shamseerbd@yahoo.com
ভার্সিটির বড় ভাই। পরিচয়টা মনে রাখার মত তার সাথে। ভার্সিটি মারামারিতে বন্ধ থাকায় উনি তিন মাস না থাকায় আর আসবেননা ভেবে বাড়িওয়ালা নতুন ভর্তি হওয়া আমাদেরকে বাসাটা ভাড়া দিয়ে দিলেন। উনি এসেতো তাজ্জব। উনার টেবিলের বই খাতা সরাইয়া আমি নিজের বই খাতা সাজাইয়া রাখছি, ফ্যানের বাতাস খাইতাছি।
অথচ উনি কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাইলেননা । যাই হউক ধীরে ধীরে ওনার সাথে চমৎকার সম্পর্ক হয়ে গেল। ভাই প্রেম করতেন এক মেডিকেল কন্যার সাথে।
একদিন সন্ধ্যায় ফোনে বললেন , বাসায় আয় জরুরী কথা আছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিছি বিয়ে করব।
সব ব্যবস্হা কর। যাকে পছন্দ করি তার জন্য যে কোন যুদ্ধে যেতে আমি রাজি, সো কাজে লেগে যাও। হবু ভাবীর সাথে কথা হল ফোনে। আমি জিগায়লাম ভেবে বলতেছেন তো কি করতে যাচ্ছেন। উনি বলল হ্যাঁ।
এরপর আর কথা থাকেনা। আগে বিয়া হউক, ঝামেলায় পরে জেলে যাইতে হলে যামু।
রুমে ফিরে আরজুকে বললাম, তারেও থাকতে হবে, সাক্ষী লাগবে। বাড়ী ওয়ালার ছেলের কাছে গেলাম। তিনি বললেন কোর্টে আমার মামা আছে লইয়ার, সো কোন ব্যাপার না।
আমি ফোনে বলে দিচ্ছি, এমন সময় মামা ওনাদের বাসায় এসে হাজির।
আদালতের অবস্হা বাজারের চেয়েও খারাপ, মানুষে গিজগিজ। মামা সব ব্যাবস্হা করে দিলেন। আমি আর আরজু সাক্ষ্য দিলাম। তার পর কাজী অফিস।
তারপর আমাদের পারিশ্রমিক- খানাদানা হল।
যায় হউক এই পর্যন্ত কোন ঝামেলা ছিলনা। ঝামেলা শুরু হল হঠাৎ একদিন। ভাই এর সাথে মেডিকেলের কিছু পোলাপানের ঝামেলা ছিল, তাই ভাইও মেডিকেল যাইতনা, ডেটিং করত ভার্সিটি এলাকায়। বিয়ে করে তার সাহস একটু বাইরা গেছিল, শ্বশুর পাড়ায় যাইতে ডর কিসে টাইপ।
তেমনি একদিন চান্সে পাইয়া পোলাপান ওনারে ওসমানী মেডিকেলে ক্যান্টিনে আটকাইয়া ভাবীরে হলে পাঠাইয়া দিল।
কিছুক্ষন পরে ভাবী আমারে ফোন দিলেন, কিন্তু কান্নার কারনে কিছু বলতে পারছেননা। মহা টেনশনে পরে গেলাম, যাক একটু পরে ওনি বলতে পারলেন ঘটনা। আমি কোন কুল কিনারা পাচ্চিনা কি করা যায়। তখন আমার রুমমেটরাও কেউ নাই ঘরে।
ছাত্রদলের সাঃ সম্পাদক তুহিন ভাইর সাথে আমার ভাল সর্ম্পক, কিন্তু জানলাম এই ঘটনায় উনিই নেত্রীত্ব দিচ্ছেন।
ভাবতে ভাবতে এমন সময় আমার কাছে তুহিন ভাইর ফোন আসল। আমিত আরও চিন্তায় পরে গেলাম। ধরার সাথে সাথে উনি বললেন- এই ওরা যে বিয়ে করেছে কথা কি সত্য। আমি বললাম -হ্যাঁ।
সাক্ষী কে ছিল। আমি আর আরজু। শুন তুই আজকে থেকে আর মেডিকেল এলাকায় আসবিনা। পোলাপান তোরে পিটাইলে আমি কিছু জানিনা।
এক বড় ভাইরে জানাইলাম।
কিন্তু ছাত্রদল যেহেতু জড়িত উনি কিছু করতে পারবেনা, লীগ হলে একটা ট্রাই দিতে পারতেন। ভার্চিটির দলের পরিচিত ভাইদের কাউরে খুজে পাইলামনা। ভাবী আরও দুইবার ফোন দিয়া কান্নাকাটি- কিন্তু কি করি, শালারা দুলাভাইরে পিটাইলে আমি কি করতে পারি।
ছয়টায় ঘটনা শুরু। দশটা পর্যন্ত চারিদিকে ফোন করেও কোন কুল কিনারা করতে না পাইরা আরেক বড় ভাইরে জানাইলাম।
সে আর আমি সাহস করে মেডিকেলে রওয়ানা দিলাম। সাহস ছিল এইটা তুহিন ভাইর সামনে আর যাই হউক কেউ আমার গায়ে হাত দিবেনা। যাওয়ার পথেই ভাবীর ফোন পেলাম। ভাইরে মাইরা ওরা মেডিকেলে ভর্তি করাইয়া দিছে। মেডিকেল ক্যাম্পাসে মাইর খাওয়ার এইটা মনে হয় সুবিধা, ট্রিটমেন্টের জন্য বেশীদূর যাওয়া লাগেনা।
