ভালো আছি
শুনে মনে হতে পারে এটা একটা ভূতের গল্প । আসলে তা নয়। আমি নিজেই ভূত-টুত বিশ্বাস করি না। যাই হোক গল্পটাই বরং বলি। এটা বন্দরনগরী লাসম্পেজিয়ার কাহিনী।
শহরের মিউজিয়ামে অ্যাটলান্টা নামে একটা কাঠের মূর্তি স্থান পেল। এটা ইটালির তৈরি নয়, কোন এক বিদেশী জাহাজ থেকে নামানো হয় এখানকার বন্দরে। কাঠের তৈরি এই নারীমূর্তিকে দেখে মনে হয় অষ্টাদশী।
মিউজিয়ামের কিউরেটর বয়েসে যুবক, নাম পল স্মিথ। এই নারী মূর্তিটির প্রতি ছিল তার দুর্নিবার আকর্ষণ।
সেই যেন ওর সব। ওকে না দেখলে চলে না যুবকের। এ নিয়ে বন্ধুরা ওর সঙ্গে কৌতুক করে, কিন্তু সরলমনা স্মিথের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই।
সবার লেখার বিষয়বস্তু এক নয়। কেউ লেখে অভিজ্ঞতা, আবার অনেকে মৌলিক লেখাও লেখে।
আর আমি মিউজিয়ামের বিষয়বস্তু নিয়েই বেশি লিখে থাকি। তাই লাসম্পেজিয়ার মিউজিয়ামে আমি প্রতিদিন যেতাম। যার ফলে স্মিথের সঙ্গে আমার পরিচয় হতে খুব একটা সময় লাগেনি। আমি দেখতাম, স্মিথ কাঠের তৈরি নারীমূর্তির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তো আছেই। চোখে পলক পড়ছে না।
কৌতুহল দমন করতে না পেরে তাই একদিন তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বন্ধু, যদি কিছু মনে না করো তো তোমাকে একটা প্রশ্ন করব? আচ্ছা, তুমি ওই মূর্তিটার দিকে সবসময় তাকিয়ে থাকো কেন? কি আছে ওর মধ্যে? মানলাম মূর্তিটা না হয় খুবই সুন্দর, কিন্তু ওটা তো একটা শুধুই কাঠের পুতুল, মানুষ তো আর নয়। ’
স্মিথ বলল, ‘ জানো সবাই না মনে করে আমি পাগল। তা না হলে......... আসলে মূর্তিটা সম্পর্কে আমি সবকিছুই জানি। আজ থেকে বহু বছর আগে যা ঘটেছিল তার কিছুই আমি ভুলিনি।
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।
আমাকে অবাক হতে দেখে স্মিথ বলল, ‘তুমি হয়তো ভাবছ, এ আবার কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা। কিন্তু আমি কিছুই বানিয়ে বলছি না। তুমি আমার কথা অবিশ্বাস কোরো না। শোনো তাহলে আমার অতীত জীবনের কাহিনী।
অনেকদিন আগের কথা।
সতেরোশো চুয়াত্তর সাল, ১৩ অক্টোবর। সবেমাত্র বিয়ে করেছি আমি। মেয়েটির নাম অ্যাটলান্টা। সুন্দরী অল্প বয়েসী বউ পেলে একটা ছেলের যা হয়, আমারও তাই হলো। খুশিতে, আনন্দে হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা দু’জন।
বিয়ের দু’তিন মাস পরেই আমরা বেড়াতে বেরুলাম। এক সময় পারস্য উপসাগরের তীরে চলে এলাম। সেখানেই দুর্ঘটনাটা ঘটল। বিধি বুঝি আমাদের কপালে এত সুখ রাখেনি। সৈকতে ঘুরতে ঘুরতে আমরা খুব হাঁপিয়ে উঠলাম।
তাই বনপথ দিয়ে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে লাগলাম। হঠাৎ অ্যাটলান্টা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি কিছু বোঝার আগেই সে মাটিতে ধপাস করে পড়ে গেল। আমি তখন পাগলের মত হয়ে গেলাম। তারপর যখন নিজেকে সামলে নিলাম তখন দেখি সব শেষ।
আমাকে ছেড়ে অ্যাটলান্টা সারাজীবনের জন্যে চলে গেছে।
ওকে বুকে নিয়ে অনেক কাঁদলাম। কিন্তু যতই কাঁদি না কেন, মৃত মানুষকে কি আর ফিরে পাওয়া যায়?
অ্যাটলান্টাকে নিয়ে মিশরে গেলাম। সেখানে তার কাঠের মূর্তি বানিয়ে এখানে ফিরে আসি। তারপর আবার নতুন করে জন্ম নিয়ে আমি হয়েছি পল স্মিথ।
এই ভাবেই আমি আমার অ্যাটলান্টাকে আগলে রেখেছি। এবার তুমিই বলো, লোকে আমার যে যাই বলুক তাতে কি আমার কিছু যায় আসে? আমি যে ওর কথা শুনতে পাই। আমরা কথা বলি নিভৃতে।
আমি ভাবলাম, এ কি সম্ভব? স্মিথ যা বলছে সেটা কি সত্যি? এসব ভাবছি, এমন সময় হঠাৎ দেখি স্মিথ আর মানুষ নেই, সে হয়ে গেছে বিকৃত এক কঙ্কাল। কঙ্কালটা প্রাণ খুলে হাসছে।
আরে, একি! কাঠের মূর্তিটাও যে হাসছে! দেখতে দেখতে এক সময় মূর্তিটা এক সুন্দরী নারীর রুপ ধারণ করল। তারপর কাঁচের বাক্স থেকে বের হয়ে পল স্মিথের কঙ্কালকে জড়িয়ে ধরল।
মূল: আলফ্রেড হিচকক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ধরনের আরেকটি সুন্দর গল্প আছে। আরেকদিন দেয়ার আশা রাখছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।