আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কঙ্কাল - মাজুল হাসান এর তাগাদায় পোষ্টাইলাম



কঙ্কাল স্যার আমাকে দুপুরে তাঁর সাথে দেখা করতে বলেছেন। তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক তেমন একটা ভাল নয়, তাই যাব কিনা ভাবছি। তিনি একদিন ক্লাশে লাশ থেকে কিভাবে কঙ্কাল বানানো হয় সে গল্প বলছিলেন। তখন আমার আশপাশে কেউ একজন ভুয়া গল্প বলে টিপ্পনি কাটছিল। আমি বলেছি এমন ভেবে স্যার সবার সামনে আমাকে ক্লাশ থেকে বের করে দেন।

আমি বার বার বলতে চেয়েছিলাম আমি কিছু বলিনি কিন্তু তিনি কোন সুযোগ দেননি। আরেক দিন শখ করে সিগারেটে ফুঁক দিয়েছি আর ভাগ্যটা এমনই বেরসিক যে পড়বিতো পড় একেবারে স্যারের মুখোমুখি। তিনি সাথে সাথে আমার বদরাগী বাপকে জানিয়েছিলেন। সেদিন রাতে আমার বাপ চুলা ধরাবার কাঠ দিয়ে কি বেধড়ক যে পিটিয়েছিলেন। তখন থেকে স্যারের সাথে ভালমত কথা হয়না।

কিন্তু আমি জানি তিনি একজন ভাল শিক্ষক এবং আমার ভালোর জন্যই এটা করেছিলেন। বয়স তাঁর বেশ ভালোই হয়েছে তবু বিয়ে করেননি। ছাত্ররা তাঁকে আড়ালে নপুংসক ডাকে। আমাদের ধারনা ছিল তিনি এক মহিলাকে পছন্দ করেন এবং নিয়মিত তার কাছে যান। এ সন্দেহ থেকে আমরা পালাক্রমে তাঁকে নজরবন্দী করেছিলাম কিন্তু কোন রকম সফলতা ছাড়াই আমাদের এক মাসের মিশন শেষ করতে হয়েছে।

সে যাই হোক এগুলো সবই পুরনো কথা - তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম। তিনি জানালেন, স্কুলের বেয়ারা না থাকায় আজ রাতে তাঁর সাথে থাকতে হবে। সে রাতে আমার এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তবে তার সাথে কিছু আকাঙ্খার প্রাপ্তিও ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কঙ্কাল' গল্পটি পড়ে আমার সে আকাঙ্খা জন্মেছিল।

আমি গল্পের বই একবারেই পড়তে পারি না, এক পৃষ্ঠা পড়ে দেখি আর কত বাকি! কঙ্কাল গল্পটা তিনদিনে শেষ করে (!) ভীষণ ইচ্ছা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের মত কোন কঙ্কালের সাথে গল্প করতে। রাতে খাবার পর স্কুলে গেলাম। স্যার আমাকে একটু পড়ালেন। তারপর আমাকে রেখে রাস্তার ওপারে দোকানে পান খেতে গেলেন। আকাশ হয়ত আগে থেকেই মেঘাচ্ছন্ন ছিল খেয়াল করিনি।

হঠাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি আরম্ভ হল, সাথে ঝড় ঝাপটার মত। কারেন্ট চলে গিয়ে অফিস একবারে অন্ধকার হয়ে গেল। কোথাও মোমবাতি বা টর্চ লাইট আছে কিনা জানিনা। অফিসের পাশেই সাইন্স রুম - সেখানে একটা কঙ্কাল আছে। অফিস আর সাইন্স রুমের মধ্যে একটা দরজা আছে।

কঙ্কালটার কথা মনে হতেই ভয় ভয় লাগতে লাগল। অথচ দিনের বেলায় ওটাকে নিয়ে কত ফাজলামি করেছি। একদিনতো আমি লুকিয়ে ওটার মুখে একটা সিগারেট আটকে দিয়েছিলাম! তাই দেখে ছেলে মেয়েদের সে কি হাসাহাসি। বিদ্যুৎ চমকের আলোয় - অফিস একটু করে আলোকিত হচ্ছে। হঠাৎ মনে হল দরজায় টকটক করে স্যার টোকা দিচ্ছেন।

অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুললাম। দেখি ভুল করে সাইন্স রুমে ঢুকে গিয়েছি! বাতাসে দরজা দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল। বুকের মধ্যে রক্ত যেন ছলাৎ করে উঠল। আলো আঁধারিতে কঙ্কালটা বলে উঠল, 'কি রনি ভাল আছোতো? আমার জন্য সিগারেট এনেছ বুঝি! বাইরে ঝড় বৃষ্টি - শরীরটা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। ' আমার শরীর ভীষণ ঘামছে।

সারা গা রোয়া রোয়া হয়ে লোম খাড়া হয়ে গেছে। ভয়ে পেছনে হটতে হটতে বললাম, 'বিশ্বাস করেন আপনার মুখে সিগারেট দেয়াটা আমার খুব অন্যায় হয়ে গেছে। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। ' 'রনি আমার ভীষন কষ্ট। আমি পৃথিবী থেকে মুক্তি চাই।

তুমি আমাকে মুক্তি দাও। ' 'আমিতো মুক্তি দেবার কেউ নই। ' 'তুমি মুক্তি দিতে পারবে না তবে আমার মুক্তি পেতে সাহায্যে করতে তো পারো। ' কঙ্কাল বলল। 'কি করতে পারি আমি?' 'তুমি আমাকে এখান থেকে খুলে বাইরে ফেলে আসো।

পৃথিবী বড় অসহ্য জায়গা। তোমরা আমাকে নিয়ে বড্ড জ্বালাতন কর। ' আমি মনে মনে বললাম, 'আমি তোমাকে ঘাড়ে করে টেনে নিয়ে যাই আর তুমি সুবিধামত আমার ঘাড় মটকাও। ' এমন সময় বাতাসে কঙ্কালের হাড়গুলো টুং টাং করে উঠল। আমি জানতে চাইলাম আচ্ছা তোমার এমন অবস্থা হল কি করে? কঙ্কাল উৎসাহের সাথে বলল, 'তুমি শুনবে আমার কথা? জানো আমি খুব দুঃখী।

আমার দুঃখের কথা আমি বলতে চাই কিন্তু শোনানোর লোক পাই না। ' আমি প্রতিশ্রুতির সুরে বললাম, ঠিক আছে আমি শুনব তোমার কথা। কঙ্কাল শুরু করল... ..আমি যখন কলেজে পড়ি তখন রিতার সাথে পরিচয়। সত্যিকার অর্থে সুন্দরী বলতে যা বুঝায় তা হয়ত ও ছিল না! তবু আমার দৃষ্টিতে সেই সেরা নারী হয়ে গিয়েছিল। শাড়ী পরে ওকে যা অপুর্ব লাগত না! তাতেই বুঝি আমার ভিত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল।

আগে পরে সব ভুলে ওকে ভালবাসতে আরম্ভ করেছিলাম। রিতাকে একটি বার দেখার জন্য গ্রামের বাড়ির প্রতি আগ্রহ কমে গিয়েছিল। যেতে ভাল লাগত না। সকালে গেলেও বিকাল হতে হতে অস্থির হয়ে যেতাম। এমন চলতে চলতে রিতা বোধহয় তার নিজের কাছেই একদিন ধরা পড়ে গিয়েছিল।

আমার নিঃশব্দ আগ্রহের বীপরিতে ওর সশরীরে সশব্দ উপস্থিতি আমার জন্য কিছুটা অপ্রত্যশিত ছিল। কলেজের প্রথম দিন থেকেই আমার কম কথা বলা, গম্ভীর থাকা আর একাকী সময় কাটানোর অভ্যাস গুলো ওর ভাললাগার স্বতন্ত্র বিষয় হয়ে উঠেছিল। প্রথমে আমি দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম - অপরাধবোধও যে কাজ করত না তাও নয়। তবু যত দিন গিয়েছে নিজেকে আমি তত জড়িয়েছি এবং এক সময় বুঝতে পেরেছি, আমি এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছি যেখান থেকে পেছন ফেরা সম্ভব না। ..... চলবে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।