মানুষ এবং মানুষ সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়ে আমার দারুন আগ্রহ ……
পৃথিবীর শেষ ঠিকানা
যদি কোন জায়গার নাম বান্দরবান হয়ই — তাহলে, সেখানে বানর নাই কেন...? সহব্লগার সামছা আকিদা জাহানের ছেলে সৌহার্দ্য খুব খাঁটি এই প্রশ্নটি করেছিল তার মা’কে। আমার গত কিস্তির লেখায় সামছা আকিদা জাহানের এ সংক্রান্ত মন্তব্যের অংশ বিশেষ অনেকটা এ রকম —
...বান্দরবনে যেয়ে আমরা সার্কিট হাউজে ছিলাম। ফেরার সময় আমার ছেলের মেজাজ বেশ গরম হয়ে গেল। তুমি বান্দরবনে যাবা বলেছিলে কখন যাবে?? যত বুঝাই এটাই তো বান্দরবন এই তিন দিন ধরেতো আমরা বান্দরবনেই আছি। ওর ঐ একই উত্তর বান্দরবন হলে এখানে বানর নাই
কেন???
গত পোষ্টে সামছা আকিদা জাহানের এই মন্তব্য পড়ে, তার ছেলে সৌহার্দ্যর প্রতি আমার মুগ্ধতা বেশ কয়েকগুন বেড়ে গেল... কি অসাধারন পরিবেশ বোধ, কি অসামান্য পর্যবেক্ষন ক্ষমতা, এই এক রত্তি শিশুটির!!!
ব্যক্তিগত ভাবে সামছা আকিদা জাহানের বছর চার পাঁচেকের এই দুর্দান্ত পুত্র সন্তানটির সাথে গত ঈদের সময় আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল।
চারপাশের সবকিছুতে অগাধ কৌতুহল, বিপুল প্রাণশক্তিতে ভরা এই শিশুটিকে দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। (সে দিন আমি খুব চেষ্টা করেছিলাম আমার ক্যামেরায় সৌহার্দ্যর একটা ছবি তুলতে, দুঃখের বিষয় আমার সাথের ক্যামেরাটা ততটা উন্নতমানের ছিল না। ফলে তার কোন ছবি তুলতে পারি নাই। পারবো কি ভাবে, আমার ক্যামেরা দিয়ে শুধু স্থির কোন বস্তুর ছবি তোলা যায়!!!)। তবে আশায় আছি, ভবিষ্যতে তেমন অত্যাধুনিক কোন ক্যামেরা নিশ্চয়ই আমি যোগাড় করতে পারবো, যা দিয়ে অনবরতঃ ছুটন্ত এবং আচমকা লাফ দিয়ে পড়া, প্রায় উড়ন্ত কোন শিশুর ছবি তোলা যায়...!!! তবে আমার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করার প্রয়োজন নাই, বরং এখানে সৌহার্দ্যর একটা বেশ শান্ত শিষ্ট ছবি দেখুন — যা দেখে আপনার ভ্রম হতেই পারে, সে বুঝি লেজ বিশিষ্ট নয়!!!
“সম্প্রীতির বান্দরবান”
বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত “সম্প্রীতির বান্দরবান” নামের একটা ফোল্ডার আমার হাতে এসেছে।
আবশ্যিক দ্রষ্টব্য স্থানের নাম বিবরন সহ পর্যটকদের জন্য বিস্তর তথ্য সম্বলিত এই পুস্তিকায় সম্প্রীতির বান্দরবানের নামকরণ ও ক্রমবিকাশঃ শিরোনামে একটি অধ্যায় সেখানে আছে — যা পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন সৌহার্দ্যর “বান্দরবন হলে এখানে বানর নাই কেন???” কত্ত জেনুইন একটা প্রশ্ন!!!
