আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঁচটি লেখা



ব্যারোমিটার বাড়িটা দশতলা হওয়ার মজা কি জানো, ছাদে উঠলে সবটা শহর দেখার আনন্দ আর প্রাণ ঠাণ্ডা করা বাতাস সারাবছর! এসো একদিন। ছাদে যা চাঁদ ওঠে না, ফিরতেই চাইবে না ছাদ ছেড়ে! তা ছাড়া ছাদে কিছু চিবুতে চিবুতে কখন বিকেলটা শেষ হয়ে যাবে, বুঝতে পারবে না, একটা বিকেল আনন্দে কাটানো যা দুর্লভ তা কে না জানে আর এতে কারই বা ক্ষতি। যদিও তোমার আনন্দের অভাব নেই, তবুও বন্দুদের বাড়ির ছাদ বলে কথা, অন্তরঙ্গতা তুচ্ছ আনন্দকেও কী যে ঈর্ষণীয় করে তোলে। ফিরে এসে কাউকে যদি বলো টের পাবে খুব, না বললেই বা ক্ষতি কী। তাছাড়া বাবার অগাধ থাকলেই কী আমি তো গরীব, আধুনিক একটা মানুষ কখনই বাবার সম্পদ নিয়ে আর যাই হোক গর্ব করতে পারে না, কী বলো।

তাছাড়া একটা ঝকঝকে এক্সিকিউটিভ হিসেবে ছোট জীবনটা ঝুটঝামেলাহীন নীরবে কাটিয়ে দিতে চাই। দুএকটা ফুলের পাশে নীরবে কাটাতে পারলে তা কী এমন মন্দ হবে? আর কেই বা এমন একটা জীবনের পাশে দীর্ঘপথ হাঁটতে চাইবে? বলে একটা মিষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলুন একটু লম্বা করে। ভালবাসি শব্দটির আগে এইভাবে এক লক্ষ শব্দ ব্যায় করে ফেলুন নির্দ্বিধায়। সম্ভবত কাউকে ভালবাসারও আর দরকার নেই আপনার। সেই এখন থেকে আপনাকে বাসবে ভীষণ বাসবে আর বারবার জানতে চাইবে তাকে আপনি ভালবাসেন কিনা।

কেননা সকলের কাছে মনে রাখবেন সবচেয়ে মূল্যবান বস্তুটিই সবচেয়ে কমদামী। এমন কি এটা উচাচারণ যোগ্যও নয়। সেটা কী বুঝলেন তো, ভালবাসা! আর তখন আপনিই সবচেয়ে ভাল বুঝবেন, আমাদেও দেশে ছেলেমেয়েগুলো কী নাজুকভাবে বেঁচে রয়েছে। তো ভালবাসা। এই শব্দটির আগে এক লক্ষ শব্দ ক্ষয়ে ফেলেও কোন কাজ হবে না, কেননা, কে না জানে, ভালবাসা ভাল বাসাতে বসেই, ভাল পেশাতে মজেই, ভাল খাদ্যের স্বাদে ডুবেই কেবল অনুভূত হতে শুরু করে।

বিশ্বাস না করলে একবার চেষ্টা করে দেখুন, শব্দগুলোর কোন দামই থাকবে না, বরং শব্দগুলো শত্র“ হয়ে দাঁড়াবে আপনার। ভালবাসা শব্দটিতে যে ভালবাসা নাই হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। ভালবাসা সবসময়েই শব্দসমাজের বাইরে বাস করে। ইটকাঠপাথরের, মাছমাংস, চাইনিজের বাইরে রক্তমাংসহীন অপার্থিব ভালবাসা দিয়েই বা কার কী দরকার, যা কেবল শব্দেই বাস করে, তাই না! তখনও আপনি সবচেয়ে ভাল বুঝবেন, আমাদের দেশে মানুষ কি নাজুকভাবে বেঁচে রয়েছে! ০৮.০৬.২০০৮ বাঁধাকপি বাঁধাকপির মতো আত্মমগ্ন থেকে কী লাভ! দিন দিন ফুটবোনা ফুটবোনা এই ব্যাকুলতা বুকে লুকিয়ে দেখো সেও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ন্যায় দেহে ফুলে ওঠে, নিজের অজান্তেই, আর পাশে ফুটে থাকা ফুলকপি তা দেখে হাসে, সে ফুটেছে অনেক আগে! মৌনচিন্তা করবে না ক্ষমা তোমার গোপনীয়তাকে, ফাঁটিয়ে দেবেই হাটে। ফুলকপি, জানতো না জগতে গোপনীয়তা বলে কিছু নেই, আছে ভান।

