রথা প্রায় উঠে গেছে।

১০. গত দশ বছরে কোনো ভাল সাহিত্যিক কোনো সাময়িকীর সমর্থন ও তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছেন এ দাবি কোনো সাময়িকী করতে পারবে না। ............... সাহিত্য সাময়িকীর এই দুর্দশার জন্য পত্রিকাগুলার দায় আছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় দায় কিছু ভূতপূর্ব সাহিত্য সম্পাদকদের। এরা সাময়িকীগুলোতে উত্তরসুরি হিসেবে সাহিত্য মনোভাবাপন্ন দুর্বল কিছু ব্যক্তিকে বসিয়ে সাহিত্য সম্পাদনার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। এইসব সম্পাদকরা ১০ বছর কেন ১০০ বছর সাহিত্য সম্পাদনা করলেও সাহিত্যের উপকার-অপকার কিছুই করতে পারবে না।

............... যাই হউক। এহেন পরিস্থিতিতে ব্লগ, ফেসবুক, কবিসভার যুগ শুরু হইছে। এইগুলাতে কিছু সাহিত্যচিন্তার দেখা মিলতেছে। কিছু আলাপ আলোচনা হইতেছে। আশার আলো এইখানেই।

আরেকটি আশার আলো হইলো বিডিনিউজের আর্টস পাতা। আকারে প্রকারে ব্লগের মতো হইলেও ট্রাডিশনাল সাহিত্য সাময়িকীই এইটা। এই সাময়িকীর দুই বছর হইলো। ব্রাত্য রাইসুর সম্পাদনায় এই সাময়িকীটাকে সার্বিক বিচারে আমার কাছে বাংলাদেশের সেরা সাহিত্য সাময়িকী মনে হইতেছে। কেন সেরা সেইটা জাস্ট লিঙ্ক ধরে বিডি আর্টসে গেলেই বোঝা যাবে।

তুলনাও সহজে করা যাবে। আমি এইখানে স্বভাবমতো বিডিআর্টসের কিছু সমালোচনা কইরা রাখি বরং। ১. প্রবন্ধ, অনুবাদ, সমসাময়িক ঘটনা ও বিতর্ক বিষয়ে লেখা প্রকাশ করলেও বই আলোচনা ও সমালোচনায় বিডিআর্টস তেমন আগাইতে পারে নাই। ২. নির্দিষ্ট একটা লেখক বলয়ের মধ্যে আবর্তিত হইতেছে এটি। বিশেষ কইরা নব্বইয়ের শেষ, শূন্য বা তারপরের লেখকদের তীব্র অনুপস্থিতি আছে।

৩. কবিতার ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল ভূমিকা দেখা যাইতেছে। ....................... আরও কিছু সমালোচনা করা যাইতো। এখন থাক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.