সম্প্রীতির বান্দরবান আমাদের জানাচ্ছে — প্রাচীনকাল থেকে বান্দরবানের নামকরণ নিয়ে রয়েছে একটি কল্পকাহিনী। জানা যায়, সুদুর অতীতে বান্দরবান জেলা সদর অসংখ্য বানরে পরিপূর্ণ ছিল। বানরের দল খাদ্য অন্বেষনের জন্য সারিবদ্ধভাবে শহরের পাশ্ববর্তী খাল পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করতো। সারিবদ্ধভাবে বানরের খাল পারাপারের এ দৃশ্যটি দূর থেকে বাঁধের মতোই মনে হত, যা এ অঞ্চলের বাঙ্গালী এবং উপজাতি জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছিল। উপজাতিরা এ দৃশ্যকে তাদের ভাষায় ‘ম্যাগসি’ বলতো।
‘ম্যাগ’ শব্দের অর্থ বানর আর ‘সি’ শব্দের অর্থ বাঁধ (আঞ্চলিক ভাষায় ‘বান’)। অর্থ্যাৎ বানরের বাঁধ থেকেই বান্দরবান শব্দের সূচনা।
বম উপজাতি
কোথাও বেড়াতে গেলে, কি ধরনের প্রাত্যহিক রুটিন মেনে চলা উচিত...? খুব আয়েশী, নাকি চাবুক হাঁকিয়ে ঘোড়া দৌড়ানো...? এসব ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা বলে হয়তো কোন কিছু নাই, যার যা পছন্দ... তবে দলের মাঝে থাকলে — এ সব ক্ষেত্রে সবার নিজস্ব পছন্দ অপছন্দগুলো মনে হয় বিসর্জন দিয়ে ফেলা উচিত... নাস্তার টেবিলে পরোটা চিবাতে চিবাতে আমি এ সবই ভাবছিলাম। কিন্ত ভাবলে কি হবে, আমার এই বোধোদয় যখন হলো, ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বিসর্জনের লগ্ন গেছে পেরিয়ে, বান্দরবানের সুর্য্য ততক্ষনে প্রায় কপালের উপরে।
ভোরবেলায় কোথাও নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকা — বাস ট্রেন ধরা, এ সব নিয়ে আমার কখনও তেমন সমস্যা হয় না। ব্যক্তিগত ভাবে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা বরং আমার জন্য সবচেয়ে সহজ কাজ। এর জন্য আমার শুধু আগের রাতে না ঘুমালেই চলে। সকালের প্রোগ্রাম মিস হওয়ার কোন সুযোগই নাই। গতকাল বিকেলে পৌছানোর পর থেকে ইস্তক বিভিন্ন ধরনের কর্মসুচির কথা আলোচনায় উঠছিল, কিন্ত প্রমাদ গুনলাম (প্রমাদ ক্যমনে গুনতে হয়, তা নিয়ে আমার কোন ধারনা নাই অবশ্য, তবে বিশিষ্ট লিখিয়েদের লেখায় দেখেছি, বিপদের আভাষ পাওয়া গেলে, এ সব ক্ষেত্রে উনারাও প্রমাদ গুনতেন, এটাই নিয়ম) ভোরবেলায় সাঙ্গু নদীর তীরে সুর্যোদয় দেখার কর্মসূচি যখন আলোচ্য সূচিতে উঠে এলো।
সারাদিন কক্সবাজার চট্টগ্রাম ঠেঙ্গিয়ে আবার সারারাত বিনিদ্র রজনী...? প্রমাদ ছাড়া এখন আর কিইবা গুনার আছে!!