বাঁধাকপি জেনেছে ঠেকে কিন্তু ততদিনে পুরোই ভুলেছে ফুটার কৌশল। বিশাল চাঁদ পড়ে থাকে মাঠে, তার সাথে তারও প্রস্ফুটন দেখবে বলে, আর সে দেখে, বাধাকপি কী প্রবল নিজের বিরুদ্ধে, অসংখ্য পাতাদের অনির্বাণ-কলে¬াল, নিজের বিকাশের বিরুদ্ধে কেবলি জট পাকিয়ে যাচ্ছে। বাঁধাকপি এক অপূর্ব অভিশাপ, এক অন্তঃমুখী দর্শন, ভদ্রবধিরতা, এক সবুজ ব্যার্থতা, এক সক্রেটিস বিদ্যার কুফল। আত্মনং বিদ্ধি’র মাতলামো। চাঁদেরও মুখ দেখতে ভুলে গেছে! কিংবা তার আছে কুরুক্ষেত্র-স্মৃতি, আর এখনো শুনছে স্যাটেলাইটযুদ্ধ, বোমাফাটা শব্দ, ফলে সেধিয়ে গেছে নিজের ভেতর, আরো, চোখ গেছে নিজেরই ভেতর বেকে, আহ! সবুজ-অন্ধচোখ বংশ পরম্পরায় বাধ্য নাকি ভিতু হয়ে।

বাধা কপি এক সবুজ-গর্জন ভোরবেলা শিশিরে সূর্য়ের। বাঁধাকপি, অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে, রোজ সুর্য ওঠে। আরও অনেকের সাথে সুধিন্দ্রনাথও তাকে ডাকছে সহযোদ্ধা হিসেবে। ফুলকপির সাথে একই ঋতুতে কাটা হচ্ছে, হাটে যাচ্ছে বাঁধাকপি। নিজের ভেতর তাকিয়ে বুদ্ধের নির্বান হলো, সক্রেটিসের না হোক।

