আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষাদ সিন্ধু



যখন মীর মশাররফ হোসেনের চার বছর চার মাস বয়স তখন তার নিজ বাড়িতে পড়ালেখার হাতেখড়ি দেন মুন্সি জমীর উদ্দিন। মজার ব্যাপার হলো মশাররফের পিতাও পড়ালেখঅর হাতেখড়ি নেন মুন্সি জমির উদ্দিনের কাছ থেকে। ১৪ বছর বয়সে মশাররফ তার মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুরপর কিছুদিন তাঁর পড়ালেখা বন্ধ থাকে। তিনি এ সময় তার বাবার সাথে ফরদপুরের পদমদী বরিশালের বামনা, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান।

তার বাবার ঢাকা থেকে ফিরে কুষ্টিয়ার ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করে দেন। এছাড়াও তিনি পদমদী ও কৃষ্ণনগরে লেখাপড়া করেছেন। সে সময় ভারত জুড়ে বাল্যবিবাহের ছড়াছড়ি। আর এর স্বীকারও হোন মীর মশাররফ হোসেন। কলকাতা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই পড়াশোনার সুবিধার্থে তার বাবার বন্ধু নাজির আহমদের বাড়িতেই থাকেন।

নাজির আহমদের ছিল দু’কন্যা। বড় মেয়ে লতিফন ছিলেন সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী। মশাররফ হোসেন তাকে পছন্দ করেন। ১৮৬৫ সালের ১৯ মে মীর মশাররফ হোসেন বিয়ে করেন। বিন্তু পছন্দের মেয়েকে তিনি বিয়ে করতে পারেননি।

ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মীর মশাররফ' সম্পর্কে বলেছিলেন : ‘‘বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যে হিন্দু ও মুসলমানের দান সম্পর্কে যদি স্বতন্ত্রভাবে বিচার করা চলে, তাহা হইলে বলিতে হইবে, একদিকে-ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের যে স্থান, অন্যদিকে ‘বিষাদ সিন্ধু' প্রণেতা মীর মশাররফ হোসেনের স্থান ঠিক অনুরূপ। ’’এ সাহিত্যিক ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদী গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে তার প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি কুলসুমের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। মীর মশাররফ হোসেন জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৪৭ সালের ১৩ই নবেম্বর, কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে। হিসাব অনুযায়ী ‘বিষাদ সিন্ধু' রচনার [রচনা কাল ১৮৯১] একশত বছর পূর্ণ হয়ে গেছে বেশ আগেই।

তাঁর হাতেই আধুনিক গদ্যের যাত্রা শুরু। সৃজনশীলতার মধ্যদিয়ে তিনি সফলতার চূড়াকে স্পর্শ করেছেন। মীর মশাররফ হোসেন মূলত তার লেখনীর মাঝে ইসলাম ও মুসলমানদের কথাই বেশী তুলে ধরেছেন। এ জন্য তার লেখা মুসলিম জাতির কাছে সমাধৃত হয়ে আছে। এছাড়া ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা (১৮৯০), গাজী মিয়ার বস্তানী ‘এসলামের জয়’ (১৯০৮) উল্লেখযোগ্য।

মীর মশাররফ হোসেন লিখেছেন কবিতা, গদ্য, কাহিনী এবং নাটক। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রত্মাবতী'। এটা প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ সালে। মীর মশাররফের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তেইশ। ১৮৯১ সালে তিন পর্ব একত্রিত করে গ্রন্থাকারে ‘বিষাদ সিন্ধু' প্রকাশিত হয়।

কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। সেই ১৮৯১ সালে ‘বিষাদ সিন্ধু' প্রকাশের সাথে সাথে চারদিকে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছিল। আজো ‘বিষাদ সিন্ধুর' পাঠক-চাহিদা, এর আবেদন এবং সমাদর গগনস্পর্শী। মুসলিম বিদ্বেষ, ঘৃণা এবং আক্রমণেই বঙ্কিমের লেখার মূল চারিত্র্য।

অপরদিকে মীর মশাররফ হোসেন-তাঁর সাহিত্যের বিষয়বস্তু মুসলিম ঐতিহ্য থেকে গ্রহণ করলেও তাঁর ভাষা এবং তাঁর প্রকাশে অন্য ধর্ম কিংবা অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের চিহ্নমাত্র নেই। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। ‘বিষাদ সিন্ধুর' একটি বিরল বৈশিষ্ট্য-এর রচনাশৈলী এবং যাদুকরী ভাষার কৌশল। এ ক্ষেত্রেও তিনি বাংলা সাহিত্যের অগ্রপথিক।

বিষাদসিন্ধুর কাহিনীর মধ্যে সবটুকুই যে সত্য ইতিহাস এমন নয়, অনেক অবিশ্বাস্য কাহিনীও আছে। সে আমলে মুসলিম সমাজে সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা দেখা যায়নি। এ পরিবেশ থেকে মশাররফ বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী ছিলেন। গান-বাজনায়ও আগ্রহী ছিলেন।

সে সময় কুষ্টিয়া থেকে একটি নামকরা পত্রিকা বের হতো ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ নামে। এ পত্রিকার সম্পাদক কাঙ্গাল হরিণাথ মজুমদার মশাররফকে খুব স্নেহ করতেন। তার প্রেরণায় মশাররফ ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’য় লিখতেন। আরো পরে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি বিশুদ্ধ বাংলা চর্চা করেছেন।

‘বিষাদ সিন্ধু' বাংলা ভাষার সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। এ পর্যন্ত এর শতাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। মোট মিলে ছাপা হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ লাখ কপি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।