ভোরে ওঠার প্রসঙ্গ উঠতেই আলোচনার তীরগুলো আমার দিকে ঘুরে এলো এবং স্বাভাবিক ভাবেই আমি গম্ভীর গলায় বললাম, সকালের ঘুম মাটি করে এই সব এডভেঞ্চারে আমি নাই... যে যে যাইতে চাও, যাইতে পারো, সকালে আমাকে যেন কেউ ডাকাডাকি না করে।
কথাটা বলেই বুঝলাম, এই মাত্র কি মারাত্মক একটা ভূল আমি করলাম!!! বলে না, বয়সের দোষে মতিভ্রম। খেয়াল ছিল না, আমাদের দলটা আর আগের মতো নাই, নতুন একজন অতি সন্মানিত ব্যক্তি তার এক সাগরেদ সহ আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন — ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবন এসে। আমি এই বিশিষ্ট ব্যাক্তিটির কথা ভূলেই গিয়েছিলাম। আর এই ভুলের মাসুল দিলাম বিশিষ্ট ঐ ব্যক্তির চোখে একজন খুব নিন্মস্তরের টিমম্যান হিসাবে পরিচিত হয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে সদ্য যোগ দেয়া এই মানুষটির বয়সটাই এমন, পৃথিবীর তাবৎ বিদ্রোহ আর খুনে রাঙা বিপ্লবে তার বয়েসী মানূষদের অবদান, চিরকালের, যুগে যুগে। আদর্শবাদের এই বয়স কোন শৈথিল্য, কোন বিচ্যুতিকে মাফ করে না। ব্যক্তি হিসাবে সমষ্টির স্বার্থে যে নিজকে মেলাতে পারে না, দলের জন্য সে একটা বোঝা ছাড়া আর কি?
শর্মিলাকে (বানিয়ে লেখা নাম) আমি প্রথম যখন দেখি, সে সময় কলা ভবনের বদলে সে ক্লাস করতে যেত বৃটিশ কাউন্সিলের উল্টোদিকে উদয়ন স্কুলে। সেই বয়সেই সে বেশ পরিচিত মুখ। একুশে টিভির বেশ জনপ্রিয় কি যেন একটা ধারাবাহিক নাটক চলছিল, শিশু শিল্পী হিসাবে তাকে নিয়মিত সে নাটকে অভিনয় করতে দেখা যেত।
কিছু কিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হিসাবেও তাকে দেখেছি মনে পড়ে। কিন্তু আমার সাথে শর্মিলার সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে খুব কম। আমার যাবতীয় নৈকট্য শর্মিলার মায়ের সাথে। শর্মিলাদের পরিবারের সাথে আমার পরিচয় ইমরান আর তার স্ত্রীর মাধ্যমে।
শর্মিলার মাকে আমরা ডাকি আপা হিসাবে।
আমার অত্যান্ত প্রিয় বন্ধুসমা এই মানুষটির সাথে, সারাদিনরাত মজার মজার আড্ডার অজস্র স্মৃতি আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটি মেয়েদের হলে প্রশাসন চালানোর দ্বায়ীত্বে থাকা এই ভদ্রমহিলা পারিবারিক ভাবে আমাদের খুব কাছের মানুষ। আমাদের অনেক বিপদের দিনে উনি আপনজনের মতোই আমাদের পাশে থেকেছেন। বিশেষ করে ইমরানের বউ তার সবিশেষ স্নেহধন্যা। আগে অল্প সময়ের জন্য ঢাকায় এলে ইমরান অনেক সময়ই আপার বাসায় ওঠেছে।
সে হিসাবে ইমরান শর্মিলার ফেভারিট মামাদের একজন। যদিও সে আমাদের সবাইকে ডাকে নাম ধরে। আমাদের কক্সবাজারে থাকার ২য় দিনেই আমরা জানতে পারি শর্মিলার বান্দরবান সফরের কথা। আপা ইমরানকে ফোন করে বলে দিয়েছিলেন, শর্মিলা বান্দরবান আসছে, সাথে তার এক বন্ধু।
বান্দরবানে আমাকে প্রথম দেখে শর্মিলার মন্তব্য ছিল খুব মজার।
... ও, তুমিও এসেছো... তোমাকে চিনতে পেরেছি। তুমিতো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছো...
মহাভারতের যুধিষ্ঠিরএর স্বর্গারোহনের সঙ্গী
শেষ পর্যন্ত আমাকে পুরো খলনায়ক বানিয়ে পরদিন সকালে আমাদের সুর্যোদয় দেখতে যাওয়া হয় নাই। যেন খুবই বোরিং টাইপের একটা পাবলিক আমি, যার জীবনে জোশ বলতে আর কিছু নাই, দলের সামগ্রিক উৎফুল্লতার স্বার্থে আমার কয়েক ঘন্টার ঘুম আমি বিসর্জন দিতে পারি না। আমার মত টিমমেট থাকলে যে কোন টিমেরই স্পিরিট তলানীতে গিয়ে ঠেকার কথা। শর্মিলাদের মতো উদ্দীপিত তরুনদের কাছে তো এটা স্রেফ ক্যালাসনেস।
অসহ্য... !