সে অনির্বান-সবুজ আজও জন্ম নিচ্ছে এবং জন্মান্তর মুক্তিও দেবে না। চোখবুজা দর্শন বাহিরে তাকাও, তোমাকে তোলে নিয়ে যাচ্ছে কেÑ প্রেমিক না যম, একবার দেখো। ২২-২৬.০৬.২০০৮ মহাশুন্যতার ঢেউ শান্তুনু চৌধুরি-কে শব্দের ঘ্রাণ কী অদ্ভুত তাদের ফাঁকে ফাঁকে এসে বাসা বাধে জীবন মহাকালের ঢেউ আছড়ে পড়ে বিরামহীন আমাদের চেতনার সৈকতে নির্জন শব্দবিথির আঁকাবাঁকা সরণিতে একা একা মগ্ন হাঁটে যে তার নির্জন হাত দ্রুত ভরে ওঠে কুড়িয়ে পাওয়া ঘুঘুর ডিমে মাঝরাতে শুনতে পায় নির্জন দুপুর উপচানো ঘুঘুদের ডাক তখন দেখতে পায় সে ও তার খাট ঘুঘুর ছানাসহ মহাশুন্যে ভেসে চলেছে কোথায় তাদের দেহের ঢেউ লেগে তারারা উঠছে নামছে চাদরের খুট ফর ফর করছে উজ্জ্বল হাওয়া লেগে দেখতে পায় বিছানায় রাখা ডিমগুলো ফেটে কখন একে একে বেরিয়ে এসেছে ঘুঘুর বাচ্চারা তাদের ডাক মহাকালের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ফের অর্থভার শুন্য উঠে দাঁড়ায় সে একবার বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে বা উঠানে এসে না হয় ফুটপাতে শুয়ে থেকেই স্বপ্নের বা ঘুমের ভেতর থেকেই একবার দূর আকাশে তাকায় দেখতে পায় কোন অর্থ নয় কোন স্পষ্টতা নয় চিরঅনিকট তারাগুলোর অস্ফুট চেয়ে থাকা রাতভর তার দিকেই তার শিয়রের দিকেই ঘুঘুর ব্যাকুল বাচ্চাগুলোর দিকেই একটুকরো অস্পষ্ট হাসির চাপে তার ঠোঁট তখন কেমন একটু বেঁকে থাকে একটুক্ষণ তারপর অতল ঘুমের জাল তাকে শিকার করে কোথায় যে নিয়ে যায় তার বউ তার প্রিয় মেয়েটিও জানতে পারে না আর মহাকালের ঢেউ তার ভেতর দিয়ে বিরামবিহীন প্রবাহিত হচ্ছে বলে সে টের পায় মাতৃগর্ভে নির্ভার শিশু যেভাবে হাত পা কুকড়ে শুয়ে থাকে সব চেয়ে একা তার জগৎ ঘিরে আছে এক অদৃশ্য মা অনুভব না করেই এবং আজও মহাকাল তার জন্য মুঠো মুঠো মিহি ঘুম বুনতে পারে তাই মাঠ কি মাঠ জুড়ে ঘুমন্ত সেও তেমনি ভাসতে থাকে মহাশুন্যে একা একা নির্ঘুম তাকেও ঘিরে রয়েছে মায়ের মতোই এই মহাশুন্যতা সে জেগে উঠে ভাবে জাগবার আগে ভোরে বিছানার পাশে এসে তার কুকড়ানো শরীর খুঁজে পায় তার বউ তার সন্তান তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সে ফের অনুভব করে সে একা হয়েও কেমন যেনো একা নয় রয়েছে বন্ধনেই অনুভব করে বিছানায় কুকড়ে পড়ে থাকা কাগজের কয়েকটা শব্দ তাকে মুক্তি দিয়েছিলো জগতের চাপ থেকে আর তা কত না জরুরি ঠেকে তার কাছে ঐ দেখো এক মহাজাগতিক লোভ শব্দের ফাঁক থেকে রিনরিন ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘরে তাকেই একা এবং একাকার করবে বলে ফের ১৮.০৩.২০০৯ দিক আমি আজও ভাবি আমার চারদিকের দিকশূন্যতা নিয়ে সব দিক আসলে আমাদের বানানো অসহায় একটা কিছু ধরে নেয়া কোন একটা দিক ধরে যেতে হবে বলে কতটা এগোনো গেল বা গেল না মেপে নিতে গিয়ে আমরা দিক এবং বিদিকের জন্ম দেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবিস্কার করি কে দিকভ্রান্ত আর কেই বা সঠিক পথে চলেছি প্রত্যেকেই ধরে নেয়া দিকের টানে হারিয়ে যাই এই গৃহ ও গ্রহহীনতায় অন্ধকার আচ্ছন্ন মহানীলশুন্যতার দিকহীনতায় ভাসতে থাকি আর আমাদের ঘরগুলো বুদ্বুদের মতো মহাশুন্যে প্রস্ফুটিত হয় এবং ফের নিরবে নিভে যায় একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঝগড়ায় মেতে ওঠি আমরা একটা কিছু করতে হবে বলে কিংবা নীরবতা আমাদের নীল করে বলে একে অপরের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখাই ওই উত্তরের ধ্র“বতারা পশ্চাতে ফেলে আমরা আজও ভেসে চলেছি ঐ মহাদক্ষিণের দিকে কেউ কেউ ভয়ে সংশয়ে তাকাই কিংবা কোন অর্থই নেই এসবের জেনেও মোটেই দিক ঠিক হচ্ছে না বলে বৃথাই তর্ক তুলি আসলে দিক বলে কিছু নেই বলেই ফের বিষাদ আচ্ছন্ন ও বোবা হয়ে থাকি বাধ্য হয়ে বহুদিন আর এর প্রমাণ চেয়ে চেয়ে আবার আমরা একটা না একটা দিকের জন্ম দিই এবং নীল নৈঃশব্দ ভেঙ্গে নিরোপায় কথা বলে উঠি কেবলি নীরবতা জাগাবো বলে মুক আত্মার চরাচরে বহুদিন বোবা বসে থাকি একে অপরের মুখ চেয়ে শব্দ না নৈঃশব্দ বিরোধী আমরা নির্ধারণ করতে না পেরে একটির কাছ থেকে অপরটির কাছে পালিয়ে বেড়াই এবং আমাদের তর্ক কোনদিনই ফুরায় না তর্ক ফিরে ফিরে যুদ্ধের রূপ নেয় নিজেদের অজান্তে আমরা ক্রমেই রক্তস্নানে জড়িয়ে পড়ি এবং নামিয়ে আনি ফের নৈঃশব্দ্যকে আমাদের চরাচর জুড়ে ভাসতে থাকি মহাশুন্যে দিকহীনতায় ১৬.০৩.২০০৮ ও আপেল, উজ্জ্বল উদ্ধার রণজিৎ দাশ’কে এক আপেল। উজ্জ্বল বিদেশী ফল। তবু জন্ম থেকে।

