আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিন্দু থেকে সিন্ধু গড়া - আমার উইকি অভিজ্ঞতা - ২

জাদুনগরের কড়চা

[প্রথম পর্ব] লাখে একটা সম্ভাবনা! অনলাইনে পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়েছে, এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। কিন্তু অভাবনীয়ভাবে, এবং ধারণাতীত পরিস্থিতে সেই দেখাটা হলে আশ্চর্য হতে হয় বই কি। উইকিপিডিয়াতে কাজ করার সময়ে অনেকের সাথেই পরিচয় হয়েছে ভার্চুয়াল জগতে, অনেকের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু দেশের উইকিপিডিয়ানেরা বাদে অন্য কারো সাথে দেখা হয়নি অনেকদিন। প্রথম যে ভার্চুয়াল-পরিচিত-বাস্তবে অচেনা উইকিপিডিয়ানের সাথে দেখা হয়, সে হলো পশ্চিমবঙ্গের ডাঃ সপ্তর্ষী মজুমদার।

সপ্তর্ষীর সাথে আমার পরিচয় ইংরেজি উইকিতে। আসলে তখন বাংলাভাষী উইকিপিডিয়ানদের আমি রীতিমতো হাতে হারিকেন নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি, তাদের ধরে বেঁধে যদি বাংলা উইকিতে নিয়ে আসা যায়, তাহলে যদি কিছু কর্মী পাওয়া যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। সপ্তর্ষীর নাম দেখে তাকে মেসেজ দিলাম, বাংলা উইকিতে কাজ করার কথা বললাম। তখন অবশ্য তার সম্পর্কে বেশি কিছুই জানতাম না। এরকম হাজার খানেক মেসেজ দিয়ে দুই তিনটা জবাব পাই, তাই সপ্তর্ষীর জবাব পাবো, তা ভাবিনি।

কিন্তু সপ্তর্ষী আর দশটা উইকিপিডিয়ানের চাইতে আলাদা। পশ্চিমবঙ্গের ছেলে সপ্তর্ষী দেশে ডাক্তারী পড়া শেষ করে আমেরিকাতে তখন পড়াশোনা করছে ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। বাংলা ভাষার প্রতি গভীর টান। বাংলা উইকির কথা বলা মাত্র ঝাঁপিয়ে পড়লো কাজে। ২০০৬ এর দিকে বাংলা উইকিতে যারা কাজ করেছে, তারা দেখেছে, সপ্তর্ষী কীভাবে নিয়মিত কাজ করে গেছে।

আমার সাথে নিয়মিত উইকিতেই যোগাযোগ হতো। ইমেইলেও যোগাযোগ হয়েছে বেশ কয়েকবার। এহেন যোগাযোগের পালা চলতে চলতে এক সময়ে ২০০৭ এর মাঝামাঝি গুগলে কাজ করতে আমি চলে গেলাম ক্যালিফোর্নিয়াতেই, স্ট্যানফোর্ডের পাশেই মাউন্টেইন ভিউ শহরে গুগলের অফিস, আমি থাকিও সেখানে। সিলিকন ভ্যালিটা আসলে সান ফ্রান্সিস্কো থেকে সান হোসে পর্যন্ত প্রায় ৬০ মাইলের একটা হাইওয়ের দুপাশ জুড়ে গড়ে ওঠা। যাহোক, ব্যস্ততার কারণে তখন উইকি মাথায় উঠেছে, সারাদিন গুগলে কাটিয়ে বিকেলে আমি আর আমার স্ত্রী জারিয়া মিলে বেরিয়ে পড়ি আশে পাশে ঘুরতে।