অথচ আমরা সবাই মনে মনে জানি এটা আদতেই যতটা না সিরিয়াস তার চেয়ে বেশি একটা অবাস্তব পরিকল্পনা ছিল — সব কিছু খুটিনাটি ভেবে চিন্তে বানানো টাইপের কোন প্ল্যান, এটা ছিলনা। ভোর কয়টায় আমাদের শুরু করতে হতো, রুটম্যাপ কি হতো, সব কিছুর উপরে যানবাহনের কি ব্যবস্থা হবে — এ সবের কোন কিছু নিয়েই আমরা ভাবি নাই। যেখানে কটেজ থেকে ডাইনিং রুম পর্যন্ত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে হেঁটে আসতেই আমাদের হাফ ধরে যায় — অত সকালে নিশ্চয়ই আমরা পায়ে হেঁটে সুর্যোদয় দেখতে যেতে পারতাম না।
একদিন পরেই রোজা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। বেশ সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে শাওয়ার সেরে প্রায় ১০টার দিকে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি কেউ নাই।
আমাকে বাদ দিয়েই সবাই নাস্তা খেয়ে ফেলেছে। আমার কথা মতো কেউই আমাকে সকালে ডাকে নাই। বেশ ভাল, এ ভাবেই তাহলে সবকিছু চলুক...
বান্দরবানকে আমার সব সময়ই দার্জিলিং এর সাথে তুলনা করতে ইচ্ছা করে। সেই একই রকম দম আটকে যাওয়া সৌন্দর্য্যময় প্রকৃতি, সবুজ উপত্যকা। তফাত যে টুকু তা যেন পর্যটকদের সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে।
নিঃসন্দেহে দার্জিলিং সারা বছর যে পরিমান দেশী-বিদেশী ট্যুরিষ্ট পায়, সেখানকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ভিত্তি অনেক মজবুত, তার পরিধি অনেক বেশী। তাদের ট্যুরিজমের টোটাল টার্ণওভার এর অংকটা অনেক বিশাল। সে দিক থেকে বান্দরবান তো অনেক পিছিয়ে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অশান্তির কারনে দীর্ঘদিন বান্দরবান ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ এলাকার মতো। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছে, তবুও সাধারন মানুষের নিরাপত্তাই এখনও পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রধান মাথাব্যাথা।
বান্দরবানে ঢোকার মুখে সেনাবাহিনীর চেক পোষ্টে জানিয়ে যেতে হয় কয়জন লোক ঢুকলো এবং বেরিয়ে গেলো কয়জন। সাধারনভাবে এখনও পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ অনুমতি ব্যাতিরেকে বিদেশীদের এই এলাকায় প্রবেশাধিকার নাই। এত চমৎকার, যেন মাটিতে নেমে আসা একটুকরা স্বর্গকে — আমরা কিভাবে গোটা দুনিয়া থেকে অর্গলবদ্ধ করে রেখে দিয়েছি, ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
নীলগিরি
সবুজ একটা ল্যান্ডক্রজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। চিম্বুক রোড থেকে পেরিয়ে বান্দরবান থানছি রোডের উদ্দেশ্যে আমরা রওনা হলাম, আমাদের গন্তব্য নীলগিরি।
গাড়ীতে উঠে আমি শর্মিলাকে জিজ্ঞেস করলাম- তুই তো দার্জিলিং গেছিস, বান্দরবানের সাথে দার্জিলিং এর কি তফাৎ বলতো।
—দার্জিলিং আমার মতে একটু বেশি গোছানো, সু্যোগ সুবিধা বেশি... সে তুলনায় বান্দরবান অনেক বেশি ‘র’, অনেক বেশি আনটাচড। তবে বান্দরবান বেশি সুন্দর লাগছে আমার কাছে। যেমন ধরো ম্যালের দিকটা, যা দার্জিলিংএর ভেরি স্পেশাল... অথচ দেখো, ম্যালের চেয়ে অনেক সুন্দর জায়গা কিন্ত এখানেই আছে...