দেখে আসছি। আর কথা হয়েছে। আরও কম। বিছানায়। মাথার পাশে।

আমি নয়। মা আমার। তার। আরও উজ্জ্বল উদয়। দেখতে চেয়েছেন।

যতোবার। অসুখে পেয়েছে। আমাকে। মায়ের আকাংখাকে। ভেংচি কেটে।

দুএকবার। আসতেই হয়েছে। তাকে। এখানে। অথচ বাবার দারিদ্র।

আসার পথে। তাকেও। কুচকে। ¤¬ম্লান করে ফেলেছে। দুই বিছানায় পড়ে থাকা।

আমি। বুঝেছি বারবার। মা আমার। বিদেশী। আপেলের চেয়েও।

সুদুর। অভাবের ধাক্কায় ধাক্কায়। অচল চাকার মতো। বুড়ো বয়েসেও। গড়িয়ে গড়িয়ে।

চলে। কাজ আর টাকার। সন্ধানে। নিদ্রাহীন গলি। ধরে ধরে।

তিন আপেল। আমিও দেখেছি। আরো অনেকের মতো। রঙিন। পথে পথে।

ভীষণ। বিদেশী। তাকে নিয়ে। ভেবেছি। আরো কম।

তার অনুপস্থিতি। আজো। লোকের। স্ট্যাটাস ধরে। টান দেয়।

শহরে। মফঃস্বলে। চার অনেকে। মাকে নয়। আপেলের দিকে ছুটে।

পথ ও মায়ের মুখ। হারিয়ে ফেলে। এ শহরে। আর। চেঁচিয়ে কাঁদে।

আপন মুখ ভুলে। কদাচিৎ। উজ্জ্বল আপেল হলে। ঘরে ঘরে। দ্রষ্টব্য।

হয়ে ওঠে। আর। উদয়। কামনা করে। প্রত্যেকে তার।

আপেল আজো। কী অনৈতিক। উজ্জ্বল। আর সুদুর। ও স্ববিরোধময়।

১৪.০৮.২০০৭

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।