আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপসংস্কৃতির জোয়ারে ভাসা বাংলাদেশ। পর্ব( ১)

সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,

বাংলাদেশ ভাসছে অপসংস্কৃতির জোয়ারে। এ জোয়ারে প্রবল ভাবে প্লাবিত হয়েছে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের মনের ভূবন। বন্যার প্লাবনে ভাসলে দেশের মাটি থাকে, লোক-লস্কর থাকে, নতুন আবাদের সম্ভাবনাও থাকে। ফলে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর কিছু সামর্থও থাকে। এমন প্লাবনে বাংলাদেশ বহুবার ভেসেছে।

কিন্তু অপসংস্কৃতির জোয়ারে আর যাই হোক দেশের সুস্থ্য পরিচিতি থাকে না। অপসংস্কৃতির সে দূষীত জোয়ারে দেশের মাটি না ভাসলেও ভেসে যায় মানুষের চরিত্র, ধ্যান-ধারণা, ধর্ম ও আদর্শ। এতে শুধু নিজস্ব সংস্কৃতিই বিনষ্ট হয় না, বিপন্ন হয় জাতির প্রতিরক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি ও নৈতিক মেরুদন্ড। মন ও মননে, নীতি ও নৈতিকতায়, চিন্তা ও চেতনায় জাতি তখন পঙ্গুত্ব পায়। এমন বিধ্বস্ত জাতি বেঁচে থাকে নিছক এক জৈবিক অস্তিত্ব নিয়ে।

শিকড়হীন কচুড়িপানার ন্যায় জাতিও তখন ভাসমান অস্তিত্ব পায়। শিকড়কাটার এ কাজে এক সময় জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ হত, প্রচুর অর্থ ও রক্তক্ষয়ও হত। কিন্তু এখন আর এ কাজে রাজ্য-জয়ের প্রয়োজন পড়ে না, সাংস্কৃতিক অস্ত্রে তা যুদ্ধ ছাড়াই সম্ভব। অপসংস্কৃতিতে বাংলাদেশীদের যে কতটা চরিত্রহানী ঘটেছে সেটি কি এখনও গবেষণার বিষয়? দূর্নীতিতে দেশটি বিশ্বে পাঁচবার শিরোপা পাওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে সে ব্যর্থতা ও কদর্যতা কি প্রকাশ করেনি? সত্তরের দশকে তলাহীন ভিক্ষার ঝুলির খেতাব কি সে ব্যর্থতারই সার্টিফিকেট ছিল না? সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে সেটি বেশী দিন চাড়মার নীচে আড়াল থাকেনা। অচিরেই সে ক্যান্সার রোগীকে ধরাশায়ী করে ফেলে এবং দ্রুত কবরের দিকে টানে।

নৈতিক অবক্ষয় তেমনি ধরাশায়ী করে একটি জাতিকে। বার বার রক্তক্ষরণে দূরারোগ্য ব্যাধী যেমন দেহকে নির্জীব করে, নৈতিক ব্যাধী তেমনি অবক্ষয় ঘটায় জাতির জীবনে। এবং সেটি লাগাতর বিভেদ, সংঘাত ও রক্তক্ষরণের মাধ্যমে। বাংলাদেশ তেমনি এক লাগাতর বিভেদ ও সংঘাতের দেশ। সংঘাত চলছে রাজনীতিতে, চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এখন শুরু হয়েছে সেনানিবাসেও।

সেরূপ এক বীভৎস সংঘাতেরই সম্প্রতি প্রকাশ ঘটলো ঢাকার পিলখানায়। বিশাল হত্যাকান্ড, হ্ত্যা শেষে লাশে অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণ, ডাকাতি ও লুটতরাজের ন্যায় নানারূপ জঘন্যতা ঘটেছে সেখানে। যে বর্বরতা এক কালে ডাকাতেরা দুরপল্লীতে নিশিত রাতেও করতে লজ্জা পেত তা এখন দিনে দুপুরে দুইদিন ধরে রাজধানীর কেন্দ্র বিন্দুতে অনুষ্ঠিত হল। সরকারের নাকের ডগার উপর। এবং সেটি বিডিআরের ন্যায় নিরাপত্তা বাহিনীর শত শত সৈনিকদের দ্বারা।

যাদের দায়িত্ব ছিল রক্ষকের, তারাই লিপ্ত হল গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজে। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও বর্বরতার এটি আরেক রেকর্ড। মানব ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিমাপের যেমন মানদন্ড থাকে, তেমনই মানদন্ড বা ইন্ডিকেটর আছে চরিত্র পরিমাপেরও। দূর্নীতি, সন্ত্রাস, রক্তাক্ষয়ী সংঘাত হল এমন চারিত্রিক অবক্ষয় পরিমাপের গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড।

পোকামাকড় ও নর্দমার কীট দুর্গন্ধময় গলিত আবর্জনায় স্বচ্ছন্দে সাঁতার কাটে। সেখানেই তাদের আনন্দ। তা থেকে বেরিয়ে আসার কোন ভাবনা এসব কীটের থাকে না। তেমনি দুর্বৃত্ত মানুষেরও থাকে না উন্নত জীবন গড়ার প্রেরণা। বরং সে দুর্বৃত্তি নিয়েই তাদের গর্ব।

এরাই সমাজকে নীচে টানে। বাংলাদেশ আজ যে এতটা নীচে নেমেছে তা তো এসব দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মচারি, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর কারণে। তারা নবী-রাসূলের মিশনকে যে শুধু বর্জন করেছে তা নয়, সেকেলে ও সাম্প্রদায়িকতা বলে সেটিকে অব্যাহত রাখার কাজকেও তারা অসম্ভব করেছে। ফলে বিফল হয়েছে মানুষ রূপে বেড়ে উঠার কাজ। বাংলাদেশের আজকের এ দুরবস্থা হল তারই নজির।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।