— যাই বল, আমার খুব ভাল লাগছে, আমাদের দেশেও এত সুন্দর একটা জায়গা আছে, যা দার্জিলিং এর মতো একটা জায়গার যোগ্য জবাব হতে পারে...
রাস্তার দুই পাশে গভীর খাদ, আর চুলের কাটার মতো তীক্ষ্ণ বাঁক পেরিয়ে আমরা চলছি । পথ কখনও খাড়া রাস্তা বেয়ে উচুতে-স্পেশাল গিয়ারে গাড়ী উপরে উঠছে তো উঠছেই, কিছুক্ষন পরেই হয়তো আবার ঢাল বেয়ে নীচের দিকে।
ব্রেকের প্যাডে পা রেখে ড্রাইভার খুবই দক্ষ হাতে গাড়ী নিয়ন্ত্রন করছে। রাস্তায় গাড়ীর ভিড় তেমন নাই, কিন্ত মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে বিপরীত দিক থেকে আগত গাড়ীগুলো একেবারে নাকের ডগায় এসে উপস্থিত হচ্ছে। গাড়ীর জানালা দিয়ে তাকালে কয়েকশ ফুট নীচের খাদ শুধু চোখে পড়ে। ঘন্টা খানেকের জার্নি... তাও রাস্তায় দু’বার থেমেছিলাম প্রকৃতি দেখার জন্য। মাথার উপর থেকে কুয়াশার মতো সাদা মেঘ এসে সবদিক ঢেকে দেওয়া, বান্দরবানের এই পরিবেশের কথা অনেক শুনেছি, চাক্ষুশ দেখলাম নীলগিরিতে পৌছে।
ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা
মাথার উপর এই সাদা মেঘ — আমরা যারা সমতলের বাসিন্দা, তাদের কাছে শীতের ভোরে হাইওয়েতে জমে থাকা কুয়াশার মতো মনে হবে। সে রকম সাদা ফ্যাকাশে ধোঁয়ার মত চাপ চাপ কুয়াশা, আচমকা উপর থেকে হামলে পড়ে, গ্রাস করে আশে পাশের সব কিছু, ক্রমশঃ আচ্ছন্ন করে তোলে চোখের দৃষ্টিকে। চারদিক ঢেকে ফেলে রহস্যময়তার গাঢ় চাদরে। কয়েক হাত দুরের দৃশ্যও তখন ঠাওর করা যায় না। এভাবে মেঘের আস্তরন থাকবে কয়েক মিনিট... পাঁচ ছয় বা একটু বেশী।
তারপর আবার মেঘ সরে গেলেই ঝলমলে আলো, রোদের আভাস। নীলগিরির পাহাড় আর তার উপত্যকা জুড়ে সারাটা দিন চলছে এই মেঘের আনাগোনা।
নীলগিরির নীলরং
এবং অবাক কান্ড, নীলগিরির এই নীল রং চোখে দেখা যায়! মেঘ এর রাজত্বকাল শেষ হয়ে, ঝলমলে আলোর জমানা শুরু হয়ে গেলেই, চোখে পড়ে দিগন্ত থেকে নেমে আসা নীলচে আভা। উচু টিলার উপর দাঁড়িয়ে নিচে উপত্যকার দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায় নীল আলোর জ্যোতির্ময়তা, ক্রমশঃ গড়িয়ে পড়ছে পাহাড় চূড়া থেকে... থেমে থেমে নামছে নিচের দিকে। নীল আলোর নরম মায়াবী চাদর গভীর খাদের নীচ থেকে মুড়ে আনছে দিগন্ত ছোঁয়া পুরোটা চরাচর।
এ পর্যন্ত জীবনে একটাও কবিতা না লিখে থাকলেও এ নীল রং আপনার চোখে পড়বে, ফটোগ্রাফিতে ছোটখাট পুরস্কারও যদি না জুটে থাকে, আপনি এ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে পারবেন। দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করুন...
আরও কিছু ছবি দেখুন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।