আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিন্ধু সভ্যতার খোঁজে

বল বীর- বল উন্নত মম শির, শির নেহারি' আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা সমূহের মধ্যে একটি সিন্ধু সভ্যতা। যেটি আজকের পাকিস্তানের সিন্ধু নদ উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল। ১৯২১ সালের আগ পর্যন্ত এই সভ্যতার কথা মানুষ জানতো না, যদিও ১৮৪২ সালে চার্লস ম্যাসন নামের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন সৈন্য তার “ন্যারেটিভস অফ ভেরিয়াস জার্নিস ইন বালোচিস্তান, আফগানিস্তান অ্যান্ড দ্য পাঞ্জাব” গ্রন্থে সিন্ধু সভ্যতার “হরপ্পা” নামক এক প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষের কথা প্রথম উল্লেখ করেন। ১৮ শতকের মাঝামাঝিতে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানী করাচি ও লাহোরের মধ্যে রেল-লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে ১৮৫৬ সালে এই রেল-লাইন স্থাপনের দায়িত্ব পান ২ ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার জন এবং উইলিয়াম ব্রান্টন।

দায়িত্ব পাওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার জন রেললাইন স্থাপনের জন্য উপযুক্ত ব্যালাস্ট (রেললাইনে যে পাথরগুলো ব্যবহৃত) কোথা থেকে পাওয়া যায় এ ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে অবশ্য এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের স্তূপ থেকে আনা ইট ব্যবহৃত হয়। আর এসব ইট আনা হয়েছিল সেই হরপ্পা নামক প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ থেকে যা দিয়ে নির্মাণ করা হয় লাহোর থেকে করাচি পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলপথ। হরপ্পা ছাড়াও মোহেনজো-দারো এবং আরো ছোট ছোট প্রায় একশ শহর ও গ্রাম নিয়ে প্রাচীন এই সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। লাহোর থেকে প্রায় ১২০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে সিন্ধুর একটি শাখা নদীর তীরে হরপ্পার অবস্থান।

আর করাচি থেকে প্রায় ২০০ মাইল উত্তর-পূর্বে মোহেনজো-দারোর অবস্থান, এটি অবশ্য মূল নদী সিন্ধুর তীরেই অবস্থিত। ১৯২১ সালের দিকে স্যার জন মার্শাল হরপ্পায় প্রত্নতাত্তিক খননকার্য পরিচালনার জন্য অভিযান চালান। তাঁর এই অভিযানের ফলশ্রুতিতে তিনি এবং রায় বাহাদুর দয়ারাম সাহানি ও মাধোস্বরূপ ভাট হরপ্পা আবিস্কার করেন। অন্যদিকে ই.জে.এইচ. ম্যাককি এবং বাঙালি রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় মোহেনজো-দারো আবিস্কার করেন। মোহেনজো-দারোর আবিস্কারেও স্যার জন মার্শাল সম্পৃক্ত ছিলেন।

মোহেনজো-দারোর ভবনগুলো নির্মিত হয়েছিল দাবার ছকের প্যাটার্নে। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বহু বাড়িঘর ও দোকানের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শহরের এক কোণে ছিল সুরক্ষিত রাজধানী, সেখানে পাওয়া গেছে বিশাল শস্যাগার। ঐতিহাসিকদের মতে, যেসব শিল্পনিদর্শন এখানে পাওয়া গেছে তা থেকে বোঝা যায় তারা ছিল সুদক্ষ মৃৎশিল্পী। মাটির তৈজষ পত্র তৈরির জন্য তারা ব্যবহার করতো কুমোরের চাক।

তারা পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করলেও ছুরি ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করতো ব্রোঞ্জ এবং তামার সাহায্যে। মোহেনজো-দারোতে কতগুলো ব্রোঞ্জনির্মিত পাত্র ও মূর্তি পাওয়া যায়। তারা এক ধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করতো যার মাধ্যমে কী বোঝাতো তা আজও বের করা সম্ভব হয়নি। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ সালের দিকে সিন্ধু সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা আর্যদের আক্রমণে এই সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়।

বর্তমান পাকিস্তানের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ, ভারতের পশ্চিমদিকের রাজ্যগুলি, দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তান এবং ইরানের বালোচিস্তান প্রদেশের পূর্ব অংশ এই সভ্যতার অন্তর্গত ছিল। সমতল'এ এক কপি। । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.