www.cameraman-blog.com/
সালটা কতো হবে - ১৯৬৯, ঠিক মনে নেই। আমরা তখন থাকি নাসিরাবাদ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ষ্টাফ কোয়ার্টারে। ঢাকা থেকে এসেছেন আব্বার এক কলিগ, জাহেদ আলি (কিংবা জাওয়াদ আলি) তার স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়ে সহ। আন্টি কিন্তু বিদেশী, ইংল্যান্ডের মেয়ে। দেখতে ছিপছিপে, হালকা-পাতলা গড়ন।
ছেলে রবিন আমার সমবয়সী আর মেয়ে মনিকা কিছুটা ছোট আমাদের চেয়ে। সত্যি কথা বলতে কি এদের চেহারা-সুরত এতোদিন বাদে আজ আর আমার মনে নেই। কেবল মনে আছে একটা দিনের অল্প কিছু স্মৃতি।
দুই পরিবার মিলে একদিন গিয়েছিলাম বায়েজিদ বোস্তামির মাজার দেখতে। আন্টি সেদিন পরেছিলেন শাড়ী (এটা কেন জানি মনে আছে, অথচ চেহারা মনে নাই) আমরা ঘুরে দেখছি।
হঠাৎ একটা গাছ পাওয়া গেল যেটাতে লোকজন সুতা, কাপড়ের টুকরা ইত্যাদি বেঁধে মানত করেছে। আন্টিকে সেটা বলার পর তিনি সুতা বা টুকরা কাপড় খূজতে লাগলেন। সবাই তার কান্ড দেখে হাসছে বিশেষ করে আলি আংকেল। কে শুনে কার কথা। শেষ পর্যন্ত কিছু না পেয়ে হঠাৎ করেই তিনি দাঁত দিয়ে শাড়ীর পাড়ের একটা অংশ ছিড়ে ফেললেন।
আর তারপর সেটা বেধে দিলেন গাছে। গাছটা এখনও আছে কিনা জানিনা। তবে ঘটনাটা এখনও আমার মনে আছে।
এরপর আমরা দেখতে গেলাম কাছিম। বিশাল বিশাল সব কাছিম।
লোকজন কাঠির আগায় মাংস বা কলার ছোট টুকরা গেথে কাছিমকে খাওয়াচ্ছে। এটা দেখে আমি আর রবিন আবদার করলাম আমরাও এভাবে কাছিমকে খাওয়াবো। আমার আব্বা বা রবিনের আব্বা, কেউ-ই রাজি হয় না। আমরা এবার চিৎকার চেচামেচি (কান্নাকাটি আরকি) শুরু করলাম। এবার ভয় দেখানো হলো।
বলা হলো কতো বড় কাছিম দেখেছো, ছোট্ট বাচ্চা পেলে ওরা টান দিয়ে একেবারে পুকুরের তলে নিয়ে মজা করে খাবে। এতে চিৎকার আরো বাড়লো শেষে আমাদের দু'জনকে দু'টো করে মাংস সহ কাঠি কিনে দেয়া হলো। এবার খাওয়ানের পালা। এতোক্ষণ চিৎকার করলেও পুকুরের কিনারায় যেয়ে একটু ভয়ই করছিলো কাছিমগুলোর সাইজ দেখে। আসলেই বিশাল।
এরপর আমাকে আমার আব্বা আর রবিনকে রবিনের আব্বা একটা হাত শক্ত করে ধরে রাখলেন আর আরেক হাতে আমরা কাঠিটা সামনে এগিয়ে ধরলাম। একটা কাছিম এগিয়ে এসে মাথা তুলে কি জানি দেখলো, তারপর চট করে মূখ বাড়িয়ে মাংসটা নিয়েই পানিতে নেমে পড়লো। এরপর বাকিটাও খাওয়ালাম।
স্মৃতি বলতে এইটুকুই। চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলে চারটা অবয়ব ঝাপসা চোখে ভাসে, কিন্তু চেহারাগুলো একেবারেই স্পষ্ট নয়।
রবিনের সাথে এই স্মৃতিটা মনে থাকলেও মনিকার কথা কিন্তু মনে নেই সেরকম ভাবে। পরের বছর আব্বা ঢাকায় বদলি হয়ে চলে আসার কিছুদিন পর ওরাও চলে আসে ঢাকায়। আর স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরুর আগেই ওরা সপরিবারে পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে।
৫/৬ বছর আগে অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদের একটা লেখা বের হয় প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায়। এখানে বলে রাখা ভাল শর্মিলী আহমদের স্বামী প্রয়াত রাকিব আহমেদ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ইন্সট্রাকটর ছিলেন এবং ১৯৭০-৭৪ সাল পর্যন্ত ঢাকায় আমাদের প্রতিবেশী।
শর্মিলী আন্টি তার লেখাতে সেই রবিন আর মনিকার স্মৃতিচারণ করেছিলেন, সাথে তার বাবা-মায়ের। আমি এটা পড়ার পর আব্বাকে নিয়ে লেখাটা পড়তে দিলাম। আব্বা পড়ে বললেন এরা সেই মনিকা-রবিনই। লেখাটায় একটা চমক ছিল আমার জন্য (এমনকি আব্বাও এটা জানতেন না)।
মজার বিষয় হলো যে মনিকার কথা আমি চেষ্টা করেও তেমন মনে করতে পারিনা, সে হলো বর্তমানের ব্রিক লেন খ্যাত লেখিকা মনিকা আলি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।