আমরা ওয়ার্ডে গেলাম। সাড়ে এগারটার দিকে ভাইরে নিয়া রূমে ফিরলাম, ঐখানে থাকা নিরাপদ না।
পরদিন মেডিকেলের এক দোস্ত সকালে এসে হাজির। বলল দোস্ত তুই ঐ দিক দিয়া চলাফেরা করিসনা, তোরে পাইলে ওরা পিটাইব। আমি কইলাম ঠিক আছে যামুনা, তয় তোগো কিন্তু ভার্সিটি আসা ছাড়া উপায় নাই, রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে সব কাজে আইতে হইব।
সো তোমাগে পোলাপানরে কইও আমি মাইর খাইলে ওগোও বাঁচার চান্স কম। মদীনা মার্কেট টু ভার্সিটি কিন্তু আমাগো এরিয়া। দোস্ত কইল গরম হইসনা, কয়েকদিন ঐ পথে যাইসনা।
আমিও তাই করলাম। যেহেতু মেডিকেলে আমার কোন লেনদেন নাই ঐ পথে না যাওয়াই ভাল।
আগে মাইর খাইয়া পরে মাইর দেয়ার মাঝে কোন বাহাদুরি নাই।
তুহিন ভাইর সাথে প্রায় ছয়মাস পর দেখা এক মার্কেটে। কিরে তুই অনেকদিন মেডিকেলে আসসনা। আমি একটা হাসি দিয়া কইলাম- মাথার উপর মাইরের হুলিয়া দিয়া রাখছ আর কও মেডিকেল যাইতে। গায়ে পইরা মাইর খামু নাকি।
ধুর তুই আই কিছু হইবনা।
কিছুদিন পর ভার্সিটির এক দোস্ত একসিডেন্ট করায় ওরে দেখতে মেডিকেল গেলাম। ঝামেলা ছাড়াই এর পর যাওয়া আসা করছি, তত দিনে ওগো ক্ষোভ মনে হয় মিটে গেছিল, ভাইরে পিটাইয়াই ওরা খুশী।
আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর একজন। তার প্রেম সে এক বিরাট ইতিহাস।
মেয়ে তার ফুফাত বোন। সেই মেয়ে কোন মতেই রাজী না। বন্ধুর পাগলামী বাড়তে থাকে। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস হার মানে টাইপ। ঢাকা থেকে এক দোস্ত ফোন দিল ওত পাগল হইয়া যাইতাছে।
সিলেট থেকে ঢাকা আসলাম। রাত তিনটা পর্যন্ত কার্জন হলের সামনে বসে ওর জন্য কি করা যায় এই নিয়ে সবাই মিলে কোন কূল কিনারা করতে পারলামনা। আমাদের পছন্দের পদ্ধতি এখন আকটা গাড়ী ভাড়া করে চিটাগং যাব, সকালে মেয়ের কলেজের সামনে যাইয়া তারে তুলে নিয়া আসব। তোরা কক্সবাজার যাবি, আমরা জেলে যাব, তবুও তুই তোর পাগলামী বন্ধ কর। কিন্তু এই থি্উরিতে রাজি হলনা।
বন্ধু আমার হাল ছাড়লনা, সব কাজ লাটে তুললেও মনের মাঝে প্রেমটা ধরে রাখল। কথায় বলে লাইগা থাক পাগল- লাইগা থাকলে পাবি, বন্ধু আমার প্রমান করে ছাড়ল। তার এক ডেট এ আমারে নিয়া পরিচয় করাইয়া দিল, আর আমি বুঝলাম ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা মানে কি জিনিস।
দুই পরিবার জেনে ঘোষনা দিল তারা কেউ এই সর্ম্পক মানবেনা। মেয়ে মাইর খাইল, বন্ধু আমার ঘর ছাড়ল।
মেয়ের বাপরের সাথে দেখা করার পর তিনি বললেন, তোমার বাবা মা আসলে ব্যাপারটা ভেবে দেখব। তার বাপ মা মরলেও যাবেনা।
ঈদের পরের দিন বিকালে দোস্ত ফোন দিয়া কইল চকবাজার আই এখনই। ফোন কাইটা দিল। আরেক বন্ধুরে খবর দেবার পর সে ছিল ঢাকার পথে, মিরশস্বরাই এ বাস থেকে নেমে ট্রাকে করে আবার বেক করল।
ঘটনা হচ্ছে সে মেয়ের বাবারে (ফুফা) বলছে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করবই। বড় ভাইর উপর জেদ মিটানোর এই চান্স পাইয়া তিনি বলে বসেছেন, যদি পার তবে সেটা আজকেই, আর না হলে কোন দিনওনা।
ব্যাপক উৎসাহ নিয়া আমরা মাঠে নামলাম। টাকা পয়সা জোগাড় করে হালকা শপিং ও করা হইল। মেয়ের এক জেঠা আসলেন, তার সাথে দেনমোহর নিয়া আমরা ঝগড়া লাগাইয়া দিলাম।
