শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
"সিন্ধু লিপি (Indus Script) ভাষাতাত্ত্বিক দিক থেকে দ্রাবিড়ীয় (Dravidian) এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে প্রাচীন তামিল সমাজ ব্যবস্থার (Tamil Polity) সাথে, এতদিন যা ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে আরো অনেক বেশি কাছাকাছি", বললেন বিখ্যাত লিপি-বিশেষজ্ঞ (epigraphist) ইরাবাথাম মহাদেবন (Iravatham Mahadevan)।
ইরাবাথাম মহাদেবন
মহাদেবন গত শুক্রবার তামিল নাড়ু ইতিহাস কংগ্রেসের ষোড়শ বার্ষিক অধিবেশনে একটি নিবন্ধ পাঠ করেন যাতে সিন্ধু লিপির উপর আলোকপাত করা হয়। প্রাচীন তামিলে সিন্ধু সভ্যতার ছাপ শীর্ষক নিবন্ধটি তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণাকর্মের অংশবিশেষ, যা এখনও সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়নি।
তিনি বলেন, তাঁর দাবি অবিশ্বাস্য ঠেকলেও, গত চার দশক ধরে সিন্ধু লিপি ও প্রাচীন তামিল সাহিত্যকর্মের উপর ব্যাপক গবেষণা তাঁকে এ উপসংহারে উপনীত করেছে।
সিন্ধু লিপি এবং তামিল-ব্রাহ্মী (Tamil-Brahmi) শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ মহাদেবন বলেন, এ ছাড়াও সিন্ধু সভ্যতা যে প্রাক-আর্য (Pre-Aryan) যুগের, এ ব্যাপারে যথেষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়েছে। সিন্ধু সভ্যতা ছিল নগর-কেন্দ্রিক (urban) যেখানে বৈদিক সংস্কৃতি (Vedic Culture) ছিল গ্রামীণ এবং পশুচারণ-নির্ভর (rura & pastoral)।
সিন্ধু মোহরে (Indus seals), তিনি উল্লেখ করেন, আর্যভাষী সমাজের মূল পরিচায়ক-প্রতীক অশ্ব কিংবা কীলক-শোভিত চাকা বিশিষ্ট রথের (chariot) কোনো প্রতিকৃতি পরিলক্ষিত হয়নি। মোহরসমূহের চিত্রাঙ্কন দেখে প্রতীয়মান হয়, সিন্ধুর ধর্মে (Indus Religion) মহিষের শিং বিশিষ্ট এক পুরুষ দেবতা, বিভিন্ন মাতৃদেবী, পিপুল বৃক্ষ এবং সর্পের পূজার প্রচলন ছিল, এবং সম্ভবত লিঙ্গম প্রতীকেরও (Phallic Symbol)। বর্তমান হিন্দু ধর্মে প্রচলিত এ ধরণের ধর্মাচার উপমহাদেশের আদি অধিবাসীদের কাছ থেকে উদ্ভূত এবং ঋগ্বেদের (Rig Veda) ধর্মে তা ছিল সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
পিপুল বৃক্ষের সীমানায় দণ্ডায়মান দীঘল চুলের কঙ্কণ পরিহিতা শিং-বিশিষ্ট দেবীকে তার ডানপাশের মানুষটি পূজা নিবেদন করছে। একটি বৃষ এবং আরো সাতজন নারী দৃশ্যপট পরিবেষ্টন করে রয়েছে।
এ ছাড়া সিন্ধু সভ্যতা যে দ্রাবিড় সভ্যতা, এ ব্যাপারেও যথেষ্ঠ ভাষাগত নিদর্শন রয়েছে বলে তিনি যুক্তি দেন এবং এর সপক্ষে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন:
* ব্রাহুউ (Brahui) নামক একটি দ্রাবিড় ভাষা, যা এখনও পাকিস্তানের সিন্ধু এলাকায় প্রচলিত।
* দ্রাবিড় ভাষা থেকে ধারকৃত ঋগ্বেদের শব্দসমূহ।
* ইন্দো-আর্য ভাষার উপর দ্রাবিড় ভাষার সাবস্ট্রেটাম প্রভাব, যা ঋগ্বেদীয় আর্য ভাষার মূর্ধন্য ব্যঞ্জনবর্ণের উপস্থিতিতে প্রতীয়মান।
এবং
* প্রাকৃত উপভাষাসমূহের প্রধান প্রধান পরিমার্জনা যা এগুলোকে সম্পর্কগত দিক থেকে আর্য ভাষা শাখার চেয়ে দ্রাবিড় ভাষা শাখার সাথে বেশি নিবিড় করে।
সিন্ধু লিপির কম্পিউটার বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, ভাষাটিতে দ্রাবিড় ভাষার মতো কেবল প্রত্যয় (suffix) বিদ্যমান; তাতে নেই আর্য ভাষার ন্যায় কোনো উপসর্গ (prefix) কিংবা মুণ্ডা (Munda) ভাষার ন্যায় কোনো মধ্য-পদাংশ (infix)।
তাঁর নিবন্ধে আর্য ও দ্রাবিড় শব্দদ্বয়ের প্রয়োগ সুস্পষ্ট করতে গিয়ে মহাদেবন বলেন, তিনি তাদের কেবল ভাষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে উল্লেখ করেছেন, কারণ আর্যভাষীরা হাজার হাজার বছর পূর্বেই দ্রাবিড় ও মুণ্ডাভাষীদের সাথে মিশে গিয়ে গড়ে তুলেছে বৈচিত্রময়, যোগিক ভারতীয় সমাজ।
সূত্র
http://beta.thehindu.com/news/article31700.ece
সম্পর্কিত পোস্ট
প্রাচীন পৃথিবীর বিস্ময়, সিন্ধু লিপি, আর্য প্রোপাগাণ্ডা এবং নতুন আলো: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।