সপ্তাহান্তে তো কথাই নেই। তো সেরকম একবার সানিভেইলে গেছি (ইয়াহুর হেড অফিস ওখানে), শালিমার নামের একটা ইন্দো-পাক রেস্টুরেন্টে, হালিম আর নান রুটির অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছি। (অফ টপিক - পাকিস্তানীরা আবার বাঙালিদের হালিম খাওয়া দেখলে টাসকি খেয়ে যায়। আমরা হালিম খাই স্যুপের মতো করে, শুধু হালিমই একটা খাবার, কিন্তু ওরা খায় ঝোলের মতো করে রুটি দিয়ে মাখিয়ে, ফলে হালিম অর্ডার দিচ্ছি কিন্তু নান রুটি / পরোটা বাদে, এটা দেখলে পাকিস্তানী ওয়েটারেরা মিনিটখানেক হা করে থাকে। একবার না, ৩ জায়গায় এটা দেখেছি)।

ব্যস্ত রেস্তোঁরা, মিনিট দশেক লাগে খাবার আসতে। আমি আর জারিয়া গল্প করছি, এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। হঠাৎ সামনের টেবিলে, যেখানে এক দম্পতি আর একটা শ্যামলা করে ছেলে বসে ছিলো, সেই টেবিলের শ্যামলা ছেলেটি লাফিয়ে উঠে বললো, আরে রাগিব, তুমি এখানে!! আমি একবার খাবি খেলাম, সুদূর ক্যালিফোর্নিয়াতে এক অচেনা অজানা রেস্টুরেন্টে বাংলাতে কে ডাকতে পারে, যাকে আমি জীবনে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। আমার বেকুব বনে যাওয়া চেহারা দেখে অবাক হওয়াটা বুঝতে পারলো সে, তখন বললো, আমি সপ্তর্ষী। ঘটনা হলো, সপ্তর্ষীর বড় বোন ওখানে একটা কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার, দুলাভাইও তাই।

সপ্তর্ষী কিন্তু তখন আর স্ট্যানফোর্ডে নেই, প্রায় ঘণ্টা চারেক দূর পথের (৩০০ মাইলের মতো দূরে) আরেকটা শহর সাক্রামেন্টোতে কাজ করছে। কয় দিন ছুটি পেয়ে বেড়াতে এসেছিলো, বোন দুলাভাইয়ের বাসায় এসে সন্ধ্যাতে বেরিয়েছে খেতে। আর প্রচন্ড কাকতালীয় ভাবে একই সময়ে সেই রেস্টুরেন্টেই এসেছি আমরা, আর বসেছি ঠিক ওদের টেবিলের পাশেই। আমার ছবি ও দেখেছিলো আমার ওয়েবসাইটে, চেহারা দেখে আর আমাদের নিজেদের কথাবার্তা শুনে নিমেষেই বুঝে ফেলেছে, এটা আমিই। পরিসংখ্যানের সম্ভাবনা তত্ত্ব পড়েছি ... কিন্তু এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা লাখে একটাও হবে কি না, সন্দেহ আছে।

(আমার জীবনে আরেকবার এরকম অবাক হয়েছিলাম, বছর দুয়েক আগে একদিন আমি আমার এক বিদেশী লোককে ফোন করতে গিয়ে ভুল নাম্বারে ডায়াল করি, সাথে সাথে টের পেয়ে কেটে দেই। খানিকক্ষণ পরে ঐ নম্বর থেকে ফোন এলো, বিশুদ্ধ বাংলা ভাষাতে একজন জানতে চাইলো, "আফনি কেডা, এই নাম্বারে কল দিসেন ক্যান"!! ভেবে দেখুন, বিদেশী কাউকে ডায়াল করতে গিয়ে আমার রঙ নাম্বারটা গেছে নিউ ইয়র্কের এক বাংলাদেশী ব্যক্তির ফোনেই!) সপ্তর্ষীর সাথে বন্ধুত্ব বেড়েছে আরো, চাকুরী সুবাদে ও সেই ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে এখন রয়েছে শিকাগোতে। নাহ, ওখানকার রেস্টুরেন্টে ওর সাথে আবার দেখা হয়নি ওভাবে, তবে আবার বিশ্বের কোনো প্রান্তেই কারো সাথে আবারও মোলাকাত হলে আর অবাক হবোনা ওবারের মতো । [চলবে]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.