কাজী আসল, দ্বিতীয় বারের মত বিবাহের সাক্ষী হইলাম।
আমরা ওরে নিয়া বেক করব, কিন্তু শালায় দেখি নরেনা। বললাম বহুত হইছে নাটক, এইবার বাড়ি যাও, আর বেশী হইলে পরে তোমার বাপরে নিয়া হসপিটালে যাইতে হইব। উৎসাহী এক বন্ধু দেখী এর মাঝে ওর পকেটে কিসের একটা !! প্যাকেট দিয়া কইল থাইকা যা, কাজে লাগব। আমরা ওরে নিয়া বেক করলাম, বেশী রিস্ক নেয়া ঠিক হবেনা ভেবে।
পরে শুনি শালা সকালে ঘুম থেকে উঠেই শ্বশুর বাড়ী গিয়া হাজির হইছে।
পরের ঘটনা আরেক দোস্তের। মোবাইলে প্রেম, তাও দেখা করার আগেই হয়- ও এই ঘটনা না ঘটাইলে আমি কখনো বিশ্বাস করতামনা।
প্রেমের রুলস অব বিজনেস ফলো করে দোস্তের বাবা মা এই সর্ম্পক মেনে নিলনা। কোন মতেই তাদের রাজী করানো গেলনা।
এক বিকালে দোস্ত ঘোষনা দিল কাল বিকালে আমরা বিয়া করব। তোরা সব ব্যাবস্হা কর। রাস্তার পাশের সাইনবোর্ড থেকে ফোন দিয়া কাজী ম্যানেজ করা হইল।
কন্যা হলে থাকত। বন্ধু আমাদের সাথে।
পরদিন সন্ধ্যায় কন্যা তার এক গাদা বান্ধবী নিয়ে হাজির। তদের কারো নতুন করে গতি হবার সম্ভাবনা নেই , আমরা বিয়ের আয়োজনে মনোযোগ দিলাম। কাজী আসলেন, আমি আর আরজু একসাথে সাক্ষী হিসাবে হ্যাট্রিক করলাম। আয়োজন হয়েছিল আগের বন্ধুর বাসায়, ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে খাওয়া দাওয়া হল। বন্ধু আমার সেই রাতেই বাসর ঘরে ঢুকে গেল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে উপরোক্ত সব নায়ক নায়িকাকেই পারিবারিক ভাবে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে হয়েছে। সেই সব অনুষ্ঠানে গিয়া যখন বিয়া পরানো হয় তখন আমরা হাসি , যমুনা ব্রীজের মত অবস্হা , সব সরকারই ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করছে টাইপ, তেমনি সব পরিবারই বউ ঘরে তোলার আগে আবার বিয়া পড়াইলো।
সবচেয়ে মজা হইছে শেষ বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে। বন্ধু গেট মানিটা আমাদের কাছে দিয়া গাড়িতে উঠল। পথে গাড়ি নষ্ট হইয়া আমাদের লেইট।
বেচারা কমিউনিটি সেন্টারের কাছাকাছি এক পেট্রোল পাম্পে যাইয়া বইসা আছে, আমাদের পৌঁছানোর কোন নাম নাই। এক বন্ধু ফোনে তারে বলে বসল, দোস্ত তুই কমি্উনিটি সেন্টারে চলে যা, সে বলে শালা টাকাত তোদের কাছে। এদিক থেকে বন্ধু রিপ্লাই দেয়- টাকা লাগবেনা তুই এমনিতেই ঢুকতে পারবি। সে জানতে চায় কেমনে। এদিক থেকে দোস্তের উত্তর- তোর শ্বশুর তো পুলিশ, শোন ওনার হাতে পাঁচশ টাকা ধরাইয়া দিয়া বলবি তোরে যেন গেট দিয়ে ঢোকানোর ব্যাবস্হা করে দেয়, দেখবি কাজ হইয়া যাবে।
এই রিয়েল টাইম জোকসে আমরা পুরা টাসকি খাইয়া গেলাম।
গেটে যাইয়া আমরাও শুরু করলাম ফাজলামী। মেয়ের বোনরে কইলাম- দেখেন টাকা পয়সা দিতে পারুমনা, ওরা বিয়া আগেই কইরা ফেলছে, এখন ঢুকতে দিলে দাও, না দিলে আমরা জানিনা, তোমাগো বইন জামাইরে নিয়া তোমরা কি করবা সেটা তোমাগো ব্যাপার, আমাদের যাইতে দাও ক্ষুধা লাগছে। দোস্ত আমাগো পড়ছে চিপায়, কিছু কইতে ও পারেন, শইতেও না। শেষে গেট মানির অর্ধেক দিয়া আমরা পার পাইয়া গেলাম।
যাক আরেকটা পার্টির টাকা হইয়া গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।